চাই জাতীয় নগরায়ন নীতিমালা

প্রত্যয় জসীম

আজ বিশ্ব বসতি দিবস। সকলের জন্য আবাসন নিশ্চিতকরণসহ বাসযোগ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘ বিশ্ব বসতি দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশ্বে অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব বসতি দিবস উদযাপিত হয়।

দ্রুত নগরায়নের ফলে বাংলাদেশের মতো উন্নয়ন অভিমুখি দেশের নগরীসমূহের বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও বড় বড় শহরের পাবলিক স্পেসগুলো ক্রমশ কমে আসছে। কোথাও কোথাও বেদখল হয়ে যাচ্ছে। উন্নত নগর উন্নত জীবন গড়তে হলে একটি উন্নত আধুনিক নগরায়ন নীতিমালা নিশ্চিত করতে হবে।

১৯৫০ সনে বিশ্ব জনসংখ্যার শতকরা মাত্র ৩০ ভাগ ছিলো নগরবাসী। ১৯৯৫ তে এ হার হয়েছে শতকরা ৪৫ ভাগ। ধারণা করা হচ্ছে বর্তমান শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের দু’ভাগ (প্রায় ৬শ’ কোটি মানুষ) নগরসমূহে বসবাস করে। উন্নয়নশীল বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যেমন বেশি তেমনি নগরবাসী মানুষের সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান। ফলে আগামী তিন দশকে বিশ্বের নগরবাসী মানুষের হিসেবের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল বিশ্ব এগিয়ে থাকবে।

বাংলাদেশের সর্বমোট ৫২২ টি শহর ও নগরে জনসংখ্যার প্রায় ২৩.৩৯ ভাগ বসবাস করে। দেশের মোট নগর জনসংখ্যা প্রায় ২৯ মিলিয়ন। নগর জনসংখ্যার দেশব্যাপী বিভাজন অত্যন্ত অসম। বাংলাদেশের নগর জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী এই চারটি প্রধান নগরে বসবাস করে। বাকী ৪০ ভাগের বসবাস মাঝারি ও ছোট ছোট শহরগুলিতে। ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা প্রায় ১৫ মিলিয়ন। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ৪ মিলিয়নের বেশি। তৃতীয় বৃহত্তম শহর খুলনার জনসংখ্যা প্রায় এক মিলিয়নের মতো। চতুর্থ জনবহুর শহর রাজশাহীর জনসংখ্যা প্রায় সাত লাখ। দেশে লক্ষাধিক জনসংখ্যার শহর আছে ১৭টি। ৫০ হাজার থেকে এক লাখ জনসংখ্যার শহর প্রায় ৩০টির মতো। ১৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার জনসংখ্যার শহর আছে প্রায় ৮০ টি এবং ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার জনসংখ্যার শহর আছে ৩৯০টির মতো।

নগর জনসংখ্যার এই অসামঞ্জস্য বিস্তার ভারসাম্যহীন নগরায়নের পরিচয় বহন করে। অপর দিকে নগর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সব শহরে সমান নয়। যেখানে নগর জনসংখ্যার জাতীয় বৃদ্ধির হার ৩.৫ শতাংশ, সেখানে শুধুমাত্র ঢাকার জনসংখ্যা বাড়ছে ৫ শতাংশেরও অধিক হারে। একাধিক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় জনসংখ্যা বিস্ফোরণের ফলে ২০২০ সাল নাগাদ ঢাকা হবে পৃথিবীর ১০টি জনবহুল নগরীর একটি। তখন জনসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ।

১৯৯৬ সালে হ্যাবিটাট-২ মহাসম্মেলন থেকে জাতিসংঘ “একবিংশ শতাব্দির জন্য বাসযোগ্য নগর” গড়ার বিশ্বব্যাপী আহবান ও দিকনির্দেশনা প্রদান করলেও উন্নয়নশীল দেশসমূহ তা অর্জনে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশের শহর ও নগরসমূহে কর্মসংস্থান ও আবাসন কার্যক্রমসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই নগর উন্নয়ন কর্মসূচিসমূহ জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠেছে। উদাহরণ হিসেবে আবাসন, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, পয়নিষ্কাশন, শিল্প উন্নয়ন, ব্যবসা বাণিজ্য, কমিউনিটি অর্থাৎ গণসুবিধাদি পরিবহণ এবং পরিবেশ ইত্যাদি বিভিন্ন পৌর উপাদান সমূহের কথা উল্লেখ করা যায়। এ সকল পৌর-উপাদান সমূহের সঠিক সমন্বয় ও বাস্তবায়নের মধ্যেই নিহত রয়েছে নগর উন্নয়ন কর্মসূচির সার্থকতা আর এ সার্থকতাই নিশ্চিত করতে পারে একটি নন্দিত ও নিরাপদ নগর, তাতেই নিহত রয়েছে উন্নত ও সুন্দর জীবন যাপনের হাতছানি।

বাংলাদেশের নগরাঞ্চলে ভূমি ব্যবহার ও বসতি স্থাপনের নীতিমালার অভাবে নগরগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে এবং অপরিকল্পিতভাবে নগর সম্প্রসারণ হচ্ছে। এক্ষেত্রে ঢাকা মহানগরী এগিয়ে আছে। অপরিকল্পিত নগর কখনোই নিরাপদ নয়। এই প্রেক্ষাপটে “উন্নত নগর উন্নত জীবন” বিষয়টি তাৎপর্য অত্যন্ত ব্যাপক।

উন্নত নগর উন্নত জীবন বাস্তবায়নে নিম্নলিখিত পাঁচটি কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

*জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন
*মানব সম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ
*স্থিতিশীল অর্থনৈতিক সুযোগ সমূহকে উৎসাহিত করা
* রাজনৈতিক অন্তর্ভূক্তি বৃদ্ধিকরা
*সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড অন্তর্ভূক্ত করা

উন্নত নগরীর অনুসঙ্গ সমূহ

একটি নগর গড়ে উঠার পেছনে যেমন অনেকগুলো কারণ বিরাজমান তেমনি সেই নগরীর সম্প্রসারণ, কর্মকান্ডের পরিব্যাপ্তি ও আকর্ষণ ক্ষমতা তথা উন্নত নগরায়ন আনেকগুলো অনুসঙ্গের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত; অন্যতম কিছু ধারণা হলো-

* নগরের ভৌগোলিক অবস্থান
* প্রাকৃতিক পরিবেশ
* জনসংখ্যার আকার ও সামাজিক পরিবেশ
* অর্থনৈতিক অবস্থা
* কর্ম সংস্থানের সুযোগ
* ভৌত ও সেবা সুবিধাদি এবং নগর পরিকল্পনা
* বসতি বিন্যাস ও গৃহায়ণ পরিস্থিতি
* যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা
* আইন শৃঙ্খরা পরিস্থিতি
* নগর ব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্ঠ বিভিন্ন নীতিমালার প্রয়োগ ইত্যাদি।

ভৌগোলিক অবস্থান

বাংলাদেশের নগরগুলোর ভৌগোলিক অবস্থান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রায় প্রতিটা নগরই প্রশস্থ ও প্রচলিত স্থল ও জলপথের ওপর বা সংযোগ কেন্দ্রে অবস্থিত। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে নগরগুলোকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, খরা, শৈত্য প্রবাহ, ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতি বছরই মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তদুপরি আবহমান কালের প্রবাহমান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার অসাভাবিক পলিজমাসহ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নদ নদীসমূহের নব্যতা ও গতি পরিবর্তনের প্রভাব প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। তাছাড়া নগরসমূহের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নেমে যাচ্ছে। ফলে নগর তথা দেশের স্থিতিশীল আর্থসামাজিক উন্নয়ন অর্জনে বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে।

