শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে

প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের ফলে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে চলেছে ‘মোখা’ নামে ঘূর্ণিঝড়। এটি খুব শক্তিশালী হয়ে আঘাত হানতে পারে বাংলাদেশে।

কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ দু’টি আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল বিশ্লেষণ করে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ খুবই শক্তিশালী হবে এবং এটি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক এই পিএইচডি গবেষক লিখেছেন, আজ (৮ মে) ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল নির্দেশ করছে- সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সরাসরি খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে ১৪ মে রাত ১২টার পরে থেকে আঘাত হানতে পারে বাংলাদেশে। অন্যদিকে আমেরিকান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে- ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সরাসরি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপর দিয়ে ১৪ মে সকাল ৬ টার পর থেকে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরো লিখেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান (২০২০ সলের ২০ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হেনেছিলো- যার বাতসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার) স্থল ভাগে আঘাত করার দিন যত বেশি কাছাকাছি এসেছিলো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল নির্দেশিত পথ তত বেশি সঠিক প্রমাণিত হয়েছিলো।

তিনি লিখেন, ‘দুইটি মডেলই নির্দেশ করতেছে খুবই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ বাংলাদেশ উপকূলে আঘাতের সম্ভাবনার কথা।’ তবে ঠিক কত শক্তিশালী হবে তা তিনি প্রকাশ করতে চান না।

এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি পরবর্তীতে ঘনীভূত হতে পারে। তবে এখনই সমুন্দ্রবন্দরে কোনো সতর্কতা সংকেত দেওয়া হয়নি।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ঘনীভূত হতে পারে। পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।

মঙ্গলবার (৯ মে) সকাল পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

এদিকে রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও বান্দরবান জেলা সমূহের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে ও বিস্তার লাভ করতে পারে।

সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। ঢাকায় পশ্চিম/দক্ষিণপশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ৬-১২ কিলোমিটার। আগামী তিনদিন বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।

সোমবার (৮ মে) বেলা ১১টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে, ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়নি এখনও। সাগরে এখনও ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। সোমবার তা নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এর প্রভাবে তুমুল বৃষ্টি হবে। সেখানকার মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts