ভোলার হাজী আবদুল করিম তালুকদার ওয়াকফ এস্টেট আজ সর্বনাশা পর্যায়ে

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ভোলার হাজী আবদুল করিম তালুকদার ওয়াকফ এস্টেট দুর্নীতিবাজ মোতাওয়াল্লী ও ওয়াকফ প্রশাসনের দুর্নীতিপরায়ণদের কারণে আজ এক সর্বনাশা পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশ ওয়াক্ফ প্রশাসন যেন ওয়াক্ফর সম্পত্তি আত্মসাতকারীদের সহায়ক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। যারা দুর্নীতি ও জোচ্চুরির মাধ্যমে ওয়াক্ফর সম্পত্তি আত্মসাত করছে, তাদের রক্ষা করাই যেন এই প্রতিষ্ঠানটির কাজ। দুর্নীতির সমর্থনে যত প্রকারে মিথ্যা রিপোর্ট দরকার ওয়াক্ফ প্রশাসন অনায়াসেই তা দিয়ে যাচ্ছে। আর তার খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের ওয়াকফ আল-আওলাদের অন্তর্ভূক্ত পরিবারগুলো আজ সর্বশান্ত।

আজ শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকার এ্যালিফ্যান্ট রোডস্থ এক হোটেলে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়কালে এ কথা বলেন হাজী আব্দুল করিম তালুকদার ওয়াকফ এস্টেট ভোলা ইসি-১৪১৬ এর স্বত্বভোগের অধিকারী ভোলার জামিরালতা মিয়াবাড়ীর শামীম আহম্মেদ।

তিনি বলেন আমি ও আমার পিতা মৃত নাছির আহম্মদ মিয়া এই এস্টেটের ০৬/০১/১৯২২ইং তারিখে সম্পাদিত রেজিস্ট্রারি ওয়াক্ফ দলিলের শর্ত মোতাবেক সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছি। ওয়াকফ প্রশাসক বাংলাদেশ ও এর কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ প্রত্যভাবে ওয়াকফ সম্পত্তি ও আয়ের অর্থ আত্মসাতকারীদের দীর্ঘকাল সহায়তা করে আসছেন। যা দায়িত্বের পরিপন্থি ও দুর্নীতির শামিল।

সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি ওয়াকফ প্রশাসনের দায়িত্ব পরিপন্থি কর্মের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন :

ক) ‘যেখানে ওয়াকফ তালিকাভূক্তি নহে এমন সম্পিত্ত বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে বিক্রয়এ র অনুমতির আদেশ এর নথী খুজে পাওয়া যাচ্ছে না’- এই বক্তব্য ভোলা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে পত্র প্রেরণ করে দেওয়ানী মোকাদেমা নম্বর ১৬৮/১৩ জাল জালিয়াতকারীদের রক্ষার প্রচেষ্টা করা হয়।

খ) আমাকে মোতাওয়াল্লী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অযোগ্য ঘোষণা করার জন্য আমার নামে তদন্তকারী ওয়াকফ পরিদর্শক রেজাউল করিম সরকার তদন্ত প্রতিবেদনে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করেন। এর প্রতিকার ও তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসকের অনুমতি প্রার্থনা করি। আমার বক্তব্য প্রশাসক মহাদয়কে শ্রবণের জন্য ২৪/০১/২০১৮ইং তারিখ উপস্থিত হয়ে আমার অভিযোগ ও অভিযোগের সপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুনরায় দাখিল করি। এরপর আমার আবেদন সমাধি ঘটে।

গ) ১৩/১০/২০১৬ ইং তারিখ গোলাম নবী আলমগীরকে অফিসিয়াল মোতাওয়াল্লী নিয়োগকালীন সময় ইসি-১৪১৬ এর আদেশ নামার ২১৬ নাম্বার ডাইরিতে উল্লেখ করা হয় যে, গোলাম নবী আলমগীর এর বিরুদ্ধে ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রয় এর কোন অভিযোগ নাই। দ্বিতীয় বয়ঃজ্যেষ্ঠ মোতোয়াল্লীর জন্য আবেদনকারী সুফিয়ার রহমান ফারুকের বিরুদ্ধে ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তরের অভিযোগ আছে। অপরদিকে ৫-০৪-২০১৭ইং তারিখ অফিসিয়াল মোতাওয়াল্লী গোলাম নবী আলমগীর এর নিয়োগপত্র বাতিল করে সুফিয়ার রহমান ফারুককে মোতাওয়াল্লী নিয়োগকালীন সময় উল্লেখিত আদেশ নামার ২৪২ নম্বর ডাইরিতে উল্লেখ করেন যে, গোলাম নবী আলমগীরের বিরুদ্ধে ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তরের অভিযোগ আছে, সুফিয়ার রহমান ফারুকের বিরুদ্ধে ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রয় এর অভিযোগ নাই। বিষয়টি হাস্যকর বটে।

ঘ) গোলাম নবী আলমগীর ভোলা জেলা জজ আদালতে মিস আপিল ১৮/১৭ আবেদনের জবাব দিতে গিয়ে বর্তমান প্রশাসক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম ও বর্তমান সহকারী প্রশাসক কামরুজ্জামানকে সত্যপাঠ দিয়া আদালত লিখিতভাবে অবগত করেন যে, আমার পিতা মৃত নাছির আহম্মেদ মিয়া নাকি এই এস্টের এর মোতাওয়াল্লী ছিলেন (যা সম্পূর্ণ মিথ্যা)। আমার পিতা হতে প্রাপ্ত আম-মোক্তার নামা বেআইনি মর্মে আম-মোক্তার বাতিল চেয়ে আপিল আবেদনকারী গোলাম নবী আলমগীর নাকি আবেদন করেছেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে আমার আম-মোক্তারনামা বেআইনী বিধায় বাতিল ঘোষনা করা হইয়াছে (তার নিকট আবেদন করিয়াছেন এবং কে আম-মোক্তার বাতিল ঘোষণা করিয়াছেন। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়নি- বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা)। আরো উল্লেখ করা হয়েছে “বহু সম্পদ বিশিষ্ট বিশাল ওয়াকফ এস্টেট” অথচ ৩০/০৪/২০১৪ইং তারিখ দাখিলকৃত হিসাব বিবরনীতে মাত্র ৪.৪৫ একর জমি এস্টেট এর জমি অবশিষ্ট আছে মর্মে হিসাব গ্রহণ করা হয়। ২০১৪ সালের পর অদ্য পর্যন্ত আয় ব্যয়ের কোন হিসাব না পেয়েও বর্তমান মোতোয়াল্লী সুফিয়ার রহমান ফারুক এস্টেটটি সুন্দরভাবে পরিচালিত মর্মে তার পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়। যা খুবই হাস্যকর।

শামীম আহম্মেদ আরো বলেন, ১৯৪০ সালে মোতাওয়াল্লী আমার দাদা গোলাম কাদির মিয়ার আততায়ীদের হাতে নিহত হলে আলতাজের রহমান তালুকদার এই এস্টেটের মোতায়াল্লীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। মোতোয়াল্লীর দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি এস্টেটের সিংহভাগ জমি স্ত্রী মাছুমা খাতুন, জ্যেষ্ঠপুত্র মোশাররফ হোসেন শাজাহান, ছোট ভাই আজহার উদ্দিন মিয়া ও শ্যালকদের নামে হস্তান্তর করেন। ওয়াকফ দলিলের শর্ত মোতাবেক সকল স্বর্ত্বভোগীদেরকে বঞ্চিত করে এস্টেটটি এককভাবে ভোগ দখল করায় ১৯৫৬ সালে আলতাজের রহমান তালুকদারকে মোতোয়াল্লীর পদ থেকে অপসারিত করে তদস্থলে অ্যাডভোকেট নুরুর রেজা সাহেবকে রিসিভার নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও গায়ের জোরে অন্যায়ভাবে এস্টেট এর সকল জমি আলতাজের রহমান তালুকদারই পূর্বের ন্যায় এককভাবে ভোগ দখলে থাকেন। অত:পর অবশিষ্ট সম্পত্তি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এ রহমান এন্ড সন্স এর কর্মচারী মোফাজ্জল হোসেন ও সামসুদ্দিন আহমেদ এর নামে অবৈধভাবে নামজারী করিয়ে বেচা বিক্রি করেন।

এস্টেট এর বেনিফিশিয়ারি প্রাক্তন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোশারফ হোসেন শাজাহান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর ৩১-১০-২০০১ইং তারিখে তিনি অবৈধভাবে এস্টেটটির মোতাওয়াল্লী দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু মৃত্যু অবধি (০৫-০৫-২০১২ইং) তিনি এস্টেট এর আয় ব্যয়ের কোন হিসাব-নিকাশ প্রদান করেননি। বরং এস্টেট এর মোতোয়াল্লী দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে ২০০১ মাঠ জরিপের সময় ওয়াকফের অবশিষ্ট সকল সম্পত্তি নিজ ও ভাই গোলাম নবী আলমগীর, গোলাম কিবরিয়া জাহাঙ্গীরের নামে রেকর্ড করেন। ওয়াকফ প্রশাসন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হওয়ায় সে সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন শাজাহান ওয়াকফ কার্যালয়ে অনুগত কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়োগ দেন। ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর নিয়োগকৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য এক সময় তার ব্যক্তিগত সহকারী মোহাম্মদ আবুল কাশেম বর্তমানে ওয়াকফ পরিদর্শক ঢাকা অঞ্চল-১ এর দায়িত্বে নিয়োজিত। ওয়াকফর প্রধান কার্যালয়েই তিনি বসেন। তাই প্রতিমন্ত্রীর নিয়োগকৃত অনুগত ব্যক্তিদের কারণে কোন আবেদন নিবেদনের কোন সুফল পাচ্ছি না।

বিগত ২৩/০৫/২০১৭ইং তারিখ এস্টেট এর দুরাবস্থার উল্লেখ করে মাননীয় ধর্মমন্ত্রী ও ধর্মসচিব এর নিকট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেছিলাম।

এছাড়াও আমি বিগত ০২/০৪/২০১৯ইং তারিখে ওয়াকফ কার্যালয়ের অসাধু কর্মকতা যারা দায়িত্বের পরিপন্থি কর্ম করেছেন তাদের বিরুদ্ধে বর্তমান প্রচলিত আইনে মামলা দায়ের করার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেছি। অবশ্য অনুমতি এখনো পাইনি।

শামীম আহম্মেদ বলেন, এই এস্টেটের স্বত্বভোগের অধিকারীদের বৃহৎ অংশই এখন সুবিধা বঞ্চিত হয়ে সব হারিয়ে পথে নেমেছে। অন্যদিকে দুর্নীতিবাজরা আঙ্গুল কলাগাছের মতো বিশাল ধনীতে পরিনত হয়েছে। সত্য এবং ন্যায়কে প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই হাজী আবদুল করিম তালুকদার ওয়াকফ এস্টেট নিয়ে সকল অপকর্ম প্রকাশ্যে আসা জরুরী হয়ে উঠেছে।

হাজী আব্দুল করিম তালুকদার ওয়াকফ স্টেটের সম্পত্তি উদ্ধার করতে গিয়ে আজ আমি সর্বশান্ত। আমার দাবী উক্ত ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্ধার করা হোক এবং বিগত দিনের ওয়াকফ দলিলে শর্ত মোতাবেক ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও জালজালিয়াতিকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হোক।

তিনি আকুল কন্ঠে বলেন, আমার ফরিয়াদ, আমরা ভোলার সদরের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবার। জাল জালিয়াতি চক্র আমাদের উক্ত সম্পত্তি জাল জালিয়াতি করে যারা আমাদেরকে আজ সর্বশান্ত করেছে। আমাদের পথে নামিয়ে দিয়েছে। এইসব জালিয়াতদের অচিরেই শাস্তির আওতায় আনা হোক। ফিরিয়ে দেওয়া হোক হাজী আব্দুল করিম তালুকদার ওয়াকফ স্টেটে বঞ্চিত ওয়ারিশদের সম্পত্তির অধিকার।

Print Friendly

Related Posts