সামাজিক পরিবেশের প্রভাব

বাংলাদেশ বর্তমান দ্রুত নগরায়নের প্রেক্ষাপটে ছোট বড় প্রায় সকল শহর-নগরে বিভিন্ন প্রকার পৌর সুযোগ সুবিধার ব্যাপক ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর মধ্যে সবচাইতে ভয়াবহ পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায় ঢাকা মহানগর।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ঢাকা মহানগরের প্রাকৃতিক খাল বিল ভরাট করে মহানগর সম্প্রসারণ হচ্ছে। ঢাকায় যে পরিমাণ উন্মুক্ত সবুজ প্রান্তর থাকার কথা ছিল তা না রেখে তাৎক্ষণিক লাভজনক নির্মাণ কাজ সকলে লিপ্ত। এই মহানগরীতে এখন উন্মুক্ত কোন প্রান্তর খুজে পাওয়া যায় না। একটুখানি ফাঁকা পেলেই সেখানে নির্মিত হয় বড় বড় দালনকোঠা। ঢাকা শহরের উপর অপ্রতিরোধ্য যাবতিয় বিষয়ের চাপ কমানোর জন্য অচিরেই বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন।

পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেবা সুবিধার যেমন- যোগাযোগের রাস্তা, আবাসিক ও বাণিজ্যক সুযোগ-সুবিধা, কর্মসংস্থান, বিনোদন, উন্মক্ত প্রান্তর, জলাভূমিসহ বিদ্যুৎ, গ্যাস, পয়ঃনিস্কাশন এবং সুপেয় জলের অবাধ সরবরাহ সুচিন্তিত ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার পর বাসোপযোগি করে গড়ে তোলা হয়। সে তুলনায় ঢাকা মহানগরে প্রয়োজনীয় সেবা সুবিধাদির অপর্যাপ্ততা সত্ত্বেও দ্রুত গতিতে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত দালানকোঠার সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং পয়ঃনিষ্কাশনসহ রাস্তাঘাটের সুবিধা যা আছে তাই, এর কোন পরিবর্তন লক্ষণীয় নয়। ফলশ্রুতিতে ঢাকা মহানগর দৈব-দুর্বিপাকের শহরে পরিণত হচ্ছে।

দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন কৌশল প্রণয়ণ

যেকোন নগরই একটি পরিকল্পনা বা মহাপরিকল্পনার ভিত্তিতে গড়ে উঠে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ বিভিন্ন নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এলজিইডিসহ বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা সমূহের প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বই হচ্ছে সুষ্ঠুরূপে নগর ও শহরের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাস্তাবয়ন করা।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসুচি পর্যালোচনায় দেখা যায় ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন সেক্টর ১০টি মন্ত্রণালয় /বিভাগের আওতায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পসমূহের মধ্যে উপজেলা ও জেলা শহরের আবকাঠামোগত ও স্ট্রাকচার পরিকল্পনা প্রণয়ন, স্বপ্ন আয়ের লোকদের আবসন সুবিধা প্রদান, ছিন্নমূল বস্তিবাদিদের পুর্নবাসন, সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য আবাসন ও অফিস ভবন নির্মাণ, বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ফ্লাইওভার ও রাস্তাঘাট নির্মাণ, মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থান ও স্মৃতিস্তম্ভ সংরক্ষণ, ঢাকা শহরের হাতির ঝিলের সৌন্দর্য বর্ধ্বন ও সমন্বিত উন্নয়ন ইত্যাদি অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক এডিপি ও অন্যান্য দাতা সংস্থার আর্থিক সহায়তায় পৌরসভায় নগর পরিকল্পনা অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয় আসছে। বিশ্ব ব্যাংকের/ আইডিএর আর্থিক সহায়তায় মাঝারি শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। তাছাড়া ডিএফআইডি ও ইউএনডিপি এর অর্থায়নে নগর অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাসকারণ প্রকল্প এবং এডিবি, কানাডিয়ান সিডা, জেবিআইসি এর অর্থায়নে ইমারজেন্সি ডিজিস্টার রিহ্যাবিলিটেশন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে যা অবকাঠামো ও মানব সম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ সকল কার্যক্রমসমূহ লাগসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা এসডিজি এবং দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা

একটি শহরের পরিবহন ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে সেই শহরের আধিবাসীদের সহজ যাতায়াত ও যোগাযোগ। বিশ্বে উন্নত দেশসমূহের অনেক শহরের রাস্তার যথেষ্ট স্বল্পতা রয়েছে। কিন্তু উন্নত জনপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলে এবং সাইকেল ও হেঁটে চলাচলের ব্যবস্থা কওে শহরগুলো যানজট এড়াতে সক্ষম হয়েছে। ঢাকা মহানগরের মাত্র ৪% যাতায়াতকারী ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহার করে। বাকী ৯৬% যাতায়াতকারী বাস, টেম্পো, টেক্সি, রিক্সা এসব পরিবহনে চলাচল করে। ঢাকা পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে ৯৬% যাত্রী সাধারণের কথাই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। গণপরিবহন ব্যবস্থা আধুনিক ও উন্নত করতে হবে। ৪% লোকের জন্য বেশিরভাগ লোকেল অসুবিধা হয় এমন পরিবহন ব্যবস্থা কাম্য নয়।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতিদিন রাজধানীতে যত যাত্রী বাসে চলাচল করেন, তার কয়েকগুণ যাত্রী পায়ে হেঁটে বিভিন্ন গন্তব্য পৌঁছান। এ থেকে এটাই স্পষ্ট হচ্ছে রাজধানীর ফুটপাতগুলো ব্যবহারের যোগ্য রাখা অতি জরুরী। ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বড় বড় শহর নগরসমূহে নন মোটরাইজড ট্রান্সপোর্ট বিশেষ করে রিক্সা, রিক্সা ভ্যান, ঠেলাগাড়ি ইত্যাদি চলাচলের বিষয়টি কিভাবে আরো উন্নত এবং নিরাপদ করা যায় সে বিশয়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও প্রচলিত আইনের সংশোধনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে নগরের যানজট নিরসন তথা নগরবাসীর চলাচলের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। নগরীর বিভিন্ন কাযক্রমে সমন্বয় ও ধীর গতির যানবহন মহানগরী থেকে পর্যায়ক্রমে তুলে নেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে সুফল পাওয়া যাবে। তাছাড়া যানজট নিরসনে স্বপ্ন, মধ্য ও র্দীঘমেয়াদি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। স্বল্প মেয়াদি উদ্যোগের মধ্যে নগরসমূহ অবৈধ পার্কিং বন্ধে নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়ন এবং রিক্সা চলাচল কমিয়ে আনা প্রয়োজন। মধ্যমেয়াদি উদ্যোগে মেট্রোরেলের পাশাপাশি উড়াল সড়ক নির্মাণ, পূর্ব-পশ্চিমমুখী রাস্তা নির্মাণ এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভিন্ন সংস্থাসমূহের দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। যানবাহন ব্যবস্থাপনা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।

প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পরিকল্পিত নৌযোগাযোগ আধুনিকায়নের মধ্যমেও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব। ঢাকায় সম্প্রতি ওয়াটার বাস স্বল্প পরিসরে চালু করায় গণপরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতরক্ষ্যাকে ঘিরে বৃত্তাকার নৌপথ ও সড়ক যোগাযোগ গড়ে তোলার প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ চলছে। এটি বাস্তবায়ন হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ হবে।

আবাবিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম

ঢাকা নগরের আবাসিক এলাকায় নির্মিত হচ্ছে ছোট বড় বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা। এর ফলে আবাসিক এলাকা মারাত্মকভাবে বায়ু ও শব্দদুষণে আক্রান্ত হচ্ছে। জরিপে দেখা গেছে, নগরের এসকল এলাকার অনেক মানুষই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

তাছাড়া আবাসিক এলাকায় ঘণবসতির কারণে উৎপাদিত বিপুল আবর্জনা অপসারণের আরো কার্যকরী ব্যবস্থা সিটি কর্পোরেশনসমূহের মাধ্যমে গ্রহণ করা না হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে। পুরাতন ঢাকার আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক সামগ্রী গুদামজাত করার কারণে সাম্প্রতিক কালের নিমতলীর ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তথা অগ্নিদুর্ঘটনা আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনারই করুন পরিণতি। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে আরো তৎপর হতে হবে।

উন্নত নগরীর জন্য প্রয়োজন সুশাসন

নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সবার আগে প্রয়োজন। আইন শৃংঙ্খলা ব্যবস্থাই হচ্ছে একটি উন্নত নগরীর মূল উপাদান। উন্নত দেশে এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নেয়া হয় বলেই সেসব দেশের নগরগুলোতে নগরবাসীরা তুলনামূলকভাবে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে বসবাস করছে। নগররাষ্ট্র সিংগাপুর এর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সে শহরে ছোট বড় যেকোন বিষয়ে আইন অমান্যকারীকে তাৎক্ষণিক দন্ড বিধানের প্রথা চালু রয়েছে।

