মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ

রেজাউল করিম: মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের ঐতিহাসিক ১৯ মার্চ আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজীপুরের (সেই সময়ের জয়দেবপুর) সাধারণ মানুষ সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ওই যুদ্ধে চারজন শহীদ হন। পাকিস্তানি হানাদারদের গুলিতে পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরও অনেকে।

একাত্তরে জয়দেবপুরের দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যদের কৌশলে নিরস্ত্র করার পদক্ষেপ নেয়। তাদের অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় ঢাকা ব্রিগেড সদর দপ্তর। কিন্তু মুক্তিকামী বাঙালি সৈন্য ও স্থানীয় জনতা তাদের মতলব বুঝতে পেরে অস্ত্র জমা না দিয়ে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সড়কে অবরোধ করেন। যার ফলে ১৯ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের সতর্কতা ও রাস্তায় আন্দোলনকারীদের দেখে অস্ত্র জমা নেওয়ার আশা ত্যাগ করে ঢাকায় ফিরছিলেন। ছাত্র-জনতা জয়দেবপুরের রেলক্রসিং এলাকা ও চান্দনা চৌরাস্তায় তাদের বাধা দেন। এ সময় পাকিস্তনি বাহিনী গুলি ছুড়লে ছাত্র-জনতা সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন হুরমত, নিয়ামত, কানু মিয়া ও মনু খলিফা। আহত হন আরও অনেকে।

এরই ধারাবাহিকতায় শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম। তখন স্লোগান ওঠে ‘জয়দেবপুরের পথ ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে ওটাই ছিলো মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ। সেদিনের সেই প্রতিরোধের দিবস উপলক্ষে স্বহস্তে লিখে একটি বাণী দিয়েছেলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই সময় বাণীতে বঙ্গবন্ধু বলেন, ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে আরও একটি স্মরণীয় দিন।

তবে ১৯ মার্চে গুলিবিদ্ধ শহীদ কানু মিয়ার কবর অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে গাজীপুর মহানগরীর কড্ডা এলাকায়। কবরটি গেট ভাঙা, জঙ্গলে ভরে গেছে, ভেড়াছাগল, হাঁস মুরগী অবাধে বিচরণ করে। নামফলকও প্রায় মুছে গেছে।

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার বলেন, সংস্কার করা যাদের দায়িত্ব যেমন আমাদের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এটি তারই দায়িত্ব কিন্তু সে সঠিকভাবে দায়িত্ব নিচ্ছে না। সে বলে করবে করবে কিন্তু করে না।

১৯ মার্চের এই নায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমরা আপনার বাবার নির্দেশে পাক বাহিনীকে বাধা দেই। এতে জয়দেবপুরের ২ জন ও চৌরাস্তার দুইজনসহ ৪ জন মারা যায়। তাই ঐতিহাসিক ১৯ মার্চকে জাতীয় দিবস হিসাবে ঘোষণা করুন। এটা আমাদের প্রাণের দাবি এতে অন্তত পাক বাহিনীর গুলিতে নিহতদের আত্মা শান্তি পাবে।

উল্লেখ্য, ১৯ মার্চের আগেই গাজীপুরে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হককে আহ্বায়ক ও মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খানকে কোষাধ্যক্ষ করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট এক সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। ওই পরিষদের সদস্য হন আয়েশ উদ্দিন, মোঃ আঃ ছাত্তার মিয়া (চৌরাস্তা), মরহুম হজরত আলী মাস্টার (চৌরাস্তা), মোঃ শহীদ উল্ল্যাহ বাচ্চু (মরহুম), হারুন-অর-রশিদ ভূঁইয়া (মরহুম), শহিদুল ইসলাম পাঠান জিন্নাহ (মরহুম), থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডাঃ সাঈদ বকস্ ভূঁইয়া (মরহুম)। কমিটির হাই কমান্ড (উপদেষ্টা) হন জনাব মোঃ হাবিব উল্ল্যাহ (মরহুম), শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা এম. এ. মুত্তালিব এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নেতা বাবু মনিন্দ্রনাথ গোস্বামী (মরহুম) প্রমুখ।

 

Print Friendly

Related Posts