খালেদা জিয়া মেট্রিক ফেইলড আর জিয়াউর রহমান মেট্রিক পাস মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষায় পিছিয়ে থাকলেও বিএনপি নেত্রী ও তার ছেলে বোমা মারা, লুটপাট, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি ও এতিমের অর্থ আত্মসাতে এক্সপার্ট।
শনিবার (১১ মার্চ) বিকেলে ময়মনসিংহ জেলা সার্কিট হাউজ মাঠে আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ বিভাগীয় জনসভায় প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া নাকি মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি শুধু অঙ্ক আর উর্দুতে পাস করেছেন। উর্দু পাকিস্তানের ভাষা- এটা তার খুব প্রিয়। আর অঙ্কতো টাকা গোণায় কাজে লাগে- ওই দুইটাতেই পাস করেছেন; আর কোনোটাতে পাস করতে পারেননি। খালেদা জিয়া মেট্রিক ফেইলড আর জিয়াউর রহমান মেট্রিক পাস। তাদের ছেলে একবার এই স্কুল ওই স্কুল শেষে কোথা থেকে জানি সার্টিফিকেট ম্যানেজ করেছেন। এই তাদের অবস্থা; কী পাস করেছে কেউ জানে না। তবে বোমা মারা, লুটপাট, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি ও এতিমের অর্থ আত্মসাতে তারা এক্সপার্ট। তাই বাংলাদেশের মানুষ লেখা-পড়া শিখবে এটা তারা চায় না।’
তবে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বিনামূল্যে বই দিচ্ছে। প্রায় আড়াই কোটি শিক্ষার্থী প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই পাচ্ছে। বৃত্তি, উপবৃত্তি ও গবেষণার জন্য টাকা দিয়ে সহযোগিতা করছি। এখন পর্যন্ত ২৬ হাজার প্রাইমারি স্কুল সরকারিকরণ করা হয়েছে। মাদ্রাসা-স্কুল এমপিওভূক্ত করা হয়েছে। এরই ফল হিসেবে স্বাক্ষরতার হার ৭৫.২ ভাগে উন্নীত করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কথা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে দেবো। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে মোবাইল ফোন চালু করেছিলাম। এখন সবার হাতে মোবাইল ফোন। এটা আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে। এখন প্রত্যন্ত এলাকাতেও ওয়াইফাই সংযোগ পাওয়া যায়। ব্রডব্যান্ড নেটের ব্যবস্থা হয়েছে, সাবমেরিন ক্যাবল এসেছে। স্যাটটেলাইট যুগেও প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। স্কুলগুলোতে কম্পিউটার ল্যাব করা হয়েছে। ইনকিউবেশন সেন্টার করা হয়েছে। পাঁচ হাজার ২৭২টি ডিজিটাল সেন্টার করা হয়েছে। এসবের মাধ্যমে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করা হয়েছে। আমাদের চাওয়া প্রতিটি মানুষ যেন উন্নত জীবন পায়।’
এ সময় আগামীতে ময়মনসিংহে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল ইউনিভার্সিটি গড়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপি মানুষের ঘর দখল করেছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গৃহহীন ও রাস্তায় মানুষকে ঘর করে দিচ্ছি। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘মিথ্যা বলে-বলে স্বাধীনতার সুফল ব্যর্থ করতে চায় তারা। যা কখনও হতে দেয়া হবে না। লুটপাট-দুর্নীতি আর নির্যাতন ছাড়া দেশের মানুষ বিএনপির কাছে কিছু পায়নি।’
এ সময় গ্রাম ও কৃষি সবকিছু স্মার্ট হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করছি। এখন নিভৃত গ্রামেও ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। কেননা আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। ২০৪১ সালে আমাদের দেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপিসহ তথাকথিত বিরোধীদলগুলো বলে আওয়ামী লীগ সরকার নাকি কিছুই করেনি। আমাদের সময়ে গড়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে ঠিকইতো তারা সরকারের সমালোচনা করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ না দিলে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করতেন কী করে; প্রশ্ন আমার।’
বিএনপির মিথ্যা বলাই অভ্যাসে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির এক নেতা সারাদিন মাইকে বলেন, আমরা নাকি দেশ ধ্বংস করেছি। এখানে উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলো কি ধ্বংসের জন্য? আসলে তাদের কাজই হলো মিথ্যা বলা। বিদ্যুৎ উৎপাদন আমরা বাড়াই, বিএনপি কমায়। এখন বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে। আমরা চাই, সব ঘর আলোকিত হোক। আসলে লুটপাট, চুরি আর মিথ্যা বলাই বিএনপির অভ্যাস।’
দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা যাবে না। অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। মোটকথা আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারণ আমরা কারো কাছে হাত পাততে চাই না, আর ভিক্ষা করতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আমার নিজের আওতায় যত জমি আছে তাতে চাষ করেছি। আপনারাও নিজেদের জমির এক ইঞ্চিও খালি রাখবেন না। আমরা যদি উৎপাদন বাড়াতে পারি, তাহলে অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলেও খাওয়া-পরা চলবে। আমরা সমস্যায় পড়ব না।’
আমিষের উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, আবাদি জমির পাশাপাশি আমাদের জলাভূমিকেও ব্যবহার করতে হবে। মাছের চাষের মাধ্যমে জলাভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
কৃষি ও কৃষকের জন্য বঙ্গবন্ধুর অকৃত্রিম ভালোবাসার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের সময় বিদেশি সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘আপনি কীভাবে, কী করবেন’। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আমার দেশের উর্বর মাটি ও মানুষ দিয়েই আমরা ঘুরে দাঁড়াব’।”
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুব সমাজকে উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের যুব সমাজকে উন্নয়নের অংশীদার হতে হবে। আমরা যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও ঋণের ব্যবস্থা করেছি। যুবকরা এসব সুযোগ নেয়ার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের কর্মস্থলের পাশাপাশি আরও মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারবেন।
জনসভায় আসা নেতাকর্মী ও ময়মনসিংহবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা অনেক কষ্ট করে জনসভায় এসেছেন। আপনাদের উদ্দেশে বলতে চাই, নিঃস্ব আমি, রিক্ত আমি, দেবার কিছু নাই, আছে শুধু ভালোবাসা, দিয়ে গেলাম আমি তাই।’
এরআগে বিকেল আড়াইটার দিকে প্রধানমন্ত্রী সমাবেশ মঞ্চে এসে পৌঁছান। পরে ৩টার দিকে মোট ১০৩ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরমধ্যে ৭৩ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৩০টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে: ময়মনসিংহের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসংলগ্ন জায়গায় ছবির ভিত্তিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, ময়মনসিংহ সদরের চর সিরতায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ডা. মুশফিকুর রহমান শুভ মেমোরিয়াল ইসলামিক মিশন হাসপাতাল, ত্রিশাল উপজেলায় এক হাজার আসন বিশিষ্ট অডিটরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, ময়মনসিংহ জেলায় ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁওয়ের চরআলগী ইউনিয়নকে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন থেকে রক্ষার্থে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরিষদ নতুন হাসপাতাল নির্মাণ, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় গোরবাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর, জেলা আইনজীবী সমিতির মূলভবন শহীদ অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম ভবন ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ উদ্বোধন।