নগর ব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্ট নীতিমালার প্রয়োগ

নগর ব্যবস্থাপনার সাতে সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে দক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে সরকারি বিভিন্ন বিধিমালা থাকা সত্তে¡ও সেগুলো অনুসরণে ও প্রয়োগে পেশাজীবিসহ নির্মিতা ও শ্রমিকগণ অসচেতন। ফলে প্রায়ই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে নগরে ভবন দেবে যাওয়া, হেলে পড়া সহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে।

ঢাকার বেশির ভাগ ভবনই ভূমিকম্পসহনীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত নয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের এক জরিপে দেখা যায় ঢাকার শতকারা ৫৩ভাগ ভবন দুর্বল অবকাঠামোর ওপর নির্মিত, ৪১ শতাংশের ভরকেন্দ্র নড়বড়ে, ৩৪ শতাংশের বিম ও কলাম বিধিমালা অনুসরণ করা হয়নি। সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসুচি (সিডিএমপি) ঢাকার সাড়ে তিন লাখ ভবনের দুই লাখকেই ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিমত দিয়েছে- অপরিকল্পিতভাবে হাইরাইজভবন নির্মাণ ঢাকা শহরকে অতিমাত্রায় ভূমিকম্প প্রবণ শহরে পরিণত করেছে।

নগর উন্নয়নে কয়েকটি সংস্থার সংক্ষিপ্ত ভূমিকা এ পর্যায়ে তুলে ধরা হলো:
গণপূর্ত অধিদপ্তর এ দেশের আধুনিক নির্মাণ সেক্টরের পথিকৃৎ। আধুনিক ঢাকা নগরী নির্মাণের প্রথম মাইল ফলক রমানা অঞ্চলকে ঘিরে প্রায় এক শতাব্দী পূর্বে নির্মিত হয়েছিল কার্জন হলের ন্যায় অপূর্ব স্থাপত্যশৈলী মন্ডিত ভবন, পুরনো হাইকোর্ট ভবন, বর্তমান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হিসেবে ব্যবহৃত সুরম্য আট্টালিকা, বর্তমান প্রধান বিচারপতির বাসভবন, মাননীয় মন্ত্রীদের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত বাংলোগুলো। পরবর্তীতে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ধানমন্ডি আবাাসিক এলাকা, তেজগাঁও শিল্প নগরী, শেরেবাংলা নগর, আজিমপুর-মতিঝিল-আগারগাঁও প্রভৃতি আবাসিক কলোনীসহ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, হাসপাতাল, কারাগার, অডিটরিয়াম, সেনাছাউনি, সাইক্লোন সেন্টার, ফায়ার স্টেশন, থানাভবন, টেলিভিশন ও বেতার কেন্দ্র, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, শিখা চিরন্তর, স্বাধীনতা স্তম্ভ, হাতিরঝিল ইত্যাদি গণপূথর্ত অধিদপ্তরের উল্লেখযোগ্য স্থাপনা। বর্তমানে সমগ্র দেশব্যাপী সরকারী অধিকাংশ গুরুত্বর্পূণ ভবনাদি নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে গণপূর্ত অধিদপ্তর কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।

স্থাপত্য অধিদপ্তর

স্থাপত্য অধিদপ্তর সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সাথে জরিত। দেশের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ যেমন সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন, ওসমানী উদ্যান, হাজী ক্যাম্প, ঢাকা সুপ্রীম কোর্ট এনেক্স ভবন, বাংলাদেশ সচিবলায়, জেলা সদর নির্মাণ প্রকল্প, মন্ত্রীদের আবাসন, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন, জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব-রেজিস্ট্রার ভবন, জেলা পাবলিক লাইব্রেরি, পুলিশ একাডেমি, শিল্পকরা একাডেমি কমপ্লেক্স, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, বাইতুল মোকাররম মসজিদেও পরিবর্ধন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবন, পাসপোর্ট ভবন, সমাজসেবা ভবন, মৎস ভবন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ভবন, বিজ্ঞান যাদুঘর, মুজিবনগর কমপ্লেক্স, বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট এবং আহসান মঞ্জিল ইত্যাদির স্থাপত্য পরিকল্পনা ও নক্সা স্থাপত্য অধিদপ্তর প্রণয়ন করছে। বর্তমান মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ বিভিন্ন সংস্থার ভবন নির্মাণের স্থাপত্য পরিকল্পনা ও নক্সা প্রণয়নের কাজে স্থাপত্য অধিদপ্তর নিয়োজিত রয়েছে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ঢাকা শহরের ক্রমবিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলছে। ১৯৯৫ সালে ৫৯০ বর্গমাইল বিস্তৃতি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্লান (১৯৯৫-২০১৫) প্রণয়ন করা হয়। এতে নগরীর ভূমি ব্যবস্থাপনা, আবাসন, ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামোসহ সকল প্রকার উন্নয়ন মূলক পরিকল্পনার প্রস্তাবনা সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্লান (১৯৯৫-২০১৫) এর আলোকে ঢাকা মহানগরীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাজউক কর্তৃক ডিটেইল্ড এরিয়া প্লান (ড্যাপ) প্রণয়ন ও গেজেট পাশ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। এতে সুনির্দিষ্ট ভূমি ব্যবহার যেমন, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প এলাকা, বিনোদন পার্ক, খেলার মাঠ, লেক, সাংস্কৃতিক বলয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, কমিউনিটি সেন্টারসহ সামাজিক চাহিদার জন্য প্রয়োজনীয় স্থানসমূহ চিহিৃত করা হয়েছে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভবিষ্যৎ প্রকল্প সমূহের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে রাজউকের আওতাধীন এলাকায় ঢাকা মহানগরীর চতুর্দিক চারটি উপ-শহর গড়ে তোলা এবং পূর্বাচলে ২০,০০০ উত্তরায় ২২,৫০০ ও ঝিলমিলে ১০,০০০ এপার্টমেন্ট নির্মাণ। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে।

নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর

নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ৫০ টি জেলা শহর/ পৌরসভা এবং ৩৯২ টি উপজেলা শহরের ল্যান্ড হাউজ প্লান/ মাস্টার প্লান প্রণয়ন করেছে। এই মাস্টার প্লানসমূহের আলোকেই সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহে উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। বর্তমান অধিদপ্তর ১২টি পৌরসভা মাস্টার প্লান নবায়ন/প্রণয়ন শেষ করে ১৫টি পৌরসভা ল্যান্ড প্লান/ মাস্টার প্লান প্রণয়নের কাজে নিয়োজিত আছে। চলমান প্রকল্পসমূহের মাধ্যে বর্তমান নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর “প্রিপারেশন অব ডেভেলপমেন্ট প্লান অব কক্সবাজার টাউন এন্ড সী-বীচ আপ টু টেকনাফ” শীষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পটির মাধ্যমে আগামী ২০ বৎসরের জন্য অর্থাৎ ২০১০ হতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রকল্প এলাকার প্রায় ২৫,০০০ একর জায়গার পরিকল্পিত ভূমি ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে এবং প্রত্যক্ষভাবে আগামী ২০ বৎসর মেয়াদি ভৌত পরিকল্পনার আলোকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কর্মকান্ড নিশ্চিত করার মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটবে।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি শহরে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও স্বল্প আয়ের জনগণের জন্য বাসস্থান সংস্থানে নিয়োজিত রয়েছে। সংস্থাটি স্বল্প ব্যয় ও আত্মসহায়তামূলক নগর ও গ্রামীন গৃহায়ন প্রকল্প, দুর্যোগ ও আপাদকালীন সময়ের জন্য গৃহায়ন পরিকল্পনা এবং দুর্দশাগ্রস্থ মহিলা, অসহায় ও দুঃস্থ নাগরিকদের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করছে। প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে লালমাটিয়ায় ১৪৩ টি ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুওে ১০২০ টি ফ্ল্যাট, এবং মিরপুওে ৩৬০ টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প। তাছাড়া ঢাকার বাইওে মৌলভীবাজারে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদেও জন্য সাইট এন্ড সার্ভিসেস আবাসিক ফ্ল্যাট উন্নয়ন কুষ্টিয়া জেলা শহওে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদেও জন্য সাইট এন্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন, নাটোর জেলা শহরে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য সাইট এন্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প এসব প্রকল্প কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট

