মুশফিক-বীরত্বে বাংলাদেশের দাপুটে জয়

মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের একমাত্র টেস্টে আইরিশদের ৭ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৭৭ রান করে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মুশফিকুর রহিম।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ২১৪ রানে অলআউট হয় আয়ারল্যান্ড। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মুশফিকুর রহিম এবং সাকিব আলা হাসানের ব্যাটে ৩৬৯ রান করে বাংলাদেশ। ১৫১ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে আয়ারল্যান্ড। এই ইনিংসের শুরুতে বিপর্যয়ে পড়লেও লোরকান টাকার এবং অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের ব্যাটে শেষমেশ ২৯২ রানের পুঁজি পায় আইরিশরা। শেষ ইনিংসে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩৮ রানের। মুশফিকুর রহিমের অনবদ্য ফিফটিতে ৭ উইকেট হাতে রেখেই তা পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ।

মিরপুরে প্রথম দিন ব্যাট করতে নেমে শুরুটাই ভালো হয়নি আয়ারল্যান্ডের। দুই ওপেনার জেমস ম্যাককলাম এবং মারে কমিন্সকে ২৭ রানের মধ্যেই হারায় সফরকারীরা। ১৬ রান করে তাইজুলের বলে ফেরেন অ্যান্ড্রু ব্যালবার্নি। হাল ধরেন হ্যারি টেক্টর এবং কার্টিস ক্যাম্ফার।

কাঁটায় কাঁটায় ৫০ রান করে মেহদী হাসান মিরাজের বলে বোল্ড হন টেক্টর। এরপর দুই রানের ব্যবধানে আরও দুই উইকেট হারিয়ে বিশাল চাপে পড়ে আইরিশরা। ছয়ে নামা টাকার এবং মার্ক অ্যাডায়ারের ত্রিশোর্ধ ইনিংসে কোনোমতে দুইশ’ রান পার করে অ্যান্ড্রু ব্যালবার্নির দল। ২১৪ রানে থামে আইরিশদের প্রথম ইনিংস।

বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটাও তেমন সুখকর হয়নি। প্রথম ওভারেই নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট হারানোর পর ৪০ রানে তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর স্বাগতিকদের ব্যাটিং সামলান অধিনায়ক নিজেই। যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন মুশফিক। দুজন মিলে গড়েন ১৫৯ রানের জুটি।

টেস্ট ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরিটা এই ম্যাচেও পাওয়া হয়নি সাকিবের। ৯৪ বলে ৮৭ রানের ওয়ানডে ঘরনার ইনিংস খেলে আউট হন ম্যাকব্রাইনের বলে। সাকিব সেঞ্চুরি মিস করলেও ঠিকই নিজের নবম টেস্ট সেঞ্চুরিটা পেয়ে গেছেন মুশফিক।

পঞ্চম উইকেটে লিটন-মুশফিকের জুটি হয়েছে ৮৭ রানের। ৪১ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলে লিটন হোয়াইটের বলে ফেরেন। মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ১২৬ রান। শেষদিকে মিরাজের ফিফটিতে বাংলাদেশের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ৩৬৯।

আইরিশদের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা হয়েছে প্রথম ইনিংসের চেয়েও ভয়াবহ। ৫১ রানেই প্রথম পাঁচ উইকেট হারায় আইরিশরা। ইনিংস ব্যবধানে হার এড়াতে তখনও তাদের প্রয়োজন ১০০ রান। এমন সময় হাল ধরেন টাকার।

প্রথমে টেক্টরকে নিয়ে গড়েন ৭২ রানের জুটি। এরপর ম্যাকব্রাইনের সঙ্গে ১১১ রানের জুটি। তাতে ইনিংস হার এড়ানোর পরে সম্মানজনক সংগ্রহও পেয়ে যায় আইরিশরা। ২৯২ রানে থামে আইরিশদের দ্বিতীয় ইনিংস।

১৩৮ রানের লক্ষ্যে শুরুতেই আক্রমণ করতে তামিম্ব ইকবালের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে আসেন লিটন। ৪ ওভারেই ২৭ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ।

পঞ্চম ওভারের শেষ বলে মার্ক অ্যাডায়ারকে পুল করতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি লিটন। বল লাগে তার হেলমেটে। সেখান থেকে বল গিয়ে লাগে স্টাম্পে। ১৯ বলে ২৩ রান করে সাজঘরের পথ ধরতে হয় লিটনকে।

লিটন ফেরার তিন ওভারের মধ্যে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আইরিশ স্পিনার ম্যাকব্রাইনের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শান্ত। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৪ রান।

দ্রুত ২ উইকেট হারালেও প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা মুশফিক নেমে অবশ্য আক্রমণাত্মক ব্যাটিংই করেন। মুখোমুখি প্রথম বলেই ম্যাকব্রাইনকে ড্রাইভ করে চার মেরে শুরু করেন তিনি। এরপর চড়াও হন বেন হোয়াইটের ওপর। বাংলাদেশ মধ্যাহ্নবিরতিতে যায় জয়ের সুবাস নিয়েই, প্রয়োজন ছিল ৪৯ রান।

বিরতির পর অবশ্য ছন্দপতন হয় তামিমের। লেগ স্পিনার হোয়াইটের লং হপে পুল করতে গিয়ে খাড়া ওপরে ক্যাচ তোলেন ৬৫ বলে ৩১ রান করা এ ওপেনার। দ্রুত ফিরতে পারতেন মুমিনুলও, ম্যাকব্রাইনের বলে সহজতম স্টাম্পিংয়ের সুযোগ টাকার মিস করায় বেঁচে যান তিনি। এরপর আর সুযোগ তৈরি করতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। হোয়াইটকে কাট করে চার মেরে ৪৭ বলে ক্যারিয়ারের ২৬তম ফিফটি পূর্ণ করেন মুশফিক।

Print Friendly

Related Posts