শিলাইদহ কুঠিবাড়ি ও কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস

কাঞ্চন কুমার: আজ বাইশে শ্রাবণ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। কবির স্মৃতির সঙ্গে মিশে আছে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি। পদ্মাতীরের ছায়াশীতল নিরিবিলি পরিবেশের কারণেই বিশ্বকবি বারবার এখানে ফিরে এসেছেন।

প্রয়াণ দিবসে প্রতিবারই কবির স্মৃতিধন্য এই কুঠিবাড়িতে এক বেলার আলোচনা সভা ছাড়া তেমন কোন আয়োজন থাকে না। এবারও দিনটি নিরবে পালিত হচ্ছে এখানে।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় পদ্মা নদী ঘেঁষে স্বগর্বে দাঁড়িয়ে আছে এই ঐতিহাসিক শিলাইদহের কুঠিবাড়ি। জেলা শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে এটির অবস্থান। কুঠিবাড়িটি প্রায় ১১ একর জায়গার ওপর দাঁড়িয়ে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এই পর্যটনস্থল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা হাজারো দর্শনার্থীর আগমনে দিনভর মুখর থাকে।

এখানে বসেই কবি রচনা করেছেন কালজয়ী সব কাব্যগ্রন্থ, ছোট গল্প, নাটক ও উপন্যাস। যে গীতাঞ্জলি কাব্য রচনা করে কবি নোবেল জয় করেছিলেন, সেই কাব্যের অনেকটাই তিনি রচনা করেছিলেন শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে বসে।

কুঠিবাড়ির দায়িত্বে থাকা কাস্টোডিয়ান আল-আমিন বলেন, আগস্ট মাস শোকের মাস। আপনারা জানেন এই মাসে আমরা জাতির পিতা ও বিশ্বকবি দু’জনকেই হারিয়েছি। কুমারখালী উপজেলা প্রশাসন কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত পরিসরে রোববার (৬ আগষ্ট) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

প্রায় ২২ বছর ধরে কুঠিবাড়ির স্মৃতিবিজড়িত বকুল তলায় সংগীত পরিবেশন করছেন শিল্পী রানু সরকার। পঁচিশে বৈশাখ কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে তার দল নিয়ে তিনি মঞ্চে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন করেন। তবে বাইশে শ্রাবণ কবির প্রয়াণ দিবসে তেমন আয়োজন না থাকায় তার ক্ষোভ রয়েছে। তিনি জানান, প্রয়াণদিবসে হাসি-আনন্দ নাই করলাম কিন্তু দিনটা সরকারিভাবে পালিত হলে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করতো।

রাজশাহী থেকে আসা দর্শনার্থী রাজিবুল ইসলাম বলেন, শিলাইদহে বিশ্বকবির প্রয়াণ দিবস জাতীয়ভাবে পালন না হওয়া দুঃখজনক। এসময় আফরোজা পারভীন নামে আরেক দর্শনার্থী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালনের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।

ঘুরে দেখা গেছে, কবিগুরুর ব্যবহৃত চেয়ার টেবিলসহ নানা আসবাবপত্র ছাড়াও কুঠিবাড়িতে সংরক্ষিত আছে কবির অসংখ্য দুর্লভ স্থিরচিত্র। এখানে আছে যেমন কবিগুরুর নিজ হাতে লাগানো বকুল গাছ, তেমনি কুঠিবাড়ির সবকিছুর সাথেই তিনি মিশে আছেন মনে ও প্রাণে। তারপরও বিশ্বকবির মহাপ্রয়াণ দিবসটি কাটবে নীরবে,এটা কবি প্রেমিকদের কাছে বেদনাদায়ক।

কবি ও গবেষক ইমাম মেহেদী বলেন, বর্তমান প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কতখানি প্রাসঙ্গিক তা নির্ভর করবে রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করার মধ্য দিয়ে। রবীন্দ্রনাথ সার্বজনীন। সুতরাং সংস্কৃতি চর্চা অব্যাহত রাখতে রবীন্দ্রনাথের জন্ম ও মৃত্যু দিবস জাতীয়ভাবে গুরুত্ব সহকারে পালন করা উচিত। এজন্য সরকারের পদক্ষেপের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংস্কৃতিকর্মী ও রবীন্দ্রভক্তদের অংশগ্রহণ এবং উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

দাবি উঠলেও জাতীয়ভাবে প্রয়াণদিবস পালিত না হওয়ার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মন্ডল বলেন, জাতীয়ভাবে কেন কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস পালিত হচ্ছে না এই প্রশ্ন উচ্চ পর্যায়ের, মাঠ পর্যায় থেকে এটা বলা সম্ভব নয়। দাবির কথা আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। জাতীয় পর্যায়ে দিনটি পালন না হওয়ার ব্যাপারে তারাই বলতে পারবেন। তবে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে দিনটি পালন করা হবে।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts