পুরনো কাগজ বিক্রির টাকায়

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক পিঠে স্কুলের ব্যাগ। হাতে পুরনো খবরের কাগজ। ব্যাপারটা কী? সাতসকালে পড়ুয়াদের হাতে কাগজ কেন? একটু পরেই দেখা গেল প্রত্যেকেই খবরের কাগজগুলি একটা জায়গায় ফেলছে। তার পর যে যার মতো নিজেদের ক্লাসে চলে যাচ্ছে।

একই দৃশ্য মসাগ্রাম রেল স্টেশনেও! বর্ধমান কর্ড লাইনের ডেলি প্যাসেঞ্জারদের অনেকেরই হাতে খবরের কাগজ। বড় একটি বাক্স রাখা আছে স্টেশনের এককোণে। নির্দিষ্ট ওই জায়গায় হাতের কাগজ ফেলে এগিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। ভোঁ…স্টেশন ছাড়িয়ে এগিয়ে গেল ৯টা ২০–র লোকাল ট্রেনটাও। খবরটি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের।

‘এভাবেই চলছে। রোজকার খবরের কাগজ সংগ্রহ করতে বলছি আমরা। ঘরে–ঘরে, পাড়ায়, স্কুলে, ক্লাবে, অফিসে, কারখানায়— সর্বত্র।’ বলছিলেন নরেশ জৈন।‘পুরনো খবরের কাগজ লোকে বিক্রি করে দেয়। ফেলেও দেন অনেকে। আমরা বলছি বিক্রি বা নষ্ট না–করে এক জায়গায় জমা করুন। তাতেই বহু গরিব মানুষ উপকৃত হবে।’
পন্ডিচেরির ‘মাদার’ মিরা আলফাসার সেই অমোঘ উক্তি: ‘নো ওয়ার্ডস, অ্যাক্টস্‌…।’ কথা নয়, করে দেখাও। তাই মাদারের কাজের অনুপ্রেরণাকেই পাথেয় করেছেন নরেশ জৈনরা। কথাটা এভাবেও বলা যায়, ‘দেয়ার ইজ নো ড্রিম জব, ক্রিয়েট ইওর ওন…।’ মুখে হাসি নরেশের।
বর্ধমানের মসাগ্রামে বেসরকারি ওই মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন সাধুখাঁও বলেছেন, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও এখন দারুণ উৎসাহ। অভিভাবকরাও সাহায্য করছেন। রোজ পড়ুয়ারা বাড়ি থেকে পুরনো খবরের কাগজ এনে জমা দিচ্ছে। আমরা একসঙ্গে অনেকটা জমে গেলে বিক্রি করছি। সেই টাকায় গরিব মানুষের সাহায্য করা হচ্ছে।’

প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘রোজ শ’দুয়েক কাগজ জমা পড়ে। এখন শুধু স্কুল নয়, আশপাশের ছাত্রছাত্রীরাও বাড়ি থেকে পুরনো খবরের কাগজ নিয়ে আসছে। তা বিক্রি করেই পূজার বিয়ের জন্য ৩২ হাজার টাকা আমরা ওর বাবার হাতে তুলে দিই। আমাদের শিক্ষকরাও সাহায্য করেছিলেন।’ এই উদ্যোগে সামিল হয় স্কুল পড়ুয়ারা। শিশু বয়স থেকে সমাজ ভাবনা সুস্থ মানসিকতারও সম্পূরক বলে মনে করছেন প্রধান শিক্ষক চন্দন সাধুখাঁ।

বললেন, ‘শীতে এক বৃদ্ধকে চাদর কিনে দেওয়া হল। যে ছাত্রটির সংগৃহীত খবরের কাগজে বিক্রির টাকায় সাহায্য করা হল, অনুষ্ঠানে তার হাত দিয়েই প্রদান করালাম আমরা। তারই উদ্যোগে এমন সামাজিক উপকার হচ্ছে— এই ভেবে ছাত্রটিও দারুণ উৎসাহ পেল। এভাবেই সমাজে ভাল কাজের মানসিক ভাবনাও গড়ে উঠবে ছোট থেকেই।’ আর এই সব ভাবনা থেকেই ‘পৃথিবী আশ্রম’–এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন মসাগ্রাম রেল স্টেশনের ম্যানেজার পদ্মনাভ গায়েন কিংবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আমলা পার্থসারথি গায়েনের মতো আরও কয়েকজন।

পদ্মনাভবাবু বলেন, ‘রেল স্টেশনে বাক্স রাখা আছে। প্রচুর মানুষ এখন রোজ ওখানে পুরনো খবরের কাগজ জমা দিয়ে যান। গড়ে ৩০ কেজি করে কাগজ রোজ জমা হচ্ছে। আমাদের প্রচারে সাড়া দিচ্ছেন অনেকেই।’ ইতিমধ্যে ৫ জনের কমিটি গড়া হয়েছে। কীভাবে কাগজ সংগ্রহ বা বিক্রি, অর্থ সাহায্য— এঁরাই ঠিক করছেন। কিছুদিন আগে সচেতনতার এই প্রচার করতে গিয়ে ধনেখালিতে আধ ট্রাক পুরনো খবরের কাগজ সংগ্রহ করেছেন এঁরা। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মৃতের কোনও পরিবার ‘বিপন্ন’ বোধ করলেও। দাহ ইত্যাদি কারণে অর্থের প্রয়োজন পড়লেও পাশে আছেন এঁরা। ‘একটু ভাল থাকার জন্য অন্যরকম ভাবনা।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts