বাদল সাহা: ২৪ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের সফরে গোপালগঞ্জে আসছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সফরে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ছাড়াও নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখবেন।
সমাবেশে ২০ লাখ লোকের সমাগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া ৪৮টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এ সফরকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
জেলা প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামি ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের সফরে সড়ক পথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া যাবেন ।
সফরের প্রথম দিন শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ বেদিতে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করে গভীর শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের শহীদ সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নিবেন। এরপর তিনি নিজ বাড়িতে রাত্রি যাপন করবেন।
সফরের দ্বিতীয় দিন দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর পর শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টায় কোটালীপাড়া উপজেলার তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় বক্তব্য রাখবেন শেখ হাসিনা। জনসভার জন্য স্টেজ নির্মাণ ও মাঠ প্রস্তুত সম্পন্ন হয়েছে। মোড়ে মোড়ে টাঙানো হয়েছে বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন। সড়কে সড়কে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে করা হয়েছে তোড়ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে উপজেলা জুড়ে। পুরো কোটালীপাড়া উপজেলাকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীসহ সকল শ্রেণির মানুষের মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা। কোটালীপাড়াবাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাছ থেকে এক নজর দেখা ও তাঁর ভাষন শোনার জন্য অধির আগ্রহে বসে আছে।
এদিকে এ সফরে গোপালগঞ্জ সদর, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার ৪৮ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণপূর্ত বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, কোটালীপাড়া পৌরসভা, ইউএনও কোটালীপাড়া, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, গোপালগঞ্জ পৌরসভা ও জেলা পরিষদ এসব প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করেছে।
এ সফর সফলভাবে শেষ করতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। গোপালগঞ্জ জেলা এবং টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে, বুধবার বিকালে কোটালীপাড়া উপজেলার তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাস্থল পরিদর্শ করেন ও প্রস্তুতি দেখেন জনসভার প্রধান সমন্বয়ক শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি। এসময় মাঠ পরিদর্শন করেন এবং ঘুরে ঘুরে সার্বিক খোঁজ খবর নেন। এসময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন প্রতিনিধি শহীদ উল্লাহ খন্দকার, আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান, সাধারন সম্পাদক জিএম সাহাব উদ্দিন আজমসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।
কোটালীপাড়া উপজেলার পাইকেরবাড়ী গ্রামের রামপ্রসাদ বাড়ৈ বলেন, আমাদের মেয়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় কোটালীপাড়ায় উন্নয়ন হচ্ছে। তার আসার খবরে ছোট থেকে বড় সবাই আনন্দিত। আমরা এক নজর দেখার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
ভাঙ্গারহাট গ্রামের ধীরেন্দ্রনাথ বাড়ৈই বলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ গর্বিত ও আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসবে এটা শুনেই আমরা খুশি। প্রতিদিন আমরা জনসভা স্থলে আসি আর চিন্তা করি কখন তাকে এক নজর দেখতে পারবো।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্যা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। কোটালীপাড়ার জনসভা জনসমুদ্রে পরিনত করতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা জনসমুদ্রে পরিনত হবে।
কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা স্থলের ষ্টেজ নির্মাণ ও মাঠ প্রস্তুত সম্পন্ন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভার প্রধান সমন্বয়ক ও বাগেরহাট-১ আসনের সাংসদ শেখ হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তাদের নেত্রী শেখ হাসিনার জনসভা, আমরা কাউকে ঠেকিয়ে রাখতে পারছি না। শুধু মাঠ নয় মাঠের আশপাশের অন্তত ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হবে। বিগত দিনে জনসভায় প্রমাণ হয়েছে আমাদের দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহাবুবুল আলম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার সফর উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ সফরে প্রধানমন্ত্রী জেলার ৪২ টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৬টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন, সে লক্ষ্যেও প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা আশা করি সকল বিভাগের সহযোগীতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর নির্বিঘ্নে শেষ হবে।