যাদের অবহেলায় মান্নার মৃত্যু তাদের সাজা প্রত্যাশা ভক্তদের

মান্নার ক্যারিয়ারে বৃহস্পতি যখন তুঙ্গে, তখনই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক এস এম আসলাম তালুকদার মান্না। তার আকস্মিক মৃত্যুতে থমকে যায় চিত্রপুরী। কোটি ভক্তের হৃদয়ে এখনো আছেন মান্না।

পরিবারের অভিযোগ, কিছু চিকিৎসকের অবহেলায় মারা যান মান্না। যাদের অবহেলায় মান্না মারা গেলেন, তাদের সাজা প্রত্যাশা করেন ভক্তরা। ভক্তদের দুই মাসের মধ্যে ভালো ফলাফল দিতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করছেন আইনজীবী।

১৫ বছর আগে ২০০৮ সালের আজকের এই দিনে মারা যান বাংলা চলচ্চিত্রের এই ‘অ্যাকশন হিরো’। বুকে ব্যথা নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের ভর্তি হন তিনি। তবে কিছু চিকিৎসকদের অবহেলায় সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান। এ অভিযোগে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মান্নার স্ত্রী শেলী কাদেরের ভাই রেজা কাদের ঢাকার মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরে বিচার বিভাগীয় তদন্তে চিকিৎসার অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। হাসপাতালটির ৬ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুও হয়। এরপর ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত থেকে মামলাটির ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। এরপর থেকে আর মামলার বিচার এগোয়নি।

মান্নার মৃত্যুর মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এ বিচারাধীন। তবে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে কারণে সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর জাহাঙ্গীর হোসেন (দুলাল) বলেন, মামলাটির কার্যক্রম হাইকোর্ট স্থগিত করেছেন। এজন্য দীর্ঘদিন মামলাটির বিচার হচ্ছে না। ১৪ বছর হয়ে গেছে স্থগিত রয়েছে মামলাটি। স্থগিতাদেশ তুলে নিলে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। সাক্ষ্য নিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

তিনি বলেন, এটি একটি আলোচিত মামলা। মান্না মানে একটা ইন্ডাস্ট্রি। তার মৃত্যুর পর খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই চার্জগঠন সম্পন্ন হয়। কিন্তু ১৪ বছর ধরে মামলা স্থগিত, যা কাম্য নয়। আমরা প্রস্তুত আছি। স্থগিতাদেশ তুলে দিলে দ্রুত সময়ে সাক্ষী হাজির করে মামলাটির বিচার শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার মুশফিকুল হুদা বলেন, ‘স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে কয়েক দফা শুনানি করেছি। এখনো স্থগিতাদেশ রয়েছে। অদৃশ্য কোন কারণে তা বাতিল হচ্ছে না। তবে আমরা নতুন আইনি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। আশা করছি, আগামী দুই মাসের মধ্যে ভালো ফলাফল পাবো।

এদিকে মান্নার স্ত্রী শেলী কাদেরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

কাজল খান নামে নায়ক মান্নার এক ভক্ত বলেন, ছোট থেকে শুধু মান্নার ছবি দেখেছি। আমি তার একনিষ্ঠ ভক্ত। চিকিৎসকদের অবহেলায় তিনি মারা যান। যাদের কারণে প্রিয় নায়ককে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে তাদের বিচার চাই, সাজা চাই।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বুকে ব্যথা অনুভব করায় ভোর রাত ৪টায় মান্না ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু চিকিৎসকরা হাসপাতালে আসেন সকাল ৯টায়। চিকিৎসা দেরিতে শুরু হওয়ায় ’অ্যাকিউট মায়োকারডিয়াল ইনফ্রাকশনে’ আক্রান্ত হন মান্না। চিকিৎসা শাস্ত্র অনুয়ায়ী আক্রান্ত হওয়ার ৯০ মিনিটের মধ্যে রোগীকে নির্দিষ্ট ইনজেকশন দিতে হয়। কিন্তু মান্নাকে এই ইনজেকশন দেওয়া হয় আক্রান্ত হওয়ার ৫ ঘণ্টা পর। হৃদরোগ বিভাগের ওই ৬ চিকিৎসকদের অবহেলার জন্য মান্নার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করা হয়।

১৭ সেপ্টেম্বর মান্নার স্ত্রী শেলী কাদেরের ভাই রেজা কাদের ঢাকা সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। ১৩ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান সিদ্দিক বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ৬ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

২০০৯ সালের ১৮ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন তৎকালীন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক ফিরোজ আলম। এরপর ১, ২ ও ৩ নভেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত। সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য থাকা দিনেই সংশ্লিষ্ট বিচারক বদলি হয়ে যান। থেমে যায় সাক্ষ্য গ্রহণ। এরপর আসামিরা মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

আসামিরা হলেন-ডা. মো. এনায়েত হোসেন শেখ, ডা. জহির উদ্দিন মাহমুদ ইলিয়াস, ডা. মোমেনুজ্জামান, ডা. ফাতেমা, ডা. মাইনুল ইসলাম মজুমদার ও ডা. খন্দকার মাহবুব হোসাইন।

 

Print Friendly

Related Posts