নাব্যতা-সংকটে তিন মাস ধরে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর অচল

অদিত্য রাসেল: পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও বড়াল নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় অনেক ডুরোচর জেগে উঠেছে। ফলে চট্টগ্রাম ও মোংলা নৌবন্দর থেকে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরগামী রাসায়নিক সার, কয়লা, পাথর, সিমেন্ট ও জ্বালানি তেলবাহী কার্গো জাহাজ পূর্ণ লোড নিয়ে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না। এতে ৩ মাস ধরে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর অচল হয়ে পড়েছে।

এদিকে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর না দেওয়ায় লোকসান গুনছে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের ইজারাদারগণ। গত ৩ মাস বন্দরে জাহাজ না আসায় অনেকটাই দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন তারা। সেই সঙ্গে পণ্যবাহী জাহাজ না আসায় নৌবন্দরে কর্মরত প্রায় ৫ শতাধিক শ্রমিক কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে।

জানা যায়, বাঘাবাড়ি-চট্টগ্রাম-মোংলা নৌবন্দর রুটের বিভিন্ন পয়েন্টে ১০/১২ ফুট ড্রাফটের পানির চাহিদা থাকলেও আছে সাড়ে ৭ ফুট ড্রাফট। ফলে চট্টগ্রাম ও মোংলা নৌবন্দর থেকে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরগামী রাসায়নিক সার, কয়লা, পাথর, সিমেন্ট ও জ্বালানী তেলবাহী কার্গো-জাহাজ পূর্ণলোড নিয়ে নৌবন্দরে যেতে পারছে না। ফলে পাটুরিয়া ও নগরবাড়ির আগেই লাইটারেজের মাধ্যমে জাহাজ থেকে অর্ধেক মাল আনলোড করে বেড়া, নগরবাড়ি ও যশোরের নওয়াপাড়া ঘাটে খালাস করছে পরিবহণ ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ। এতে জাহাজ শূন্য হয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর অচল হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে, নগরবাড়ি, বেড়া ও যশোরের নওয়াপাড়া থেকে ১০ চাকা অথবা ১৬ চাকার ট্রাকে করে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের বাফার গুদামে সার এনে এরপর উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে মহাসড়কের চরম ক্ষতি হচ্ছে। সঠিক সময়ে ভরা সেচ মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার ১৪টি বাফার গুদামে সার সরবরাহ সঠিক পরিমাণে হচ্ছে না। ফলে চলতি ইরি-বোরো আবাদে চাহিদা অনুযায়ী রাসায়নিক সার সরবরাহ বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এ সমস্যা দ্রুত সমাধানে কৃষকরা অবিলম্বে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে এ নৌরুটের ডুবোচরগুলো অপসারণ করে সঠিক মাত্রার ড্রাফট ফিরিয়ে আনতে বিআইডব্লিউটিএ এর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের শ্রমিক দুলাল সরদার, আলমগীর হোসেন, ওমর ফারুক ও জাহাঙ্গীর হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বলেন, গত ৪০ বছরেও বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে এভাবে জাহাজ শূন্য হয়নি। বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে জাহাজ না আসায় বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের ৫ শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্দরের ১ থেকে ২টি স্থানের সার ট্রাকে তুলে দিয়ে যে মজুরি পাচ্ছেন তা দিয়ে কোনো মতে চলছে তাদের সংসার।

এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের লেবার এজেন্ট আব্দুস সালাম বলেন, মোহনগঞ্জ, মোল্লার চর, ব্যাটারির চর, পাটুরিয়া, নিকলি ও দাসকান্দি এলাকায় নদীর পানি কম থাকায় পূর্ণলোডে পণ্যবাহী জাহাজ বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে আনা সম্ভব হচ্ছে না। তবে, বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে রাসায়নিক সার পরিবহণের ৪ ঠিকাদার কোম্পানি কুষ্টিয়া ও নওয়াপাড়া নিয়ে আনলোড করছে। এরপর সেখান থেকে ১৬ চাকার ট্রাকে করে উত্তরাঞ্চলে সরবরাহ করছে। ফলে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর জাহাজ শূন্য হয়ে বন্দরটি অচল হয়ে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, কোটি কোটি টাকা দিয়ে বাঘাবাড়ি ঘাট ইজারা নিয়েছি। জাহাজ না আসায় আমাদের প্রায় ৫ শতাধিক লেবার বেকার হয়ে পড়েছে। আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। দ্রুত নৌপথ সচল করতে বিআইডব্লিউটিএ এর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএ‘র উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের নৌ পথে কোন নাব্যতা সংকট নেই। এখানে ৮ থেকে ১০ ফুট পানির ড্রাফট রয়েছে। এটা দ্বিতীয় শ্রেণির বন্দর। ফলে এ বন্দর চ্যানেলে নিয়ম অনুযায়ী ৭ থেকে ৮ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলার কথা। নিয়ম অমান্য করে সেখানে ১০/১২ ফুট ড্রাফটের জাহাজ নিয়ে গেলে তো সমস্যা হবেই। এ বন্দরটি প্রথম শ্রেণির বন্দরে রূপান্তরের চেষ্টা চলছে। এটি হয়ে গেলে এ সমস্যা আর থাকবে না।

বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের বাফার গুদামের ইনচার্জ হারুন আর রশিদ বলেন, বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে জাহাজ না আসার বিষয়টি আমার জানা নেই। ওটা আমার অধীনে নয়। আমার অধীন বাঘাবাড়ি বাফার গুদামে চাহিদা অনুযায়ী সার মজুদ আছে। এখান থেকে শুধু পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় সার সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরে অবস্থিত পরিবহণ ঠিকাদার কোম্পানি বাল্ক ইন্টারন্যাশনাল ও দেশবন্ধুর উত্তরাঞ্চল প্রধান শাহান শাহ বলেন, গোয়ালন্দ-দৌলতদিয়ার দাসকান্দি এলাকায় নাব্য সংকট সবচেয়ে বেশি। এখান থেকে লাইটারেজ করে প্রতিবস্তা সার বাঘাবাড়ি বন্দরে নিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়। এতে আমার কোম্পানির লোকসান হয়। এ লোকসান ঠেকাতে বাঘাবাড়িতে সারবাহী জাহাজ আসে না। আমরা সরকারকে অনেক বলেছি এই নাব্য সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে। কিন্তু গত ২০ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে বাঘাবাড়ি বন্দরে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি জানান।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts