রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাত ১০টার পর রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে একসঙ্গে একই মঞ্চে দুই আসামিকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হয়। রায় কার্যকরের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ড. তাহেরের মেয়ে সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ বলেন, আমরা ন্যায় বিচার পেলাম।
তিনি বলেন, ১৭ বছর ৬ মাস, বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারি না, ছুঁয়ে দেখতে পারি না। এটা যে কি কষ্ট আমাদের ভাই-বোনদের বলে বুঝাতে পারবো না। আমার বাবা ড. এস তাহেরকে ২০০৬ সালে যে নির্মমভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করে বাসার পেছনের সেফটিক ট্যাংকের মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছিলো। তার বিচার হলো, ন্যায় বিচার আমরা পেলাম।
তিনি আরো বলেন, আমি মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সকল আইনজীবী যারা মামলাটি এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে, এটর্নি জেনারেল অফিস এবং তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে। প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে যারা নিঃস্বার্থভাবে সহায়তা করেছে। আমরা পরিবার হিসেবে অত্যন্ত একটা সাধারণ পরিবার, বাবাকে তো আর ফেরত পাবো না। সবার কাছে দোয়া চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টার থেকে ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ। একদিন পর ৩ ফেব্রুয়ারি বাসাটির পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় তার মরদেহ। ওইদিন রাতে তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় মামলা করেন। ওই সময় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ। এখন তিনি হাইকোর্টের একজন আইনজীবী।
সেগুফতা বলেন, ‘২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ওই সময় আমার মা যিনি একেবারেই গৃহিণী, কোনদিন আদালতে যাননি তখন তাঁর অবদান ছিলো অনেক বড়। তিনি আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। দৌড়াদৌড়ি করেছেন। আমার ভাই সানজিদ আলভি আহমেদ, যে এ মামলার বাদী তাঁরও বড় অবদান আছে। আমি তখনও আইনের ছাত্রী। আমি আমার শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করতাম কীভাবে ন্যায় বিচার পাওয়া যায়। সে অবস্থায় আমার শিক্ষকেরা খুব সহযোগিতা করেছেন।’
সেগুফতা বলতে থাকেন, ‘আমার পড়াশোনা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই চেম্বারে কাজ করা শুরু করলাম। আমার স্বপ্ন ছিল আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াবো। কিন্তু আমার মনে হলো, বাবা হত্যার বিচার পেতে যদি পিয়ন হওয়া লাগে, আমি হবো। চেম্বারে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে শুরু করলাম। ২০১১ সালে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স চলে এলো। পরের বছর আমি ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করি। আর ২০১৬ সালে হাইকোর্টের আইনজীবী হই। সবকিছুই তখন খেয়াল রাখা সহজ হয়।’
সেগুফতা আহমেদ আরও বলেন, ‘এই মামলা তো পরিচালনা করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আমি সারাক্ষণ অ্যাটর্নি জেনারেল-ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে গিয়ে বসে থাকতাম। সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখতাম। বাবা হত্যার বিচার পেতে হলে আমাদের স্বপক্ষে কী কী প্রমাণ-নথিপত্র লাগবে, সেগুলো জোগাড় করতাম। এভাবে আমি আমার কাজটা চালিয়ে গিয়েছি।’
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ। একদিন পর ৩ ফেব্রুয়ারি বাসাটির পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক এস তাহের আহমেদের গলিত মরদেহ। ওইদিন রাতে তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, পদোন্নতিতে বিরোধিতা করার কারণে অধ্যাপক ড. তাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।