ভালো নেই পানিবন্দি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-বান্দরবান, খাবারের হাহাকার

কক্সবাজারের পেকুয়ায় পানিবন্দি দুর্গত মানুষের মাঝে মঙ্গলবার ত্রাণ দিচ্ছেন নৌবাহিনী সদস্য -আইএসপিআর

 

চারদিকে জল, তবে সুপেয় পানির সংকটে খাবি খাচ্ছে মানুষ। কয়েক দিনের তুমুল বৃষ্টি আর জোয়ারের স্রোতে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ভালো নেই। একইভাবে ধুঁকছে পাহাড়ের তিন জেলা আর সমুদ্র শহর কক্সবাজারও। বিশেষ করে বান্দরবানে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়।

সাধারণত প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে।

এবারের বিপর্যয়ে এমন তৎপরতা চোখে লাগছে না খুব একটা। বিচ্ছিন্নভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু মানুষ বস্তি এলাকায় রান্না করা ও শুকনা খাবার বিতরণ করলেও অনেক অসহায় মানুষকে রীতিমতো না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। ক্ষুধা পেটে অনেক অসহায় মানুষ নিভৃতে কাঁদছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি।

একটু বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় নগরীর চকবাজারের কাপাসগোলা। এবার ভারী বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি তেড়ে আসায় পরিস্থিতি ভয়ংকর চেহারা নেয়। দিনমজুর আবদুস সালামের কাপাসগোলার গলিতে বাস। জলাবদ্ধতায় কাজের ছুটি, তাই রোজগারেও পড়েছে তালা। থইথই পানি ডিঙিয়ে ঘর থেকে বের হওয়ারও জো নেই। দিনমজুর সালাম যেখানে ভাড়া থাকেন, সেই বাসার পাশের ভবনের মালিকের কলেজপড়ুয়া মেয়ে ইরফাত ফাতেমা রিফা জানতে পারেন– না খেয়ে আছে সালামের পরিবার। তখন রিফা তাদের কিছু খাবারের ব্যবস্থা করেন।

ইরফাত ফাতেমা রিফা বলেন, ‘এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি। তাদের অনেকের ঘরে খাবার নেই। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের তরফ থেকে সহযোগিতা করা হয়। এবার এমনটি দেখা যাচ্ছে না। আমি সাধ্যমতো প্রতিবেশীদের খবর নিচ্ছি। আমি তো সবার খাবার ব্যবস্থা করতে পারছি না।’

শুধু চট্টগ্রাম নগর নয়, বন্যাদুর্গত বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলাগুলোতেও একই অবস্থা। কক্সবাজার ও বান্দরবানের বন্যা পরিস্থিতি এখন রীতিমতো ভীতিকর। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় রান্না করে খাবেন– অনেকের এমন অবস্থাও নেই। নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থা বেশি দুর্বিষহ। অনেক মানুষ অনাহার-অর্ধাহারে থাকলেও সেভাবে তাদের খবর নেওয়া হচ্ছে না। সরকারিভাবে যে সাহায্য-সহযোগিতা করা হচ্ছে, তা খুবই কম।

এদিকে প্রবল বর্ষণে যেসব এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের পাশে দাঁড়াতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নির্দেশনা দিলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত নেতাকর্মীর তেমন দৃশ্যমান কার্যক্রম চোখে পড়েনি। একই অবস্থা বিএনপিরও। দলটির তরফ থেকে অভিন্ন নির্দেশনা দেওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে তেমন কোনো তৎপরতা নেই।

ভারী বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়া নগরীর জিইসি মোড়সহ আশপাশ এলাকায় পথচারী ও দুস্থদের মধ্যে গত সোমবার দুপুরে প্যাকেটজাত খাবার বিতরণ করেন যুবলীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু। এ ছাড়া পানিবন্দি কয়েক হাজার পরিবারের কাছে শুকনা খাবার পাঠান সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। গত সোমবার দুপুরে বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের মাধ্যমে মেয়র পানিবন্দি লোকজনকে এ সহায়তা দেন।

হাটহাজারীর শিকারপুর ও বুড়িশ্বর এলাকায় পানিবন্দি মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করে ‘মানবিক বাজার’ নামে একটি সংগঠন। এ সংগঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা এরশাদ সিদ্দিকী জানান, এবারের বন্যায় যেভাবে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেভাবে তারা সহযোগিতা করতে পারছেন না।

নগরীর মতো গ্রামাঞ্চলের মানুষও বন্যার দুর্বিপাকে পড়েছে। তবে তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছেন এমন মানুষ কিংবা সংগঠন খুবই কম। ভারী বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ি ধসে নাস্তানাবুদ বান্দরবান। পার্বত্য এই জেলার সমতলের বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে। শহরে গ্যাসের চুলায় রান্না হলেও গ্রামের প্রায় সব পরিবারে মাটির চুলায় রান্না হয়। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ। তাদের অনেকটা অনাহার-অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে। মানুষের এই বিপর্যয়ে কাছে পাওয়া যাচ্ছে না এলাকার কোনো রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে।

একই হাল কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলাতেও। এখানেও পানিবন্দি লাখো মানুষ। কর্মহীন হয়ে পড়া এবং ঘরে খাবার না থাকায় বিপাকে অনেক মানুষ। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কোনো এলাকায় খাবার বিতরণ করা হলেও তা খুবই সীমিত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চকরিয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য জাফর আহমদের উদ্যোগে সোমবার রাতে বন্যাদুর্গত কিছু মানুষের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts