পল্লীসংগীত সম্রাট আবদুল আলীমের ৯৩তম জন্মদিন আজ। অসাধারণ কণ্ঠস্বরের কালজয়ী এই শিল্পী লোকসংগীতকে অবিশ্বাস্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। পল্লীগীতি, ভাটিয়ালি, দেহতত্ত্ব, মুর্শিদি, ইসলামি ইত্যাদি গানের শিল্পী হিসেবে আজও তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই এই শিল্পীর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার তালিবপুর গ্রামে। পেশাগত জীবনে আবদুল আলীম ছিলেন ঢাকা সংগীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক।
তার গানের প্রথম রেকর্ড হয় মাত্র তেরো বছর বয়সে। অর্থনৈতিক অনটনের কারণে কোনো শিক্ষকের কাছে গান শেখার সৌভাগ্য তার হয়নি। তিনি অন্যের গাওয়া গান শুনে গান শিখতেন। আর বিভিন্ন পালা পার্বণে সেগুলো গাইতেন।
১৯৪২ সালে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এলেন। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বালক আবদুল আলীমের কণ্ঠে ‘সদা মন চাহে মদিনা যাবো’ ইসলামী সংগীত শুনে শিশুর মতো কেঁদে ফেলেন। আলীমকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের একমাস আগে আবদুল আলীম কলকাতা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে এলেন। ওই বছরেই ডিসেম্বর মাসে ঢাকা এলেন। পরের বছর ঢাকা বেতারে অডিশন দিলেন। অডিশনে পাশ করলেন। ১৯৪৮ সালের আগস্ট মাসের ৯ তারিখে তিনি বেতারে প্রথম গাইলেন, ‘ও মুর্শিদ পথ দেখাইয়া দাও।’
এরপর পল্লী কবি জসীমউদ্দিনের সঙ্গে আবদুল আলীমের পরিচয় হয়। কবি জসীম উদ্দিন তাকে পাঠালেন জিন্দাবাহার দ্বিতীয় লেনের ৪১ নম্বর বাড়িতে। এক সময় দেশের বরেণ্য সংগীত গুণী শিল্পীরা এখানে থাকতেন। এখানে তিনি প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ মমতাজ আলী খানের কাছে তালিম গ্রহণ করেন। মমতাজ আলী খান আবদুল আলীমকে পল্লী গানের জগতে নিয়ে এলেন।
তার কিছু অবিস্মরণীয় গান— নাইয়া রে নায়ের বাদাম তুইলা, সর্বনাশা পদ্মা নদী, হলুদিয়া পাখী, মেঘনার কূলে ঘর বাঁধিলাম, এই যে দুনিয়া, দোল দোল দুলুনি, দুয়ারে আইসাছে পালকি, কেন বা তারে সঁপে দিলাম দেহ মন প্রাণ, মনে বড় আশা ছিল যাবো মদিনায় ইত্যাদি।
বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’সহ বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রে আবদুল আলীম গান করেছেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রটি হলো ‘লালন ফকির’। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০টির মতো গান রেকর্ড হয়েছিল তার।
যাদুকরী কণ্ঠের অধিকারী আবদুল আলীম জীবদ্দশায় ও মরণোত্তর বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে একুশে পদক, পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার। পাকিস্তান মিউজিক কনফারেন্স, লাহোরে সংগীত পরিবেশন করে আবদুল আলীম পাঁচটি স্বর্ণ পদক পেয়েছিলেন। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে সম্মানিত করে।
এই লোকসংগীত শিল্পী মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তৎকালিন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বিএসএমএমইউ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শিল্পীর স্মরণে আজ বিভিন্ন সংগঠন ও রেডিও টেলিভিশন নানা অনুষ্ঠান করছে। আবদুল আলীম স্মরণে আজ রাত ১১:৩০ মিনিটে এনটিভিতে মিউজিক নাইট (live) অনুষ্ঠান দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শিল্পীর জ্যেষ্ঠপুত্র জহীর আলীম।