তীব্র তাপপ্রবাহে ঝরছে আমের গুটি

মেহেদী হাসান শিয়াম: চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনাবৃষ্টি আর তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঝরছে আমের গুটি। মৌসুমের শুরুতে মুকুলে চোখ জুড়ালেও যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় গাছে আমের গুটি কিছুটা কম এসেছে। আর এখন দাবদাহের কারণে বোটা শুকিয়ে ঝরছে আমের গুটি।

আবহাওয়ার এমন বৈচিত্র্য দেখে হতাশ হচ্ছেন চাষি ও বাগান মালিকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণের তথ্যমতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৭ হাজার ৫৮৮ হেক্টর জমিতে ২৮ লাখ ২৬ হাজার ৬৪৮টি আম গাছ রয়েছে। এরমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫ হাজার ১৬৫ হেক্টর, শিবগঞ্জ উপজেলায় ২০ হাজার ২৬০ হেক্টর, গোমস্তাপুর উপজেলায় ৪ হাজার ২৩০ হেক্টর, নাচোল উপজেলায় ৪ হাজার ২৭১ হেক্টর এবং ভোলাহাট উপজেলায় ৩ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমিতে আম গাছ রয়েছে।

জেলায় অন্যান্য আমের তুলনায় সবচেয়ে বেশি আশ্বিনা আমের আবাদ হচ্ছে। এই বছর জেলাজুড়ে মোট ৯ হাজার ৩২৭ হেক্টর জমিতে আশ্বিনা আমের চাষ করছেন কৃষকরা। এছাড়াও জেলার অন্যান্য উপজেলার মধ্যে শিবগঞ্জে সবচেয়ে বেশি জাতের আমচাষ হচ্ছে। এই উপজেলায় প্রায় ১৫ লাখ ১৫ হাজার আম গাছে বিভিন্ন জাতের আম চাষ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর। জেলায় ফজলি, লক্ষণভোগ, গোপালভোগ, ক্ষিরশাপাত, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ অন্তত ২০ এর অধিক জাতের আম চাষাবাদ হয়ে থাকে এই অঞ্চলে।

সরজমিনে জেলার বিভিন্ন বাগানে ঘুরে বাগানের গাছগুলোর নিচে অসংখ্য আমের গুটি ঝরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়াও গাছের ডগায় আমের গুটি শুকিয়ে যাচ্ছে। অনাবৃষ্টি আর দাবদাহের কারণে আমের বোটা শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। ইতোমধ্যে আমের গুটি ঝরা রোধ করতে চাষিরা সেচ দিতে শুরু করেছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমচাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, খরার কারণে আমের গুটি অনেক পরিমাণে ঝরে যাচ্ছে। যার কারণে গাছ থেকে আম কমে যাচ্ছে। গাছগুলোতে আমের মুকুল অনেক এসেছিলো, কিন্তু প্রয়োজন মতো বৃষ্টি না হওয়ার কারণে অনেক মুকুল রোদে পুড়ে ঝলসে গেছে। এমন আবহাওয়া চলতে থাকলে আমের বাগানে লোকসানের শঙ্কায় থাকতে হবে।

সদর উপজেলার আম চাষি মোজাফফর হোসেন বলেন, বাগানের আমের গাছগুলোতে ভালোই মুকুল এসেছিলো, কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ার কারণে অনেক মুকুল রোদের কারণে নষ্ট হয়েছে। তার পরেও যেগুলো মুকুল ফুটে আমের গুটি বের হয়েছিলো, সেগুলো থেকেও অনেক আম ঝরে যাচ্ছে। এসব কারণে অধিকাংশ গাছে আমশূন্য হয়ে পড়ছে। বর্তমানে দাবদাহের কারণে আমগাছে সেচ ও কীটনাশকের মিশ্রন স্প্রে করেও গুটি টেকানো যাচ্ছে না। এ সময় বৃষ্টি না হওয়ায় আম নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। আমার অনেক বাগান কেনা রয়েছে যদি এমনভাবে আম ঝরতে থাকে আর যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে আমার অনেক টাকা লোকসান হবে।

সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কানিজ তাসনোভা জানান, আমাদের উপসহকারীরা আমের গুটি ঝরা রোধ করতে বাগান মালিক ও চাষিদের আমের গাছে বেশি করে পানি দিতে পরামর্শ দিচ্ছেন এবং ছত্রাকনাশক ও বোরন স্প্রে করতে বলা হচ্ছে। গত বছরে তুলনায় আমের গুটিও ভালো রয়েছে। কিন্তু দাবদাহ ও বৃষ্টি না হওয়ার করণে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। তবে কিছু কিছু জাতের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত আম ঝরানোর জন্য এক ধরণের হরমোন নিঃসরণ করে থাকে ফলে গুটি ঝরে যায়। প্রাকৃতিক কোন বড় ধরণের দুর্যোগ না হলে আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।

এমন বৈচিত্র্য আবহাওয়ার মাঝে আমে গুটি ঝরা রোধ করতে আম চাষি ও বাগান মালিকদের বেশি বেশি সেচ দেওয়ার পরার্মশ দিলেন আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, গাছে যে পরিমাণে মুকুল ফুটে আম হয়, সেসব অনেক গাছেই খাদ্যেও ঘাটতি থাকে। যথাযথ পরিমাণে গাছের খাদ্য না থাকার কারণে প্রাকৃতিক নিয়মে অনেক আম ঝরে যায়। বর্তমানে জেলায় দাবদাহের সাথে সাথে বৃষ্টি কম হয়েছে। ফলে মাটি শুষ্ক হয়ে আছে, অনেক জায়গায় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এই কারণেও আম ঝরে পড়ছে। এই মুহূর্তে আম চাষি ও বাগান মালিকদের উচিত সেচ প্রয়োগ করা।

 

Print Friendly

Related Posts