বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার কুষ্টিয়া সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এসময় প্রাগপুর স্থলবন্দর চালু করার বিষয়টি তিনি আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) তিনি দৌলতপুর উপজেলার ভারত সীমান্ত ঘেঁষা প্রাগপুর এলাকা ঘুরে দেখেন।
এ সময় ঝুলে থাকা প্রাগপুর স্থলবন্দর স্থাপনের উপযোগীতা তুলে ধরা হলে সেখানে বন্দর স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানান।
পরিদর্শনকালে সেখানে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া চেম্বারের সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ মামুন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ। দৌলতপুর থানার ওসি মজিবুর রহমান, প্রাগপুর ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান মুকুল প্রমুখ।
নদীর এ পারে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর আর ওপারে ভারতের নদীয়া জেলার শিকারপুর। মাঝখানে সরু ফিতার মত বয়ে চলেছে মাথাভাঙা নদী। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিও বহন করে চলেছে প্রাগপুর-শিকারপুর সীমান্ত। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রাগপুর সীমান্ত দিয়ে দলে দলে বাঙ্গালীরা ওপারে যান যুদ্ধের ট্রেনিং নিতে আবার কেউ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। ওপারে শিকারপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেনিং নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে। এনেছিলেন বিজয় পতাকা। তাই প্রাগপুর হয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত শিকারপুরের সাথে যোগাযোগ দৌলতপুরের মানুষের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন। ফলে ঐতিহ্য সেই সীমান্তেই দু-দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজতর করতে স্থল বন্দর স্থাপনের উদ্যোগ দু দেশের ঐতিহাসিক গুরুত্বও বহন করতে পারে।
প্রাগপুর থেকে লালনশাহ সেতু হয়ে জাতীয় মহাসড়ক মাত্র ২০ কিলোমিটার ও ওপারে পশ্চিমবঙ্গের শিকারপুরে ভারতের জাতীয় মহাসড়ক। ব্রিটিশ আমলে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর একটি সেতু ছিল। সে সময় ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের যাতায়াতের অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহার করা হতো প্রাগপুরকে। কালক্রমে ওই সেতু বিলীন হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা-বাণিজ্য। তাই ব্যবসা-বাণিজ্য সহজতর করতে ফের পথটি চালু করা দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য মতে, অর্থনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় প্রস্তাবিত প্রাগপুরে স্থলবন্দর বাস্তবায়িত হলে দু-দেশের আমদানি-রফতানি ক্ষেত্রে ফের ব্যাপক সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। প্রাগপুর স্থল বন্দর বাস্তবায়ন হলে ঢাকা-কলকাতার দূরত্ব কমিয়ে দিতে পারে ১০০ কিলোমিটার। যা দু-দেশের পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বড় ধরণের অর্থনৈতিক সাশ্রয় করতে পারবে। এছাড়া প্রাগপুরে স্থলবন্দর বাস্তবায়িত করতে অবকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রেও বড় কোন অর্থের দরকার হবে না দু-দেশের সরকারের। মহাসড়ক কাছাকাছি হওয়ায় অনায়াসে পণ্য আমদানি-রফতানি করা মত অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। শুধুমাত্র মাথাভাঙ্গা নদীর উপর ছোট্ট একটি ব্রিজ নির্মাণ করা দরকার। তাছাড়া বৈধ পথে পণ্য আমদানি-রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হলে চোরাচালানসহ অবৈধ পথে পণ্য আনা নেওয়া বন্ধ হবে। ফলে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব পাবে সরকার। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মস্থান। তাই প্রস্তাবিত এই স্থলবন্দরটির দ্রুত বাস্তবায়ন চান স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ।
অর্থনৈতিক ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত হওয়ায় ঐতিহাসিক গুরুত্ব দিয়ে ২০১১ সালে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। সে অনুযায়ী তৎকালীন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান কুষ্টিয়ায় সফরে এসে প্রাগপুর সীমান্তে স্থলবন্দর স্থাপনের ঘোষণা দেন। এরপর প্রাগপুর সীমান্তে সরেজমিনে এসে স্থলবন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাই করে গেছেন নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দলও। ভূমি জরিপসহ অন্যান্য কাজও হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও প্রাগপুরে স্থলবন্দর স্থাপনের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়নি।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার ভারতের সাথে নতুন করে যে ছয়টি স্থলবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে তার মধ্যে প্রাগপুর স্থলবন্দর অন্যতম।