ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের ছোঁয়ায় ঘুচে গেল রানার বেকারত্ব

জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ: বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে আমি। আমার বাবা ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আমার তিন বোন। আমি সবার ছোট। বাবা একা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। এমন অবস্থায় আমাকে সংসারের ভার নিতেই হবে। তখন আমি বিএসএস অনার্স (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) ২য় বর্ষের ছাত্র (সরকারি দেবেন্দ্র বিশ্ব: কলেজ)। বেকার অবস্থায় ঘুরছিলাম কি করবো। কোন রকমে জীবন যাপন করছিলাম। সেই ২০১০ সালে নভেম্বর মাসের ঘটনা। আমি ২০০৭ সালে এইচএসসি পাশ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার্স ট্রেনিং সেন্টারে ৬ মাস মেয়াদি কম্পিউটার প্রশিক্ষন নেই।

প্রশিক্ষণ শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অন্যতম সফল প্রকল্প এটু আই এর অধীনস্থ আটিগ্রাম ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে যোগ দেয়। যেদিন ডিজিটাল সেন্টারে প্রথম বসলাম সেদিন আমার আয় ছিল মাত্র ১০ টাকা। তেমন লোকজন আসতো না। আমি কয়েকশত লিফলেট ছাপালাম যেগুলা ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ন স্থানে নিজেই লাগালাম ও মাইকিং করিয়ে সেবা সমূহ জনসাধারনকে জানালাম। প্রতিটা স্কুল,মাদ্রাসার সামনে লিফলেট লাগালাম এবং স্যার দের ও ছাত্রছাত্রীদের সেবা নেওয়ার জন্য তথ্য ও সেবা কেন্দ্রে আসতে বললাম। ব্যাস শুরু হয়ে গেলো আমার জীবনযাত্রা। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন রানা।

এরপর মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন, সদর উপজেলা প্রশাসন, আটিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নূর এ আলম সরকার ও ইউপি সচিব সহ সকলের সহযোগিতায় সফলতার দিকে আগাতে থাকলাম। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রতিটা ওয়ার্ড সভায়, ভিজিডি, ভিজিএফ চাউল বিতরনের সময় ইউনিয়নের জনসাধারনের কাছে ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র (বর্তমানে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার) এর সেবা স্বল্প মুল্যে নিতে আসতে বলেন। সকলের সহযোগিতায় আমার ডিজিটাল সেন্টাারের কাজের বিস্তৃতি অনেক বেড়ে যায়। ইনশাআল্লাহ আমার আয় ও এখন অনেক ভাল। আমি আরো দুটি ডিজিটাল সেন্টার করার জন্য পরিকল্পনা করেছি।

এদিকে কাজের ভাল মান দেখে এটুআই এর প্রতিনিধি দল থেকে একাধিকবার আটিগ্রাম ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিদর্শন করে গেছেন। এ ডিজিটাল সেন্টারে সরকার পক্ষ থেকে অপটিক্যাল ফাইবার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রানা জানান, প্রতিমাসে প্রায় ১৩০০-১৫০০ গ্রাহক আমার কাছে বিদ্যুৎ বিল দিয়ে থাকেন। প্রতি বিলে ১০ টাকা আমার আয় থাকে। যেটা দিতে আগে ব্যাংকে যেতে হতো।
আমি নিজে ৩ টি কম্পিউটার কিনে পরিষদের ২ টি মোট ৫ টি কম্পিউটার নিয়ে ডিজিটাল সেন্টারের পাশেই একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার দেই। বর্তমানে আমার কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে কম্পিউটারের সংখ্যা ৭। যেখানে অনেক বেকার ছেলে মেয়েরা কম্পিউটার প্রশিক্ষন নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ন পদে চাকুরী করছেন। আমার এখান থেকে প্রায় তিনশর বেশি ছেলে মেয়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষন নিয়েছে।

কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে রানা বলেন, ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে তথ্য ও প্রযুক্তি সেবা মানুষের দোড় গোড়ায় পৌছে গেছে। একদিন রাজনগর গ্রামের আমিনুর নামের এক বড় ভাই আমার ডিজিটাল সেন্টার থেকে পাসপোর্টের ব্যাংক ড্রাফট ও অনলাইনে পাসপোর্টের ফরম পূরন করে নেন এতে তিনি অনেক খূশি। মানুষের এতে করে সময়ও বাচঁলো টাকাও বাচলো। এরকম শতশত ঘটনা আছে। এই ইউডিসিতে প্রায় ১০০ টি’র বেশি অনলাইন-অফলাইন সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। এখন আল্লাহর রহমতে আমি একজন সফল উদ্যোক্তা।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রাম সারাদেশে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে দশ হাজারের বেশি উদ্যোক্তার মধ্যে ৩০০ জন উদ্যোক্তাকে দেশসেরা স্বীকৃতি দিয়েছেন। তার মধ্যে আনোয়ার হোসেন রানা একজন।

Print Friendly

Related Posts