বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), তিস্তা নদী রক্ষা কমিটি, গ্রীন ভয়েস এর যৌথ উদ্যোগে তিস্তার উজানে ভারত কর্তৃক নতুন খাল খননের প্রতিবাদে এবং কুটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি, তিস্তার স্বাভাবিক পানি প্রবাহ নিশ্চিত করণ, টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব উপায়ে ভাঙ্গন রোধের দাবিতে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার (১০ মার্চ) সকাল ১০.৩০টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে, শাহবাগ, ঢাকায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাপা’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার।
যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির এর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন বাপা’র কোষাধ্যক্ষ মহিদুল হক খান, সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, নির্বাহী সদস্য ও তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ফরিদুল ইসলাম ফরিদ, বাপা নদী ও জলাশয় কর্মসূচি কমিটির সদস্য সচিব ড. হালিম দাদ খান, গ্রীন ভয়েসের সহ-সমন্বয়ক ও বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমন, চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি এস এম মিজানুর রহমান, কুড়িগ্রাম সোস্যাইটি-ঢাকা’র সভাপতি আসাদুজ্জামান আনছারী, কুড়িগ্রাম সোস্যাইটি-ঢাকা’র সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল আলম চিশতী, নৈতিক সমাজ এর সভাপতি জেনারেল আমছা আমিন, ভালবাসি বজরা, উলিপুর কুড়িগ্রাম এর সভাপতি, রুবেল সরকার, রাজনিতিবীদ ও লেখক লুফর রহমান, এড. ইয়াকুব আলী প্রমুখ।
এতে উপস্থিত ছিলেন বাপা’র নির্বাহী সদস্য ড. মাহবুব হোসেন, গ্রীন ভয়েস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু রায়হান, ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শাখার সভাপতি তিতলী নাজনিনসহ অন্যান্য সংগঠনের প্রতিনিধি বৃন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে বাপা’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, তিস্তা-গঙ্গা ইস্যুতে ভারত যেটা করছে তা কখনও কোন বন্ধু রাষ্ট্রের আচরণ হতে পারেনা। তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে শুধু সুবিধা নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে দিবেনা। সেটা আমাদের সেশের দূর্বল পররাষ্ট্রনীতি ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবেই হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধান একমাত্র রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং দক্ষ পররাষ্টনীতির মাধ্যমেই সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। তাই তিনি স্থানীয় জনগণ এবং জনপ্রতিনিধের এ বিষয়ে শক্তিশালী আন্দোলন ও জনমত গঠনের আহ্বান জানান। তিস্তা-গঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে দেশের উত্তরবঙ্গ মরুভূমিতে পরিণত হবে বলেওতিনি আশংকা করেন।
মহিদুল হক খান বলেন, ভারত আমাদেরকে বঞ্চিত করে নিজেদের ফাঁয়দা হাসিল করে। আমাদের দেশের ট্রানজিট ব্যবহার করে সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আর যখন তিস্তা-গঙ্গা ইস্যু আসে তখন তারা মূখ ফিরিয়ে নেয়। তারা কথনই আমাদের বন্ধু হবে পারেনা। তিনি ২০০৪ সালের বাপা-বেন এর সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে বলেন। সেই সম্মেলনে ভারতের নরমদা বাঁচাও আন্দোলনের নেতা মেধা পাটকারসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এসে বলে ছিলেন উভয় দেশের সমন্বয়ে তিস্তা-গঙ্গার পানি চুক্তি হবে; কিন্তু সেটি এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
