বিডিমেট্রোনিউজ ॥ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আয় ব্যয়ে ঘাটতি দাঁড়াবে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটের এই ব্যয় বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২৯ শতাংশ বেশি। দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এ বাজেটে ১ লাখ ১৭ হাজার ২৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়ে উন্নয়ন খাতে। সরকারি কর্মচারীদের বর্ধিত বেতন সহ অনুন্নয়ন খাতেই ব্যয় হবে বড় অংশ-২ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী মুহিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দেশের অর্থনীতিতে গত সাত বছরের সাফল্যের একটি মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে বাজেট উপস্থাপনা শুরু হয়।
টাকার অংকে বাজেটের আকার বাড়লেও জিডিপির অনুপাতে গতবারের প্রায় সমান তালেই অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। গতবছর প্রস্তাবিত বাজেট ছিল জিডিপির ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। এবারে তা হবে ১৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার এই বাজেটের মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ২৭ কোটি টাকা; যার এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা যাবে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)।
আর অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি।
এই অনুন্নয়ন ব্যয়ের বড় একটি অংশ যাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং পেনশনে। এর সঙ্গে বিদেশি ঋণের পুঞ্জীভূত সুদ মেটানোর দায়ও রয়েছে।
টানা আটবার এবং ব্যক্তিগত ১০টি বাজেট দেওয়া মুহিত বিশাল এই ব্যয়ের ৭১ শতাংশের বেশি অর্থ রাজস্ব খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছেন।
বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ৭২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে মূল বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ৬৪ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা ৫৩ হাজার ৯১৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
আয়কর ও মুনাফার উপর কর থেকে ৭১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৬৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ২২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৩০ হাজার ৭৫ টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৪৪ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৪ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় তা সংশোধন করে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। সংশোধন করে তা ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকায় পুননির্ধারণ করা হয়।
ঘটতি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আশাবাদী যে, ঘাটতির পরিমাণও মোট জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকছে, যা অর্থনীতির বিবেচনায় সহনীয়।