যে ২০ কোম্পানির ওষুধ উত্পাদন বন্ধে নির্দেশ আদালতের

বিডিমেট্রোনিউজ সাতদিনের মধ্যে ২০টি ওষুধ কোম্পানির সকল ধরনের ওষুধ উত্পাদন বন্ধে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালতের এই আদেশ আগামী সাতদিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করে  আদালতের প্রতিবেদন দাখিল করতে স্বাস্থ্যসচিব, সাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও ওষুধ প্রশাসন পরিদফতরের পরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচরপতি সৈয়দ মোহম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এক কে সাহিদুল হকের ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। এদিকে ১৪টি অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
এসকল কোম্পানির ওষুধ উত্পাদন বন্ধের ক্ষেত্রে সাস্থ্যসচিব যে ব্যবস্থা নেবেন তা বাস্তবায়নে পুলিশের আইজি ও র‌্যাবের মহাপরিচালককে আইনি সহায়তা দিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া এসব কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলে কেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে না-এই মর্মে রুল জারি করা হয়েছে।
মানসম্পন্ন ঔষুধ প্রস্তুত না করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় গত ৫ মে ২০টি ঔষুধ কোম্পানির উত্পাদন বন্ধ ও লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। এছাড়া ১৪টি কোম্পানির সব ধরনের এন্টিবায়োটিক (নন-পেনিসিলিন, পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপ) ওষুধ উত্পাদনের অনুমতি বাতিলের আবেদন জানানো হয়েছে।
রিটে বলা হয়, ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভেজাল এবং নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়। এই কমিটির প্রধান করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আবম ফারুককে। উক্ত তদন্ত কমিটি দেশের ৮৪টি ওষুধ কারখানা পরিদর্শন করেন। এর মধ্যে ছিলো নতুন ১৫টি এবং পুরনো ৬৯টি প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ১ ফেব্রুয়ারি কমিটি তাদের প্রতিবেদন সংসদীয় কমিটির কাছে জমা দেয়। প্রতিবেদন দাখিলের পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও ২০টি কোম্পানির ঔষুধ উৎপাদন ও লাইসেন্স বাতিলের জন্য সুপারিশ করে।
এসব কোম্পানি হচ্ছে, এক্সিম ফার্মাসিউটিক্যাল, এভার্ট ফার্মা, বিকল্প ফার্মাসিউটিক্যাল, ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যাল, ড্রাগল্যান্ড লি., গ্লোব ল্যাবরেটরিজ, জলপা ল্যাবরেটরিজ, কাফমা ফার্মাসিউটিক্যাল, মেডিকো ফার্মাসিউটিক্যাল, ন্যাশনাল ড্রাগ, নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যাল, রিমো কেমিক্যাল, রিদ ফার্মাসিউটিক্যাল, স্কাইল্যাব ফার্মাসিউটিক্যাল, স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল, স্টার ফার্মাসিউটিক্যাল, সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যাল, টুডে ফার্মাসিউটিক্যাল, ট্রপিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল এবং ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড।
রিটে বলা হয়, বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামতে বলা হয়েছে, এসব কোম্পানির কারখানা জিএমপি নীতিমালা অনুসরণ করে মানসম্পন্ন ঔষুধ উত্পাদনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ ঔষুধ উত্পাদনকালে জিএমপি নীতিমালা অনুসরণ না করলে উত্পাদিত ঔষুধ মান সম্পন্ন হয় না। ফলে ব্যবহারকারীর অসুখ না সেরে বরং শরীরে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। যার কারণে প্রাণহানি ঘটতে পারে। তাই এসব ঔষুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য সার্বিক বিবেচনায় পরিত্যাজ্য। বিশেষজ্ঞ কমিটির এই মতামত দেয়ার পরেও আজ পর্যন্ত সরকার এসব কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে মানহীন ঔষুধ ব্যবহারের কারণে নাগরিকের প্রাণহানির সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে গেছে।
Print Friendly, PDF & Email

Related Posts