শরীফ জামিল বলেন, ডিমলা থেকে চিলমারী পর্যন্ত আমি তিস্তা ইস্যুতে বিভিন্ন জনসমাবেশ করেছি। ঘুরে দেখেছি সেখানকার অবস্থা। বাংলাদেশ ভারত ও চীনের ভূ-রাজনীতির শিকার। ভারত বাংলাদেশকে এক দিকে খরা মৌসুমে ভাতে মারে অন্য দিকে বর্ষার পানিতে ডুবিয়ে মারে। অথচ ভারতকে আমরা সকল সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি। এ আচরণ কোন বন্ধুর হতে পারেনা। চীন তিস্তা নিয়ে একটি মেগা প্রকল্প করার পরিকল্পনা করছে কিন্তু এদেশের জনগন তা জানে না। এর প্রথম এবং প্রধান ব্যর্থতা সরকারের। তিনি অববাহিকা ভিত্তিক পানির ন্যায্যহিস্যার দাবী করেন।
ফরিদুল ইসলাম ফরিদ বলেন, তিস্তা একটি সরল নদী। একে বিভিন্ন দখল ও দূষণের মাধ্যমে শরু ও আঁকা-বাঁকা করা হয়েছে। তিস্তার পানি প্রত্যাহার করার ফলে তিস্তা আজ পানি শুণ্য হয়ে পড়েছে। তার উপর নতুন করে দুটি খাল খননের মাধ্যমে তিস্তাকে মরুকরণের ফন্দি আটছে ভারত সরকার। আর সেটি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আমাদের সরকার। তিস্তা একটি জাতীয় ইস্যু সুতরাং এটিতে জাতীয়ভাবে গুরুত্ব দিয়ে রক্ষার আহ্বান জানান সরকারের প্রতি।
মিহির বিশ্বাস বলেন, আমাদের যে পরিমাণ পানি পাওয়া প্রয়োজন তার ষোল ভাগের এক ভাগও আজ পাওযা যাচ্ছে না। দেশের দূর্বল পররাষ্ট্রনীতিই এর মূল কারণ বলে তিনি মনে করেন। তাই তিনি পানির ন্যায্যহিস্যা আদায়ে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার দাবী জানান।
হালিম দাদ খান বলেন, দেশের নদী বাঁচেলে দেশ বাঁচবে। বর্তমানে দেশের সকাল নদীরই একই অবস্থা। নদী চুক্তিগুলোর অবস্থা দেখে নিসন্দেহে বলা যায় একটি দেশের পররাষ্ট্র ও রাজনীতি নিজেদের অধিকার আদায়ে ব্যার্থ।
হুমায়ুন কবির সুমন, তিস্তাসহ দেশের সকল নদীগুলোকে দূষণ ও দখল মুক্ত করার দাবী জানান।
মিজানুর রহমান বলেন গজলডোবা চ্যানেল দিয়ে তিস্তার পানি ভারতে নিয়ে যাচ্ছে। এখন আবারা তারা খাল খনণের মাধ্যমে পানি সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করছে। যা উত্তর বঙ্গের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।
আসাদুজ্জামান আনছারী বলেন, আজ তিস্তা পাড়ের মানুষ পানির ন্যায্যহিস্যার দাবীতে ঢাকায় একত্রিত হয়েছি। আমরা ভারতের সাথে সুসম্পর্ক চাই কিন্তু আমাদের সর্বশান্ত করে নয়। আমরা কারো করুনা চাই না আমাদের ন্যায্য অধিকার চাই। আমাদের ন্যায্য অধিকার বুঝিয়ে দেন। আমাদের নীতিনির্ধারকরা কার স্বার্থে তিস্তা ইস্যুতে চুপ। তিনি বলেন এটি কোন আন্তর্জাতিক আগ্রাসন নয় বরং দেশীয় আগ্রাসনের কারণে তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়ন হচ্ছেনা।
জেনারেল আমছা আমিন বলেন, তিস্তা সমস্যা এখন আত্নর্জাতিক সমস্যা। তিস্তা পাড়ের দুই কোটি মানুষের কান্না কি সরকারের কানে যায়না। তিস্তা পাড়ের অর্থনীতি আজ হুমকির মূখে। আবার খাল খনন করে পানি সরিয়ে নিয়ে গেলে সেখানে মরুভূমিতে পরিণত হবে।
রুবেল সরকার প্রধানমন্ত্রীর কাছে দ্রুত তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন করে তিস্তা পাড়ের মানুষ তথা উত্তর বঙ্গকে মরুকরণের হাত থেকে বাঁচানোর অনুরোধ জানান।
সূত্র: শরীফ জামিল, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)