দিওয়ালী মানে দীপের উৎসব

দিওয়ালী বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে

 

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শ্যামাপূজা আজ । তারা আজ মঙ্গলময়ী, শক্তিরূপিণী শ্যামা মায়ের পূজার্চনা করবেন।

একই সঙ্গে দীপাবলি উৎসবও আজ। ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বেলে আয়োজন করা হবে দীপাবলি উৎসবের।

দীপাবলী-আলোর উৎসব। অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভ শক্তির বিজয়ের প্রতীক শুভ দেওয়ালি বা দীপাবলী। অন্ধকারকে দূর করে শুভ ও কল্যাণের প্রতিষ্ঠায় এ উৎসব উদযাপন করা হয়।

দিওয়ালী মানে দীপের উৎসব। তাই এর নাম দীপাবলি। আর এই পরবে বাঙালির উপরি পাওনা মা কালীর আরাধনা। আলোর এই পরব বিশ্বজুড়ে প্রায় সকল হিন্দুই মহাসমারোহে পালন করে থাকে। এই উৎসব পালন করে থাকেন জৈন এবং শিখসহ অন্যান্য সম্প্রদায়।

ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশগুলিতেও পালিত হয় দীপাবলি, কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন নামে।

কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিকে হিন্দু ধর্মে বলা হয় দীপাণ্বিতা অমাবস্যা। আমাদের কাছে এই দিনই হল দীপাবলি। আর বাংলায় এই দীপাবলির দিনই করা হয় দেবী কালিকার আরাধনা। শুধু বাংলাতেই নয় দীপাবলি বা দীপাণ্বিতা অমাবস্যার দিন কালী পুজোর চল রয়েছে প্রতিবেশী ওড়িশা রাজ্যেও।

দীপাবলির দিনটি শিখ সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছে পালিত হয় বন্দি চোর দিবস হিসেবে। এই দিন মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন ষষ্ঠ শিখগুরু গুরু হরগোবিন্দ। এবং অতীতে দীপাবলির এই দিনেই অমৃতসরের বিখ্যাত স্বর্ণ মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন হয়। এই দুই কারণে দীপাবলির দিনটি শিখদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র এবং আনন্দের।

আলোর উৎসব শুধু আমাদের দেশেই নয়, পালিত হয় প্রতিবেশী দেশগুলোতেও। মালয়েশিয়ার সেদেশের ক্যালেন্ডারের অশ্বয়ুজা মাসে পালিত হয় হরি দিওয়ালি বা সবুজ দীপাবলি। এই দিন লোকেরা তেলে স্নান করে বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দেন। চলে উপহার আদান প্রদান, আনন্দ উৎসব, শুভেচ্ছা বিনিময় ইত্যাদি।

​থাইল্যান্ডে দীপাবলি পালিত হয় লাম ক্রিয়ং নামে। থাইল্যান্ডের স্থানীয় ক্যালেন্ডারের ১২ নম্বর মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই পরব শুরু হয়। কলাপাতা দিয়ে তৈরি প্রদীপ জলে ভাসানো হয়। লোকজন নিজেদের মধ্যে মিষ্টি উপহার, শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। জলে যেমন প্রদীপ ভেসে উঠে তেমনই আকাশ ছেয়ে থাকে আতস বাজিতে।

নেপালের দীপাবলির পোশাকী নাম তিহার। সেদেশে এই পরব পালিত হয় পাঁচ দিন ধরে। পরবের প্রথম চারদিন যমরাজের পুজো করেন তাঁরা। পঞ্চম দিনটি নেপালের বাসিন্দারা নিজেদের মতো করে আনন্দ পালন করে। তিহার নেপালের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব।

এগুলি ছাড়াও বিশ্বের আরও অনেক দেশে মহাসমারোহে পালিত হয় আলোর উৎসব দীপাবলি। ইন্দোনেশিয়া, মরিশাস, ফিজি, সিঙ্গাপুর এবং শ্রীলঙ্কাতে পালিত হয় এই জমকালো পরব।

উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ শ্মশান দীপাবলী বরিশালে

বরিশাল নগরীতে প্রতিবছরের মতো এবারও উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ শ্মশান দীপাবলী উদযাপিত হয়েছে। শনিবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত হাজারো মানুষ এই শ্মশান দীপাবলী উৎসবে অংশ নেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরিশাল নগরীর কাউনিয়া এলাকায় ২০৬ বছর আগে ৫ একর ৯৫ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় মহাশ্মশান। এ শ্মশানে ৩০ হাজার পাকাসহ মোট সমাধি রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। প্রয়াতদের স্বজন যারা বরিশালসহ সারাদেশে তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করছেন তারা সমাধির পাশে এসে নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের আত্মার শান্তির কামনায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে প্রার্থনা করেন। এখানে গীতা পাঠ করে প্রার্থনা করার সময় অনেকই প্রয়াত স্বজনদের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুরাও আসেন মারা যাওয়া স্বজনদের জন্য প্রার্থনা করতে।

প্রাচীন এই শ্মশান দীপাবলী উৎসবে আগতরা তাদের স্বজনদের সমাধিতে মোমবাতি, প্রদীপ, ধূপ কাঠি প্রজ্বলন করেন এবং সমাধিতে প্রিয়জনের প্রিয় খাবার রাখেন। এ অনুষ্ঠান রোবাবার রাত ১২টা ১ মিনিটে কালীপূজা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হবে।

বরিশাল মহাশ্মশান কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জী কুন্ড বলেন, প্রতি বছর পূর্ব পুরুষের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে দীপাবলীর সময় দেশ ও বিদেশ থেকে ১০-১৫ হাজার মানুষ এখানে আসেন। বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী শ্মশান দিপাবলী উৎসব অনুষ্ঠানে অন্যান্যবারের মতো ভারত, নেপালসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোক সমাগম হয়েছে। প্রিয়জনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে জ্বালানো মোমের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে পুরো শশ্মান।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts