আজ শ্রাবণ মাসের প্রথম দিন। প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ জনজীবনকে সারথি করে প্রকৃতিতে আজ শ্রাবণ এলো। বর্ষার আষাঢ়েরই সহোদর শ্রাবণ। শ্রাবণে বর্ষা ধারা থাকবে না, তা কেমন করে হয়। শ্রাবণের সে ঝুমবৃষ্টি না হলেও মেঘে ছেয়ে আছে রাজধানী ঢাকার আকাশ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও ঝরছে।
আষাঢ়ে কদম ফুলের মতো হাসি হেসে যে প্রকৃতি সাজতে শুরু করে নতুন সাজে, সেই প্রকৃতি সাজে তুলির শেষ আঁচড় পড়ে শ্রাবণে।
জানা যায়, ‘শ্রাবণ’ তারার নামে নামকরণ হয়েছে এ মাসের। বর্ষার অংশীদার হিসেবে এ মাসেও ঝড়ো বাতাস বয়ে যায়। শ্রাবণ বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে আড়মোড়া ভেঙে আপন মহিমায় জেগে ওঠে কদম, হিজল, কেয়া ও যুথিকা।
শ্রাবণের আরেক নাম শাওন। ‘শাওন রাতে যদি/ স্মরণে আসে মোরে/ বাহিরে ঝড় বহে/ নয়নে বারি ঝরে…।’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা এ গানের স্বরলিপি মান্না দে’র কণ্ঠে শ্রাবণকে আজও জীবন্ত করে রেখেছে। যা প্রতি শ্রাবণেই ঢেউ তুলে যাচ্ছে আমাদের মনের মুকুরে।
প্রথম নারী ঔপন্যাসিক স্বর্ণকুমারী দেবী তার কাব্যে শ্রাবণবন্দনায় বলেছেন, ‘সখী, নব শ্রাবণ মাস/ জলদ-ঘনঘটা, দিবসে সাঁঝছটা/ ঝুপ ঝুপ ঝরিছে আকাশ!/ ঝিমকি ঝম ঝম, নিনাদ মনোরম,/ মুহুর্মুহু দামিনী-আভাস! পবনে বহে মাতি, তুহিন-কণাভাতি/ দিকে দিকে রজত উচ্ছ্বাস।’
জীবনানন্দ দাস শ্রাবণের বর্ষাকে বলেছেন বিরহ রোদন। ‘বাংলার শ্রাবণের বিস্মিত আকাশ চেয়ে রবে/ ভিজে প্যাঁচা শান্ত স্নিগ্ধ চোখ মেলে কদমের বনে/ শোনাবে লক্ষ্মীর গল্প–ভাসানের গান নদী শোনাবে নির্জনে…।’
শ্রাবণে আমন ধান রোপণ এবং পাট জাগ দেয়া, আঁশ ছাড়ানো গ্রাম-বাংলার অতি পরিচিত দৃশ্য। খনার বচনে রয়েছে, ‘শ্রাবণের পুরো, ভাদ্রের বারো/ধান্য রোপণ যতো পারো’, ‘আষাঢ় কাড়ান নামকে/ শ্রাবণে কাড়ান ধানকে’, ‘পান পুঁড়লে শ্রাবণে/ খেয়ে না ফুরায় বারণে’, ‘বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ হলুদ রুইবে/ অন্য কাজ ফেলিয়া থুইবে? আষাঢ়-শ্রাবণে নিড়াই মাটি/ ভাদরে নিজাইয়া করবে খাঁটি’ ইত্যাদি।
শ্রাবণে ওলের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় বলেও বারোমাসীতে উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রাচীনকালের প্রবাদ বিশারদগণ গাছে ‘কলম’-এর ব্যবহার জানতেন। এ মাসের বৃষ্টিপাতের পরেই তারা গাছে ‘কলম’ নিতে বলেছেন, ‘শোনরে মালি বলি তোরো/ কলম কর শাওনের ধারে’। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকৃতিতে কত না প্রভাব স্বত্ত্বেও অনেকটা স্বাভাবিক আবহেই ‘রিম-ঝিম্-ঝ্মি বৃষ্টির’ স্মারক মাস আষাঢ় বিদায় নিয়েছে। সময়ের সিঁড়ি বেয়ে এক সময় পশ্চিম দিগন্তে অস্তরাগ ছড়িয়ে বিদায় নেবে শ্রাবণও। আসবে শারদীয়া ভাদ্র, ছড়াবে কাশফুলের কমনীয় সাদারবরণ আর অনিন্দ্য সুন্দরের পসরা।
রৌদ্রের প্রখরতা ম্লান করে মেঘে মেঘে ছুঁয়ে যাক শ্রাবণ। টুপটাপ শব্দে ঝড়ে পড়ুক বৃষ্টি।