বাইশে শ্রাবণ, কবিগুরুর ৮৩তম মহাপ্রয়াণ দিবস আজ

আজ বেদনাময় বাইশে শ্রাবণ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৩তম মহাপ্রয়াণ দিবস।তিনি যেনো বুঝতে পেরেছিলেন শ্রাবণের ভরা বর্ষার মধ্যেই তার জীবনের সমাপ্তি ঘনিয়ে আসবে।

‘আমার দিন ফুরালো ব্যাকুল বাদল সাঁঝে, গহন মেঘের নিবিড় ধারার মাঝে’। বেদনার ডালি নিয়ে সেই বাইশে শ্রাবণ আবারও এসেছে মহাকালের সেই চেনাপথ ধরে। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এইদিনে তিনি কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।

১৯৩০-এর দশক থেকেই রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। জীবনের শেষ চার বছর তিনি বেশ অসুস্থ ছিলেন। ১৯৩৭ সালে তিনি একবার গুরুতর অসুস্থ হন। এর পর কিছুটা সুস্থ হলেও ১৯৪০ সালে তার অসুস্থতা বেড়ে যায়। ১৯৪১ সালে শেষবারের মতো শান্তিনিকেতন থেকে জোড়াসাঁকোর প্রাসাদে চলে আসতে হয় অসুস্থ কবিকে। মৃত্যুর সাত দিন আগেও কবিতা লিখেছেন তিনি।

রবীন্দ্রনাথ প্রয়াত হওয়ার আগেই আমরা তার কাব্যে মৃত্যুর প্রতিধ্বনি শুনেছি বারবার। তিনি মৃত্যুকে বড় গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন মাত্র একচল্লিশ বছর বয়সে প্রিয়তমা স্ত্রীর বিয়োগে। কবি যখন দূরে থাকতেন স্ত্রী মৃণালিণী দেবীকে ‘ভাই ছুটি’ সম্বোধন করে চিঠি লিখতেন। কবির সেই ‘ছুটি’ যখন সংসার জীবন থেকে সত্যিই একদিন ছুটি নিয়ে চলে গেলেন, তার বয়স তখন মাত্র ঊনত্রিশ। কিশোর বয়সে হারান বন্ধুপ্রতিম বৌদি কাদম্বরী দেবীকে।

তিনি মৃত্যু বন্দনায় বলেছেন- ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান। মেঘবরণ তুঝ, মেঘ জটাজুট! রক্ত কমলকর, রক্ত-অধরপুট, তাপ বিমোচন করুণ কোর তব মৃত্যু-অমৃত করে দান।’

কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদাসুন্দরী দেবীর চতুর্দশ সন্তান রবীন্দ্রনাথের জন্ম ১২৬৮ বঙ্গাব্দের পঁচিশে বৈশাখ। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী’ প্রকাশিত হয় ১৮৭৮ সালে। ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘গীতাঞ্জলী’। এই কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

রবীন্দ্রনাথ কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী, গল্পকার- সবগুলো শৈল্পিক গুণের সমন্বিত এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি গানে, কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে, প্রবন্ধে, ছবিতে প্রবলভাবে রয়েছেন আমাদের মাঝে।

রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশ ও ভারত- দু’দেশের মানুষের প্রাণের কবি। তার লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি…` গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। ভারতের জাতীয় সংগীতও তার লেখা।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কবি কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে জমিদারী তদারকিতে ছিলেন। যা বাংলাদেশের এক আলোকোজ্জ্বল অধ্যায়। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন।

রবীন্দ্রনাথ জড়িয়ে আছেন বাঙালির প্রতিটি আবেগ অনুভবে।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts