হোটেল-রেস্তোরায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শতভাগ বাস্তবায়ন দাবি

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ হোটেল-রেস্তোরায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের শতভাগ বাস্তবায়ন ও আইনের দুর্বল দিক সংশোধনের দাবি জানিয়েছে এভিয়েশন ও ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (এটিজেএফবি)।

মঙ্গলবার (২১ জুলাই) বেলা ১১.৩০ মিনিটে এভিয়েশন ও ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ এবং ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের যৌথ উদ্যোগে “ঢাকা শহরের রেস্তোরায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের চিত্র পর্যবেক্ষণ জরিপের ফলাফল ও গণমাধ্যমের ভূমিকা” শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়।

সভায় অংশ নেয় ফোরামের সদস্যবৃন্দ ও বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ।

সভা পরিচালনা করেন ও সভার উদ্দেশ্য তুলে ধরেন এভিয়েশন ও ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের সভাপতি ও এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক নাদিরা কিরণ।

তিনি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রনয়ণ, বাস্তবায়ন ও সংশোধনে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর হোটেল, রেস্তোরা, পর্যটন কেন্দ্র এগুলো বিনোদনের জন্য এবং এসকল স্থানে জনসমাগমও বেশি। তাই এসকল সেক্টরকে তামাকমুক্ত রাখা প্রয়োজন। তামাকমুক্ত রাখতে জনসচেতনা বৃদ্ধি ও আইন বাস্তবায়নে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষনে গণমাধ্যম অতীতেও কাজ করেছে এবং ভবিষ্যতে আরো সক্রিয় হয়ে কাজ করবে।

সভায় জরিপের ফলাফল তুলে ধরে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সহকারি পরিচালক ও তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো: মোখলেছুর রহমান।

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন কর্তৃক জুন’২০১৯-এ ‘ঢাকা শহরের রেস্তোরায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা’ যাচাইয়ের জন্য জরিপটি পরিচালিত হয়। এই জরিপের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা শহরের রেস্তোরায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থার পর্যবেক্ষণ ও আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সরকার, প্রশাসন, রেস্তোরা কর্তৃপক্ষ, মালিক সমিতি, গনমাধ্যমসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কাছে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রতিপালনের প্রমাণভিত্তিক তথ্য সরবরাহ করা।

জরিপটি পরিচালিত হয় ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার মোট ৩৭১টি (উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২১১টি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৬৬টি) রেস্তোরায়। যার মধ্যে ২৪৫টি রেস্তোরার ট্রেড লাইসেন্স আছে আর বাকী ১২৬টি রেস্তোরার কোন ট্রেড লাইসেন্স নেই। এই ৩৭১টি রেস্তোরার ৯৮%-এ সামগ্রিক ভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন (ধূমপানমুক্ত না রাখা এবং এ সংক্রান্ত নোটিশ প্রদর্শন না করাসহ আইনের অন্যান্য ধারা) লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে। আরো দেখা গিয়েছে যে ৩৪% রেস্তোরায় ধূমপানের সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যায়, ১৭.৩% রেস্তোরায় সরাসরি ধূমপানের দৃশ্য দেখা যায়; ২৯.৪ % রেস্তোরায় সিগারেটের উচ্ছিষ্ট অংশ/ছাঁই দানি পাওয়া গিয়েছে এবং ২.৬% রেস্তোরায় ধূমপানের গন্ধ পাওয়া গিয়েছে।

অন্যদিকে, ৯৮% রেস্তোরায় আইন অনুযায়ী সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি এবং ৯২% রেস্তোরায় কোন ধরনের সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি। ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আইন লঙ্ঘনের হার যথাক্রমে ৩৩.২% ও ৩৫.৬%।

এছাড়াও আরো দেখা গিয়েছে যে, প্রায় ৪০% ট্রেড লাইসেন্স বিহীন রেস্তোরায় আইন বাস্তবায়িত হচ্ছে না যেখানে প্রায় ৩১% লাইসেন্স প্রাপ্ত রেস্তোরায়ও একই চিত্র উঠে আসে। তবুও লাইসেন্সবিহীন রেস্তোরার থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত রেস্তোরায় আইন বাস্তবায়নের চিত্র কিছুটা হলেও ভাল।

উল্লেখ্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, “২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ তামাকমুক্ত হবে”। অন্যদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যেটন মন্ত্রণালয় গত বছর হসপিটালিটি সেক্টরে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে একটি কৌশলপত্র প্রনয়ণ করে। যেখানে বলা হয়েছে যে, হসপিটালিটি সেক্টরের অধিন সকল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের কথা ও দিক নির্দেশনা।

Print Friendly

Related Posts