কে এই মিয়ান আরাফি, দায় নিচ্ছে না কেউ

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায় দিনভর ব্যাপক সহিংসতা ও সংঘাতের পর শনিবার বিকেলে হঠাৎ করেই এক ব্যক্তির আগমন এবং দুই দফা গণমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনাকে ঘিরে রহস্যোর ধ্রুম্রজাল তৈরি হয়েছে।

ওই ব্যক্তি নিজেকে মিয়ান আরাফি বলে পরিচয় দেন এবং নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে দাবি করেন। তবে এই ব্যক্তির বিএনপি কার্যালয়ে যাওয়া এবং বক্তব্য রাখার বিষয়ে দায় নিতে নারাজ দলটি। আর মার্কিন দূতাবাস বলেছে, তাদের কোন প্রতিনিধি সেখানে যায়নি।

দুই দফা গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার সময় কথিত মিয়ান আরাফি বিএনপির সমাবেশে পুলিশ নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে এ বিষয়ে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শনিবার যা হয়েছে তার আগাগোড়া আমেরিকা জানে।

কথিত এই মার্কিন নাগরিক আরও হুঁশিয়ার দেন, বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করার পেছনে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেয়া হবে। এছাড়াও তিনি দেশের রাজনীতি ও সরকার নিয়েও নেতিবাচক কথা বলেন।

তবে বিএনপি বলছে, ওই ব্যক্তি সম্পর্কে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিছুই জানেন না। তার কোনো বক্তব্যের দায় বিএনপি নেবে না।

সন্ধ্যার পর বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে এসে মিয়ান আরাফি গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন। তার দাবি, বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় শিগগির কঠোর ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র। ৩ নভেম্বরের পর আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না বলেও দাবি করেন তিনি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার সন্ধ্যার পর কয়েকটি গণমাধ্যম বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন এবং ওই ব্যক্তির একটি ভিডিও নিয়ে খবর প্রকাশ করে।

ভিডিওতে দেখা যায়, গোলাপী রঙের শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তি ও পাশে বসে আছেন ইশরাকসহ আরো কয়েকজন। সেখানে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনসহ বাইডেনের উপদেষ্টা বলে দাবি করা সেই ব্যক্তিকে ইংরেজিতে কথা বলতে দেখা যায়। মিয়ান আরাফি নামে পরিচয় দেয়া সেই ব্যক্তি বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ আরো অনেক ব্যক্তিকে সমাবেশ পরিস্তিতির বার্তা পাঠিয়েছেন বলে জানান।

একই দিন সন্ধ্যায় এ বিষয়ে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের তথ্য পুরোপুরি অসত্য।’

ইশরাকের সঙ্গে কে এই ব্যক্তি? তিনি কোন দলের হয়ে কাজ করছেন? এমন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র বলেন, ‘ওই ভদ্রলোক যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়ে কথা বলেন না। তিনি একজন বেসরকারি ব্যক্তি।’

বিএনপির কার্যালয়ে বাইরেও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ওই ব্যক্তি। ইশরাক হোসেনের সাথেই মিয়ান আরাফি বিএনপি কার্যালয়ে আসেন।

এদিকে এক বিবৃতিতে মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, মিয়ান আরাফি নামে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধি বাংলাদেশ নেই। মার্কিন দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেন, মার্কিন দূতাবাসের কোনো তৎপরতার বিষয়টি গুজব সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুল।

এদিকে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে দলটি জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব কিছুই জানেন না। দূতাবাস থেকেও তাকে জানানোও হয়নি। মার্কিন ওই নাগরিকের বক্তব্যের দায় বিএনপি নেবে না।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts