এনাম আহমেদ : বগুড়ার মহাস্থানগড়ে চলছে সাধু ও পুণ্যার্থীদের মিলন মেলা। প্রতি বছর বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবার এই মিলনমেলা বসে মহাস্থানগড় মাজার প্রাঙ্গণে। মহাস্থানগড়ের বিভিন্ন স্থানের বিভিন্ন তরিকার সন্ন্যাসীরা এসে তাদের গান বাজনা করে আনন্দ উদযাপন করছেন।
কথিত আছে, এখানে ১৩৪৩ খ্রিস্টাব্দে সে সময়ের রাজা পরশুরামের সঙ্গে সম্রাট শাহ সুলতানের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত হন এবং মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় পরশুরামের একমাত্র বোন শিলা দেবী করতোয়া নদীতে আত্মবিসর্জন দেন। সেই দিন ছিল বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার। সেই থেকেই পরবর্তী বছরগুলোতে এই দিনে মহাস্থানে উভয় ধর্মের মানুষরা সমবেত হয় পুণ্য সঞ্চয়ের আশায়। কালক্রমে এটি হয়ে ওঠে সাধু-সন্ন্যাসী ও পুণ্যার্থীদের মিলন মেলা।
এ দিন প্রতিবছর মহাস্থান মাজারে পবিত্র ওরস মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগির জন্য শাহ সুলতান বলখি (রহ.)-এর মাজারে অবস্থান নিলেও সাধু ও বাউলরা অবস্থান নেন পাশের হজরত বোরহান উদ্দিন (রহ.) মাজার, পশ্চিম পাশের আমবাগান ও উত্তরপাশের আবাসিক এলাকার মাঝে। এছাড়া মাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশের মাঠসহ পুরো মহাস্থান এলাকায় বসে মেলা।
বর্তমানে মেলাটি বাউল-সাধু-সন্ন্যাস কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। মেলায় পিতলের বালা, মোটা পুথি ও পাথরের মালা, হুক্কা, একতারা, দোতারা, বাঁশের বাশি, বাউলদের তবলা, জুরির দোকানপাট বেশি বসে। এছাড়া মেলায় স্থানীয় প্রসিদ্ধ খাবার মহাস্থানের কটকটি ভক্তদের কাছে জনপ্রিয়। কটকটি বিক্রি হয় প্রচুর পরিমাণে।
মেলায় ঘুরতে আসা সারিয়াকান্দি উপজেলার রজব আলী জানান, মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাউল সন্ন্যাসীরা আসেন। তারা বিভিন্ন তরিকার গান বাজনা করেন। অন্য ধরণের কিছু মানুষদের দেখা যায় তাই মেলায় এসেছেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার তিনি এসেছেন মেলায়। বেশ ভালো লাগছে তার।
আরেক দর্শনার্থী উজ্জল হোসেন জানান, তিনি বগুড়া শহর থেকে বন্ধুদের সাথে এসেছেন। মেলাতে ঘুরছেন। দরবেশরা ব্যবহার করেন এমন বিভিন্ন ধরণের আংটি, বালা, মালার দোকান বসেছে। ঘুরে ঘুরে তিনি সেসব দেখছেন।
মেলায় কুষ্টিয়া থেকে এসেছেন ব্যবসায়ী শেখ ফরিদ। তিনি মাজারে মাজারে ঘুরে দরবেশদের লাঠি, আংটি মালা বিক্রি করেন। তিনি জানান, প্রতি বছরই তিনি এই মেলায় আসেন। তিনি অনেকগুলো লাঠি নিয়ে এসেছিলেন। লাঠিগুলো পাহাড়ি গাছ থেকে তৈরি। ওগুলোর নাম নাগমনি লতা। প্রতি পিস লাঠি ১০০ টাকা। তবে ৮০ টাকা হলেও তিনি বিক্রি করছেন। এখন পর্যন্ত ২৫টি লাঠি বিক্রি করতে পেরেছেন।
মহাস্থানগড়ের বাসিন্দা ইলিয়াস মিয়া জানান, শতাব্দীর পর শতাব্দী থেকে এ আয়োজন হয়ে আসছে। তবে ঠিক কবে বা কেন এ মেলার শুরু হয়েছিল কেউই নিশ্চিত নয়। মেলায় প্রতিবছর পরিবারের ছোটদের নিয়ে ঘুরতে আসি তাই এবারও এসেছি।
গাইবান্ধা থেকে আসা লিটন ফকির জানান, গুরু ভক্তি ও আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য এসেছি। শুধু আশেপাশের জেলাই নয়,
ভিন দেশ থেকেও অনেকে আসেন।
মহাস্থান মাজার মসজিদ কমিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহেদুর রহমান জানান, মূলত বৈশাখের শুরু থেকেই সাধু সন্নাসীরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মহাস্থানগড়ের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। এবারও লাখো ভক্ত মেলায় এসেছেন। মেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক সার্বক্ষণিক কাজ করছে।