চলে গেলেন ‘ছুটির ফাঁদে’র শহীদুল হক খান

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত বর্ষীয়ান নির্মাতা শহীদুল হক খান মারা গেছেন। বুধবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। রেখে গেছেন স্ত্রী, কন্যা ও পুত্র।

দীর্ঘদিন ধরেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন তিনি। আর্থিক অনটনে চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন ক্যানসারের কাছে হার মানা এই নির্মাতা।

১৯৪৮ সালের ১১ নভেম্বর মুন্সিগঞ্জের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শহীদুল হক খান। তিনি একাধারে সিনে সাংবাদিক, কলামিস্ট, নাট্যকার, টিভি প্যাকেজ নাটক নির্মাতা ও টিভি ম্যাগাজিনের উপস্থাপকও ছিলেন।

শহীদুল হক খানের ছেলে সাইফুল হক খান সৌরভ জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মরদেহ রাখা হবে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। এরপর জানাজা শেষে বনানীর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

১৯৭৩ সালে সমরেশ বসুর উপন্যাস অবলম্বনে বাংলাদেশে প্রথম ভারতীয় নায়িকা ঝুমুর গাঙ্গুলীকে এনে নির্মাণ করেন তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘ছুটির ফাঁদে’। এই সিনেমাতে নিজের লেখা ‘সাগরের সৈকতে কে যেন দূর হতে ডেকে ডেকে যায়’ গানের জন্য তিনি গীতিকবি হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তার নির্মাণে আরও ছবির মধ্যে রয়েছে ‘কলমি লতা’ ও ‘সুখের সন্ধানে’। অসুস্থ হওয়ার আগে তিনি শেষ করেছেন ‘একজন ভাষা সৈনিকের গল্প’ ও ‘আমার পিরানের কোনও মাপ নাই’ নামের দুটি সিনেমা।

সিনেমার চেয়ে তিনি নাটক নির্মাণ করেছেন বেশি। ১৯৯৪ সালে বিটিভিতে প্যাকেজ নাটক নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। যার শুরুটা করেন ‘কোথায় সেজন’ দিয়ে। ‘তিথি’, ‘কাশবনের কন্যা’, ‘মহামৃত্যু’, ‘নাটের গুরু’, ‘নায়ক’, ‘পঞ্চমী’ তার নির্মিত নব্বই দশকের আলোচিত প্যাকেজ নাটক।

নির্মাণের পাশাপাশি তার লেখা বইয়ের সংখ্যা ৭৯টি। যার মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যার ফাঁসির রায়, জেগে ওঠে বাংলাদেশ, হাজার জনতার দৃষ্টিতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, ভাষা আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধু সকলের, জাতির স্নেহধন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা উল্লেখযোগ্য।

বিভিন্ন পত্রিকায় শহীদুল হক খান সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তার লেখা বেশ ক’টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) এর সিনিয়র সদস্য।

Print Friendly

Related Posts