মাঝখানে মেঠোপথ, দু’পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে তালগাছ

সুদীপ্ত শামীম: ঘন সবুজে আবৃত বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, মাঝখানে মেঠোপথ, তার দু’পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তালগাছ। এমন সুন্দর ও নৈসর্গিক দৃশ্য এখন খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। গ্রামীণ জীবনের এমন প্রতিচ্ছবিতে আকৃষ্ট হচ্ছেন পথিক।

ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বজ্রপাত থেকে রক্ষাকারী পরম বন্ধু তালগাছ। এ কারণে বজ্রপাতের (বিদ্যুৎস্পর্শ) হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ, পশু-পাখিসহ জীববৈচিত্র্য।

মেঠোপথের দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছের দৃশ্য চোখে পড়ে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর-ইসবপুর কাঁচা রাস্তায়। এ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোর মনোমুগ্ধকর পরিবেশ উপভোগ করতে প্রকৃতিপ্রেমিরা প্রতিনিয়ত আসেন এখানে। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে এসে আনন্দ উপভোগ করেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ মানুষ ও পশু-পাখিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষার লক্ষ্যে প্রায় ২০ বছর আগে একটি প্রকল্প থেকে তালগাছের চারা রোপণ করা হয়। বজ্রপাত নিরোধক ও পরিবেশবান্ধব গাছগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করছে। পরম বন্ধু এই গাছে ইতোমধ্যে ফল আসারও সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে নতুন করে ঘর বাঁধার চেষ্টা করছে বাবুই পাখির দল। মাঝে মধ্যে এই পাখিগুলোর কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠছে পুরো এলাকা। সবুজ পাতার ছায়ায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছগুলো দৃষ্টিনন্দিত হয়ে ওঠছে। সেই সঙ্গে প্রকৃতিপ্রেমিরাও চিরায়ত গ্রামবাংলার এই সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।

জান্নাতি আক্তার মৌ নামের স্থানীয় এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একসময় বাড়ি থেকে অন্য পথে কলেজে যাওয়া-আসা করছিলাম। এখন তাহেরপুর-ইসবপুর মেঠোপথের এই তালগাছের টানে এ পথে যাতায়াত করি। সারি সারি তালগাছের রূপে আমরা মুগ্ধ।’

বন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নেহাজ উদ্দিন নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘বজ্রপাতে রক্ষাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে তালগাছ মানুষের জান-মাল রক্ষা করে। কিন্তু আগের মতো তালগাছগুলো তেমন চোখে পড়ে না। উপকারি বিভিন্ন বৃক্ষ দিন দিন বিলুপ্তির পথে। এরই মধ্যে ওই রাস্তার পাশে তালগাছগুলো মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফেরাচ্ছে।’

স্থানীয় ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আল মামুন সরকার মিলন বলেন, ‘জীবনবৈচিত্র রক্ষা করছে এই তালগাছগুলো। তাহেরপুর-ইসবপুর রাস্তার এ গাছগুলো যাতে করে নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় পরিচর্যা করা হচ্ছে।’

গাইবান্ধা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘তালগাছ বজ্রপাত নিরোধক ও পরিবেশবান্ধব। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাঠে কৃষকের মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে মানুষদের তালগাছ লাগানোর উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে।’

 

Print Friendly

Related Posts