ফল বিপর্যয়ে স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় ফল বিপর্যয়ের কারণে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।

রোববার (৩০ জুলাই) দুপুরে বেলাব উপজেলার সল্লাবাদ ইউনিয়নের সররাবাদ ধনু মাস্টার উচ্চ বিদ্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেন উত্তেজিত এলাকাবাসী।

এসময় এলাকাবাসি প্রধান শিক্ষক আবু হানিফসহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে তারা প্রধান শিক্ষককে ফল বিপর্যয়ের জন্য দায়ী করেন এবং বিদ্যালয় থেকে চলে যাবারও নির্দেশ দেন।

এলাকাবাসি জানান, সররাবাদ ধনু মাষ্টার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১১২ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ৭৫ জন পরীক্ষার্থীই অকৃতকার্য হয়। যার মধ্যে শুধু মানবিক বিভাগেই রয়েছে ৭৩ জন। এমন হতাশা
জনক ফলাফলে এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষক আবু হানিফকে দায়ী করে।

এলাকাবাসির অভিযোগ, আবু হানিফ দীর্ঘ দুই যুগের মতো বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ দীর্ঘসময়ে তিনি বিদ্যালয়ে সৃষ্টি করেন একক আধিপত্য। তার এই আধিপত্যের প্রভাব পড়ে পাঠদানে। যার কারণে এত বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে।

অন্যদিকে বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের কাশিমনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় ২০৪ জন পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয় ৮৪ জন। এর মধ্যে ৬৫ জন শিক্ষার্থীই মানবিক বিভাগের। এ বিদ্যালয়টিতেও দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতির সাথে দ্বন্দ্ব ছিল। শুধু এই দুই বিদ্যালয়েই নয়, বেলাব উপজেলায় এ বছর ২৯টি বিদ্যালয়ের ২ হাজার ৭ শত ২৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ৬০৯ জন পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। যার মধ্যে শুধু মানবিক বিভাগেই অকৃতকার্য হয় ৫২৯ জন।

মানবিক বিভাগে এত বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হবার কারণ অনুসন্ধানে সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কথা হয় শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ- শিক্ষকদের দায়সারা পাঠদান, শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির দ্বন্দ্ব, ক্লাসে কম পড়িয়ে কোচিংয়ে পড়ানোর প্রবণতা ইত্যাদি কারণে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় এত বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে।

সররাবাদ ধনু মাষ্টার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরই উনি মোবাইল বন্ধ করে দেন। এ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য শফিকুল ইসলাম শফু বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার মনগড়া মতো স্কুল পরিচালনা করেন। স্কুলের রেজাল্ট খারাপ হওয়ার জন্য তিনিই দায়ী। বিদ্যালয়ের বই বিক্রির টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। তাছাড়া শিক্ষকরা সময় মতো বিদ্যালয়ে আসেন না। এই প্রধান শিক্ষকের অপসারণ চাই।

বিদ্যালয়টি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফিরোজা হক পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, শিক্ষকদের অবহেলার কারণেই এমনটা হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মতিউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত মোবাইলে আসক্তি ও পড়ার টেবিলে না বসায় রেজাল্ট খারাপ করেছে। তবে কিছু কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির দ্বন্দ্বের কারণও দায়ী।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts