মাহমুদুরের চোখে এখন উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন

আমিরুল ইসলাম: অদম্য ইচ্ছে শক্তি আর আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়েছে প্রতিবন্ধী মাহমুদুর রহমান নেহাত। সে হুইল চেয়ারে বসে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। মাহমুদুরের এই সাফল্যে বাবা-মা, শিক্ষক, সহপাঠীসহ এলাকার সবাই খুশি।

মাহমুদুর রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার খোপাতী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। সে উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের খোপাতী গ্রামের মুরগী বিক্রেতা আব্দুল হান্নান মিয়ার ছেলে।

মাহমুদূর রহমান নেহাত জানায়, তারা দুই ভাই। ছোট ভাই নিয়ামুল পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। নিজেদের কোন জমিজিরাত নেই। এমন কী বাড়ি ভিটা টুকুও নেই তাদের। চাচার দেওয়া এক টুকরা জমিতে তাদের বাড়ি। বাবা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুরগী কিনে এবং সেগুলো ফেরি করে হাট বাজারে বিক্রি করে। এতে যা আয় হয় তা দিয়ে কোন রকমে চলে ৪ সদস্যের সংসার। মাহমুদুর সকলের দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে একটি ভালো কলেজের ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠিত হওয়াসহ পরিবারের অভাব দূর করতে চায়।

মাহমুদুর জানায়, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ আন্তরিকতার সাথে পাঠদানসহ সাধ্যমত সহযোগিতা করেছে। যার জন্য ভালো রেজাল্ট সম্ভব হয়েছে।

মাহমুদুর রহমান জানায়, সে প্রতিদিন ৫/৬ ঘণ্টা করে পড়ালেখা করেছে। আর্থিক অনটনের কারণে বই কিনতে না পেরে বন্ধুদের কাছে বই ধার নিয়ে পড়ালেখা চালিয়েছে। এখন সবার ভালোবাসা আর বিত্তবানদের আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে পড়ালেখা করে অনেক বড় হতে চায় । উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চায় মাহমুদুর।

মাহমুদুরের মা নারগিস পারভীন জানায়, জন্মের পর থেকে পায়ের শক্তি কমে যায় মাহমুদুরের । দুটি পা চিকন হয়ে যায় এবং হাঁটাচলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। বড় হওয়ার সাথে সাথে তার পা দুটি একেবারেই অকেজো হয়ে যায়। এখন সে আর হাঁটাচলা করতে পারেনা। পরে এক হৃদয়বান ব্যক্তি তাকে একটি হুইলচেয়ার প্রদান করেন। এখন তার জীবনের সবকিছু হুইল চেয়ারেই সীমাবদ্ধ। ছেলের স্বপ্ন পূরণের জন্য দোয়া ও আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছেন মা নারগিস।

খোপাতী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই জানান, মাহমুদূর প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এসএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করে ভালো কলেজে ভর্তির স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সে অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। তার বন্ধুদের সহযোগিতায় হুইল চেয়ারে বসে নিয়মিত স্কুল আসতো। অন্যান্য শিক্ষকরা আন্তরিকতার সঙ্গে তাকে পাঠদানসহ সব সময় খোঁজখবর রাখতেন। প্রবল ইচ্ছে শক্তির কারণে পড়ালেখা করে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সরকার ও বিত্তবানদের একটু সহানুভূতি পেলে তার উচ্চ শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন পূরুণ হবে।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts