শরীর জুড়েই তার টিউমারের ছড়াছড়ি

 

খান মাইন উদ্দিন, বরিশাল: গত ১জুন বরিশাল চরকাউয়া খেয়াঘাট নদী পারাপার হওয়া যাত্রীদের কাছে ভিক্ষা চাচ্ছিলেন একজন অসুস্থ্য ব্যক্তি। শরীর জুড়েই তার টিউমারের ছড়াছড়ি। কেউ তাকে কাছে যেতে দিচ্ছিল না। ২০মিনিট দাঁড়িয়ে দেখলাম।

বৃষ্টিতে ভিজে ভিক্ষা করছেন তিনি। একজনের কাছে ভিক্ষা চাইতে গিয়ে তার শিশুর শরীরে হাত দেয়। সাথে সাথে শিশুটির বাবা তাকে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে দেন।

বিষয়টি দেখে কাছে গিয়ে লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন অসুস্থ্য লোকটি বলে, আমার নাম একরাম মিয়া (৬০)। বাড়ি পিরোজপুর।

তিনি জানান, শরীরে প্রথমে একটি টিউমার উঠে। তখন অপারেশেন করে ফেলে দেয় ডাক্তার। ঠিক ১বছর পর শরীরে শত শত টিউমার উঠে। নিজের জমি বিক্রি করে ২ বার অপারেশন করেছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। রাতদিন শরীরের জ্বালা, যন্ত্রণায় খুব কষ্ট হয়। শরীরে টিউমার উঠার কয়েক বছর আগে বিয়ে করেছি। সেই ঘরে তিনটি ছেলে সন্তান রয়েছে। ওরা খুব ছোট এখনো। আমার চিকিৎসায় বাড়ি, জমিজমা বিক্রি করে দিয়েছি। সংসার চালানোর  মত ক্ষমতা নেই আমার।

তবে প্রতিদিন ভিক্ষা করে শরীরের যন্ত্রণার জন্য ২/৩শ টাকার ওষুধ কিনে খাই। মানুষ আমাকে দেখে মাটিতে থু থু ফেলে। আবার কেউ ভিক্ষা না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। চর কাউয়ার একজন বৃদ্ধা মহিলা তার জমিতে আমাকে পলিথিন দিয়ে ছোট ঘর তুলে দিয়েছে। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে সেই কুড়ে ঘরে থাকি। আমার স্ত্রী সন্তানরা গ্রামে থাকে। কাজ করার মত ক্ষমতা নেই আমার। তাই ভিক্ষা করে  সংসার ও নিজের ওষুধ চালাতে হয়।

তিনি আরো জানান, ডিসি কার্যালয় সাহায্যের জন্য আবেদন নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার শরীরে টিউমার দেখে ২টি লোক ভিতরে ঢুকতে দেয় নাই। কথাগুলো বলার সময় জলে ছলছল করে ওঠে একরাম মিয়ার চোখ। তার কথা গুলো শুনে আমারও চোখে পানি এসে যায়।

Print Friendly

Related Posts