দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজন ৪টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন

প্রকৌশলী মো. খলিলুর রহমান

কারিগরি শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ; শব্দ দুটি সমার্থক মনে হলেও শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ শব্দ দুটি সমার্থক নয়। আমরা সবাই জানি; শিক্ষা হলো- সার্বিক দক্ষতা উন্নয়নের জন্য এবং প্রশিক্ষণ হলো- পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য।

তাইতো পৃথিবীর প্রতিটি দেশে- কারিগরি শিক্ষা; শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে। অন্যদিকে কারিগরি প্রশিক্ষন; প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় অথবা মানব সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে।

প্রতিটি দেশে কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সনদায়নের জন্য যেমন কারিগরি শিক্ষা বোর্ড রয়েছে। তেমনি কারিগরি প্রশিক্ষনের মান উন্নয়ন ও সনদায়নের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন বোর্ড বা এইচআরডি সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে কারিগরি প্রশিক্ষণের অথবা দক্ষতা উন্নয়নের জন্য আলাদা কোন বোর্ড/ সার্ভিস সেন্টার নেই। যার ফলে বাংলাদেশের দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম ধীর গতি সম্পন্ন।

দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার জন্য ৪টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। যা নিম্নরূপ-

(ক) যোগ্যতা কাঠামো রি-ডিজাইন করন।

ফিলিপিন, শ্রীলংকা ও অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশের যোগ্যতা কাঠামোতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের নীচে দক্ষতা উন্নয়ন লেভেল সংখ্যা- ৪টি রয়েছে। বাংলাদেশের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের নীচে (৫+২)=৭টি লেভেল রয়েছে। বিদেশে লেভেল- ১ ও ২ পূর্ব অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি হিসাবে (জচখ) সনদ প্রদান করা হয়। শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান থেকে লেভেল ও অকুপেশন অনুযায়ী লার্নিং কন্টেন্ট সংগ্রহ পূর্বক প্রতিষ্ঠানের সময়সূচী অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে থাকে। লেভেল- ৩ ও ৪ এর জন্য শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে ৬ মাস থেকে ১ বছরের জন্য প্রশিক্ষন গ্রহন করে থাকে।

Untitle-1

অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা যেখানে ১ বছরের মধ্যে ৪টি লেভেল পাস করতে পারে। বাংলাদেশে সেখানে ৫টি লেভেলের জন্য ন্যুনতম ২.৫ বছর সময় প্রয়োজন। তাই দক্ষতা উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করার স্বার্থে প্রস্তাবিত যোগ্যতা কাঠামো সুবিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হলো।

(খ) এইচএসসি (ভোক) রি-ডিজাইন করন।

আমরা জানি, উচ্চতর দক্ষতা; উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের সহায়ক। তাই উচ্চতর দক্ষতা অর্জনের  লক্ষে প্রবর্তিত HSC (Voc) এর শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম হওয়ার প্রধান কারণ : ভর্তি যোগ্যতা ও টেকনিক্যাল বিষয় সংখ্যা।

এক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও বানিজ্য শাখার ন্যায় ভোকেশনাল শাখায়ও ৩টি আবশ্যিক বিষয়ের সাথে ৪টি টেকনিক্যাল বিষয়কে সংযুক্ত করা যায়। তাছাড়া ডিপ্লোমা ইনজিনিয়ারিং এ ভর্তির সুযোগের ন্যায়, HSC (Voc) এ সকল শাখার ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির সুযোগ রাখা হলে উচ্চতর দক্ষতা অর্জনের পথ সবার জন্য সুগম হবে।

(গ) দক্ষতা উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠাকরণ।

বাৎসরিক উদীয়মান ২৫ লক্ষাধিক শ্রমশক্তিকে দেশ-বিদেশের কর্ম-উপযোগী দক্ষ-জনশক্তিতে রূপান্তরের লক্ষে ২৩টি মন্ত্রনালয় বা বিভাগ, দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। উক্ত কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার স্বার্থে কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের ন্যায় আলাদাভাবে দক্ষতা উন্নয়ন বোর্ড বা মানব সম্পদ উন্নয়ন সেবা কেন্দ্র (HRD Service centre) প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে NSDA উদ্দ্যোগ নিতে পারেন।

(ঘ) কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষকদের প্রতিটি পদে ১টি বেতন স্কেল নির্ধারন করন।

দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (টিটিসি) এর শিক্ষকদের তিনটি পর্যায়ক্রমিক প্রশিক্ষক পদে একই বেতন গ্রেড (১০ম গ্রেড) রয়েছে। যেমন : চীফ ইন্সট্রাক্টর-১০ম গ্রেড, সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর-১০ম ও ১১তম গ্রেড এবং ইন্সট্রাক্টর -১০ম ও ১৪তম গ্রেডভুক্ত। পর্যায়ক্রমিক একাধিক পদে একই বেতন গ্রেড এবং একই পদে একাধিক বেতন গ্রেড থাকায় শিক্ষকদের নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়া দীর্ঘ ২৪ বছর যাবৎ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

উল্লেখ্য- বাংলাদেশ সরকার ১৯-১১-১৯৯৪ খ্রি. তারিখে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন স্কেলসমূহ আপগ্রেড করে ১০ম গ্রেড নির্ধারণ পূর্বক ২য় শ্রেণির গেজেটেড পদ মর্যাদা প্রদান করেছেন।

ফলে টিটিসি-তে কর্মরত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার প্রশিক্ষকদের ০৩টি পদেই ১০ম গ্রেড ও গেজেটেড পদ মর্যাদা সৃষ্টি হয়েছে। উক্ত আদেশ বলে অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টসমূহ নিয়োগবিধির বেতন গ্রেডসমূহ সংশোধন করলেও বিএমইটি’র প্রশিক্ষকদের নিয়োগ বিধির বেতন গ্রেড সংশোধন না হওয়ায় একই পদে একাধিক বেতন স্কেল রয়ে গেছে।

এক্ষেত্রে চীফ ইন্সট্রাকটর পদ- ৯ম গ্রেড, সিনিয়র ইনস্ট্রাকটর পদ- ১০ম গ্রেড ও ইন্সট্রাকটর পদ- ১২তম গ্রেড নির্ধারণ পূর্বক অফিস আদেশ জারী করা গেলে জনবল সমন্বয়পূর্বক সহস্রাধিক শুন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ করা সম্ভব হবে এবং দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে।

উল্লেখ্য- প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন বিএমইটি থেকে প্রকাশিত “ইন্টারন্যাশনাল জব মার্কেট ডিমান্ড এনালাইসিস- ২০১৮” বই এর অনুচ্ছেদ ৬.৬ (আলোচনা) ও ৬.১০ (সাজেশন) এ দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক অনুরূপ ১০টি সাজেশন দেয়া হয়েছে।

প্রকৌশলী মো. খলিলুর রহমান: সাবেক পরিচালক (প্রশিক্ষন পরিচালনা), বিএমইটি

Print Friendly

Related Posts