দেশের মানব বসতি তথা গৃহায়ন ও নির্মাণ বিষয়ক গবেষণাই হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর অন্যতম কাজ। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠান দেশজ নির্মাণ সামগ্রী দ্বারা স্বল্প ব্যয়ে পরিবেশ বান্ধব বিভিন্ন প্রকার নির্মাণ উপকরণাদী উদ্বাবনে সক্ষম হয়েছে। ফেরোসিমেন্ট প্রযুক্তিতে নির্মাণ কাজ ও ভবনাদী রক্ষণাবেক্ষণ, ভবনের ভিত নির্মাণে প্রিষ্ট্রেসড প্রিকাস্ট পাইল, বন্যা ও জলাবদ্ধ এলাকার জন্য ফেরোসিমেন্ট ফ্লোটিং হাউজ ইত্যাদি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান চাহিদার প্রেক্ষিত ইনস্টিটিউট সরবরাহ করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ নির্মাণ সামগ্রী তৈরিতে এ প্রতিষ্ঠানের নিরন্তর কাজ করছে।
ইনস্টিটিউটে প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী পরিবেশ বান্ধব দ্রæত বাস্তবায়ন যোগ্য ও স্থানীয় ভাবে প্রাপ্য নির্মাণ উপকরণের মাধ্যমে ইকো হাউজিং প্রকল্প সম্পন্ন করছে। ইনস্টিটিউট জ¦ালানী সাশ্রয়ী ইট তৈরি ও ঢাকা মহানগীরর সুউচ্চ ভবনসমূহ অগ্নিদুর্ঘটনার উপর একটি সমীক্ষা কাজ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ (সিইউএস) এর সহযোগিতায় সম্পন্ন করা হচ্ছে।

বর্তমান বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) হালনাগাদ করণের প্রকল্পটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান (বিআরটিসি) বুয়েট এর সহযোগিতায় সম্পাদনের কাজ চলছে। তাছাড়া বাংলাদেশে প্রচলিত ইনফিল ওয়াল সমৃদ্ধ আরসিসি ভবনে ভূমিকম্পের প্রতিক্রিয়া নমুনা কাঠামোর উপর ল্যাবরেটরিতে পর্যাবেক্ষণ করার প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। উক্ত প্রকল্পের অপর অংশ ঘূর্ণীঝড়, বন্যা ও নদী ভাঙ্গন প্রবণ অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহণীয় ব্যয় সাশ্রীয় মডেল হাউস তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

ইনস্টিটিউট দেশের নির্মাণ শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মেসন ট্রেনিং এবং বাড়ি নির্মাতাগণের জন্য সচেতনতামূলক নিজের বাড়ি নিজেই করি শীর্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিয়মিতভাবে আয়োজন করে চলেছে।

কহর সম্প্রসারণ বা নগরায়নে উল্লেখিত কার্যক্রম ও পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়ন দক্ষতার সাথে না হলে দেশের ছোট বড় শহর নগর বিশেষ করে মহানগর ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে বলে ধারণা করা মোটেও অযৌক্তিক হবে না। নন্দিত নগর গড়ার উদ্দেশ্যে এখন থেকেই উল্লেখিত পরিকল্পনাসমূহ ভবিষ্যৎ জনসংখ্যার বাকার বিবেচনা করে ও যুগোপযোগী কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন করার লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা একান্ত প্রয়োজন।

সর্বোপরি বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) জাতীয় গৃহায়ন নীতিমালা ও মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালাসহ অন্যান্য বিধি বিধানসমূহ যথাযথ অনুসরণ করে যাবতীয় নির্মাণ কর্মকান্ড পরিচলনার মাধ্যমেই উন্নত নগর, উন্নত জীবন, অর্জন করা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি।

লেখক : কবি, কথাশিল্পী ও প্রাবন্ধিক।  প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ রাইটার্স ফাউন্ডেশন।

Print Friendly

Related Posts