আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আজ, ২৩ শর্ত

রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বিএনপি। এ সমাবেশ থেকে সরকার পতনের ‘এক দফা’ ঘোষণা করবে দলটি।

অন্যদিকে, বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

আজ বুধবার (১২ জুলাই) রাজধানীতে একই দিনে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ফলে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনীতির মাঠ। সমাবেশকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সংঘাতের শঙ্কা করছেন কেউ কেউ।

পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে বুধবার অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে। এমন গোয়েন্দা তথ্য পুলিশের কাছেও রয়েছে। ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক মঙ্গলবার রাতে গণমাধ্যমকে এমন তথ্য দিয়েছেন।

তিনি বলেন, বিএনপিকে বুধবার কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গোয়েন্দা তথ্য আছে, তারা অরাজকতা করতে পারে। তাই পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক অবস্থায় থাকবে।

শুধু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, আর বিএনপি নয়। রাজধানীতে বুধবার গণঅধিকার পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম এবং গণতন্ত্র মঞ্চসহ একাধিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সমাবেশ করবে।

দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বিএনপি। দুপুর ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ-উত্তর) আওয়ামী লীগ।

এছাড়া বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে গণ অধিকার পরিষদ। আর বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সংবাদ সম্মেলন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ।

এদিকে দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সাদা পোশাকধারী পুলিশও দায়িত্ব পালন করবে বলে জানা গেছে।

দুই দলকে নির্ধারিত দিনে দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত নির্ধারিত স্থানে সমাবেশ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির মতো আওয়ামী লীগও ২৩ শর্ত পালন সাপেক্ষে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে।

কর্মসূচি পালনে মানতে হবে যে ২৩ শর্ত

(১) এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
(২) স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রে উল্লেখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
(৩) অনুমোদিত স্থানেই সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
(৪) নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনার পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।
(৫) স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের চারদিকে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
(৬) নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশে আগতদের হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
(৭) নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
(৮) শব্দ দূষণ প্রতিরোধে সীমিত আকারে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে, কোনক্রমেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
(৯) অনুমোদিত স্থানের বাইরে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না।
(১০) অনুমোদিত স্থানের বাইরে, রাস্তায় বা ফুটপাতে কোথাও লোক সমবেত হওয়া যাবে না।
(১১) আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
(১২) ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাত আসতে পারে এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন/বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
(১৩) সমাবেশের কার্যক্রম ব্যতীত মঞ্চকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
(১৪) সমাবেশ শুরুর ২ (দুই) ঘণ্টা পূর্বে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে।
(১৫) অনুমোদিত সময়ের মধ্যে (বেলা ২টা থেকে ৫টা) সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে।
(১৬) কোনো অবস্থাতেই মূল সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।
(১৭) আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।
(১৮) রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ ও বক্তব্য প্রদান করা যাবে না।
(১৯) উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
(২০) কোনো ধরণের লাঠি-সোটা/ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না।
(২১) আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও কোনো বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন।
(২২) উল্লেখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।
(২৩) জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts