এলিট ক্লাবে ঢুকে গেলেন বাংলার বাঘিনী ফারজানা

বিশ্বাসের ডানা মেলে ইতিহাস লেখা সেই নারীদের পথ ধরে এলিট ক্লাবে ঢুকে গেছেন বাংলাদেশের ফারজানা হক পিংকি। নিজের নাম ইতিহাসের অক্ষয় কালিতে লিখিয়ে নিয়েছেন বাংলার বাঘিনী।

বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে নারীদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরির অনন্য কীর্তি গড়েছেন ফারজানা।

শনিবার (২২ জুলাই) শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ১০৭ রানের দ্যুতি ছড়ানো ইনিংস খেলে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের সেঞ্চুরির খাতা খুলেছেন ডানহাতি ব্যাটার। সেঞ্চুরি কেন, তার আশেপাশেও বাংলাদেশের কোনো ব্যাটার যেতে পারেননি।

২০১৩ সালে আহমেদাবাদে ভারতের বিপক্ষে সালমা খাতুন ৭৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। সালমার একদিন পর রুমানা আহমেদ একই ভেন্যু ও প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সমান ৭৫ রান করেছিলেন। রুমানা জাতীয় দলে নেই। সালমা স্কোয়াডে রয়েছেন। তার উপস্থিতিতেই ফারজানা রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় উঠেছেন।

নারীদের ক্রিকেটে যে বড় কিছু আসতে যাচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছিল সবশেষ ঘরোয়া ক্রিকেটে। প্রিমিয়ার লিগে ব্যাটসম্যানরা নিয়মিত রান করে আসছিলেন। তাদের ব্যাট থেকে আসছিল বড় ইনিংসও। ছয় সেঞ্চুরির সঙ্গে পুরো টুর্নামেন্টে ফিফটি হয়েছে ৩৯টি। বর্তমান জাতীয় দলের সুমাইয়া, লতা ও জ্যোতি পেয়েছেন সেঞ্চুরির স্বাদ। আর ফারজানা সেঞ্চুরি না পেলেও ১১১.৩৩ গড় ও ৮২.০৬ স্ট্রাইক রেটে ৩৩৪ রান করেছেন। যেখানে ফিফটি ছিল তিনটি। সর্বোচ্চ রান ছিল অপরাজিত ৯২।

ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম্যান্সের ডানা মেলাতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উড়তে সুবিধা হয়েছে ফারজানার। সেঞ্চুরির জন্য নিজেকে কৃতিত্ব দিলেন তিনি, ‘যখন দেখেছি ৯৬ রান হয়ে গেছে, তখন একটু ঘাবড়ে গেছিলাম যে, ‘আমি কী করব?’ তারপর ভাবছি, ‘না! ভালো ব্যাটার হতে হলে শেষ পর্যন্ত যেতে হবে।’

গত ম্যাচে ৪৭ রানে শেষ হয়েছিল, আমার বন্ধুবান্ধব সবাই বলছিল, ‘ইশ! একটুর জন্য ফিফটিটা হলো না।’ তো এবার আমি ভাবছিলাম, প্রক্রিয়া অনুযায়ী চেষ্টা করে যাই। পরে সেঞ্চুরিটা হলো।’

https://twitter.com/i/status/1682665143484944384

বড় কিছুর ক্ষুধা তার মধ্যে ছিল সেটা তার কণ্ঠেই টের পাওয়া গেল, ‘আমি আগে হয়তো সেঞ্চুরি করিনি, তবে অনেক সেঞ্চুরি দেখেছি। মুশফিক ভাইয়ের (মুশফিকুর রহিম) শতরান দেখেছি। (নাজমুল হোসেন) শান্ত ভাই সম্প্রতি দুটি সেঞ্চুরি করেছেন। এছাড়া ঘরোয়াতে আমি সেঞ্চুরি করেছি…।’

সঙ্গে দলের ভেতরে নিজেদের মধ্যে চলা মধুর প্রতিযোগিতা ফারজানাকে উজ্জীবিত করেছে আরও বেশি। সেই গল্পও শুনিয়েছেন তিনি, ‘আমার পাশে যে বসে আছে (জ্যোতি), সে সবসময় আমাকে বলতো, ‘‘পিংকি আপু আমি কিন্তু আগে সেঞ্চুরি করব।’’ আমি সবসময় শুনতাম। কখনও উত্তর দেইনি। আসলে আমার আর ওর পজিশনটা… ক্লাবে বা জাতীয় দলে আমাদের ওপরেই ব্যাটিং করতে হয়। তো আমি সবসময় মনে মনে বলতাম, ‘আচ্ছা! ঠিক আছে। আপনিই কইরেন।’

‘আমার এই সেঞ্চুরির ৭০-৮০ ভাগ হচ্ছে ওর (নিগার) জন্য। কারণ, আমি ওকে দেখানোর জন্য যে, ‘কেউ করতে পারলে আমারই সেই সম্ভাবনা থাকতে পারে।’ নিজের স্কিলের ওপর আমার অনেক বিশ্বাস ছিল। যেহেতু আমি ভালো শুরু পাচ্ছি, যত দূর নেওয়া যায়। দিন শেষে সেঞ্চুরিটা হয়ে গেছে।’ – বলেতে থাকেন ফারজানা।

সেঞ্চুরির বীজ বপণ করা এই ব্যাটারের বিশ্বাস তার পথ ধরে অনেকেই ছুঁয়ে ফেলবে অনন্য এই অর্জন। সেই সামর্থ্য সতীর্থ অনেকেরই আছে বলে জানালেন তিনি, ‘আজকে আমি ভালো খেলেছি বলেই নয়, আমাদের দলে কিন্তু ৪-৫টা ব্যাটার আছে বড় স্কোর করার মতো।’

আর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে কথার ঝাঁপি খুলে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমার এই স্কোর পেরিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য আমার সতীর্থদের আছে। সামনে অচিরেই তারা আমার রেকর্ড ভেঙে দেবে।’

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts