বাড়ির ছাদে বাগান করলে হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ

বিডিমেট্রোনিউজ বাংলাদেশে শহরাঞ্চলে ইদানিং বাসার ছাদের ওপর গাছ লাগানোর প্রবণতা তৈরি হয়েছে। অনেকেই শাক-সবজি , ফুল-ফলসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশী গাছের বাগান গড়ে তুলছেন বাসার ছাদে। এমনই বৃক্ষ-প্রেমীদের উৎসাহ যোগাতে এবার এগিয়ে এসেছে ঢাকার নগর কর্তৃপক্ষ ।

ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, যেসব বাড়ির ছাদে, বারান্দায় কিংবা আঙিনায় বাগান গড়ে তোলা হবে, সেসব মালিকদের হোল্ডিং ট্যাক্স ১০ শতাংশ মওকুফ করা হবে। অন্যদিকে পরিবেশবিদরা বলছেন এভাবে গাছ লাগানো গেলে ঢাকার তাপমাত্রা বহুলাংশে কমানো সম্ভব।

ঢাকার মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা লায়লা আহমেদ । আড়াই কাঠা জমির ওপর নির্মিত তাদের ছয়তলা ভবনের ছাদটিতে উঠলেই গাছ আর গাছ। টব এবং ড্রামে লাগানো তিনশো ধরনের প্রায় দুই হাজার গাছ আছে। পনেরো বছর ধরে তিনি এই বাগান গড়ে তুলেছেন।

bangla_roof_garden

শখের বাগান গড়ে তুললেও এখান থেকে আয় রোজগারেরও উপায় রয়েছে, জানান মিসেস আহমেদ। তিনি বলেন অনেকেই মনে করে ছাদে গাছ লাগালে ছাদ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু তার ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় বলছেন এই ধারনা ভুল । তিনি বলেন, আমি ১৫/১৬ বছর ধরে যেহেতু করছি কোনও সমস্যায় পড়িনি। একটু পরিষ্কার করে একটু জায়গা বদল করে দিলেই হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র সাঈদ খোকন  বলেন, “আমরা ঢাকা শহরকে সবুজ দেখতে চাই। আমরা গ্রিন সিটি ক্লিন সিটি করতে চাই। আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেটারই অংশ হিসেবে আমি ঘোষণা দিয়েছি বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় কিংবা আঙ্গিনায় বাগান করলে ১০ শতাংশ পর্যন্ত হোল্ডিং ট্যাক্স ছাড় দেয়া হবে”।

সাঈদ খোকন মনে করেন, যেভাবে জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, তাতে পরিকল্পিত সবুজ ঢাকা গড়তে এর বিকল্প নেই। তিনি জানান, পদ্ধতিটি হবে খুব সহজ যাতে ভোগান্তি না হয়। “ যেহেতু আমাদের প্রায় দেড় লাখ হোল্ডিং আছে। এর মধ্যে অসংখ্য অ্যাপার্টমেনট আছে। সব জায়গায় আমার কর্মীবল দিয়ে বাগান সাজিয়ে দেয়া সম্ভব না। যারা বাগান করবেন তারা প্রমাণ দিয়ে এই ট্যাক্স মওকুফের সুবিধা নিতে পারবেন। এই প্রক্রিয়াটা খুব সহজ করা হবে”।

বাড়ির ছাদে বাগান গড়ে তুলতে এখন অবশ্য আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই। বাড়ির গৃহিণীরা যেমন করছেন, বিভিন্ন পেশাজীবীরাও অবসরে এ ধরনের বাগানের পেছনে সময় দিচ্ছেন। তারা আবার একজোট হয়েও বাগান গড়ে তোলার বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ এবং সহযোগিতাও দিচ্ছেন একে অপরকে। ছাদে বাগান করছেন এমন ব্যক্তিরা মিলে গড়ে তুলছেন সংগঠনও।

এমনই সংগঠন ‘আরবান রুফ গার্ডেনার্স সোসাইটি’। এর সভাপতি এহতেশামুল হক মল্লিক নিজে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা। তার দিনের শুরুই হয় ছাদের বাগান পরিচর্যার মধ্য দিয়ে।

“ছাদে বাগান শুরু করি ২০০০ সাল থেকে। পরে দেখলাম অনেক সমস্যা। তখন একটি ওয়েবসাইট তৈরি করি। সেখানে বিভিন্ন পরামর্শ দিতে থাকি। এরপর ব্যাপক সাড়া পাই। এখান থেকে আমরা কলমও বিনিময় করে থাকি”।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলছেন, মূলত ফেসবুককে কেন্দ্র করে এই সংগঠনের যাত্রা । তারা নিজেদের তৈরি বিভিন্ন গাছের কলম, চাড়া সদস্যদের দিচ্ছেন। বিভিন্ন সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাদের বাগান ঘুরেও দেখছেন। তবে এখনও অনেক বাড়ির মালিক বা ফ্ল্যাটবাড়ির বাসিন্দারা মনে করেন ছাদে গাছ লাগালে ছাদ নষ্ট হয়ে যাবে। কোথাও কোথাও বাড়ি ভাড়া দেয়ার সময় গাছ লাগানো যাবে না এমন শর্তও দেন বাড়ির মালিকরা ।

ঢাকার গ্রিন রোড এলাকার একজন বাসিন্দা ইব্রাহিম মুনশি। তাদের ভবনের পাশেই দুটো ছাদেই বিভিন্ন ধরনের গাছের দেখা যায়। কিন্তু মুনশিদের ছাদটিতে গাছ বা টব রাখা নিষেধ। কর মওকুফের ঘোষণার পর তিনি ও তার বাড়ির অন্য বাসিন্দারা বাগান করার বিষয়ে অনেকটাই পজেটিভ।

ইব্রাহিম মুনশি বলেন “আমি মনে করি যারা নিজের বাড়ি তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তটাকে লুফে নেবে। আমরাও আমাদের যারা মালিকরা আছেন তাদের সাথে আলোচনা করে দেখবো এরকম কিছু একটা করা যায় কি-না”।

শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধি নয়, ঢাকার পরিবেশ ও তাপমাত্রা যেভাবে সহনীয়তার মাত্রা হারাচ্ছে, সেক্ষেত্রে ছাদে গাছ লাগানো গেলে তা পরিবেশের ভারসাম্য ধরে রাখতে কাজ করবে। বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর হুমায়ূন কবির ।

তিনি বলেন, ” ঢাকা শহরের গাছপালা যেহেতু অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে গত ২০ বছরে অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তার কুফল কিন্তু আমরা এরইমধ্যে পেতে শুরু করেছি। বিশেষ করে ইদানিংকালের যে প্রচন্ড তাপদাহ পাচ্ছি ছাদটাকে যদি সবুজায়ন করতে পারি তাহলে বিল্ডিং ঠাণ্ডা থাকবে। বৃষ্টিও বেশি হবে। গাছপালা সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড ধরে রাখে। গাছপালা লাগালে সবদিক থেকেই লাভ”।

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষও বাড়ির ছাদে বাগান করার বিষয়কে সামনে রেখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কাজ করছে । সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগকে ইতিবাচক বলছেন নগরের বহু মানুষ। তবে তারা এও বলছেন, শুধু রাজনৈতিক বাহবা কুড়ানোর উদ্দেশ্যে যেন এসব পদক্ষেপ সীমাবদ্ধ থেকে না যায়।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts