বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুরাতন রাডার প্রতিস্থাপনে সিভিল এভিয়েশন উদ্যোগ নেয় ২০০৫ সালে। নানা অনিয়মের কারণে ১১ বছরেও রাডারটি বসানো যায়নি। রাডার স্থাপনে ডেনিস অর্থায়ন বাতিল হওয়ার পর পিপিপি (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) এর মাধ্যমে করার জন্য করিম এ্যাসোসিয়েট ট্রেডিং একটি আন-সলিসিটেড প্রস্তাব দাখিল করে। ২০১৩ সালে প্রস্তাবটি অনুমোদনও করে মন্ত্রিসভা কমিটি। যদিও এ ধরনের কাজ আন-সলিসিটেড প্রস্তাব গ্রহণের সুযোগ পিপিপি আইনে নেই।
আধুনিক রাডার বসানোর জন্য ডেনিস অর্থায়নে কন্সালটেন্ট নিয়োগ করে সিভিল এভিয়েশন। আন্তর্জাতিক উপযোগী সিস্টেমসহ রাডার স্থাপনের বিষয়ে গত ডিসেম্বর ২০০৬ এ কন্সালটেন্ট প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনের আলোকে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। তিনটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়। কিন্তু সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার লক্ষ্যে দরপত্র বাতিল করে সিভিল এভিয়েশন। ২০১১ সালের মার্চে দ্বিতীয়বার দরপত্র আহ্বান করা হলে চারটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। টেন্ডার দূর্নীতির কারণে রাডার স্থাপন কাজে ডেনিস আর্থিক সহায়তা বাতিল করে। হঠাৎ একটি প্রতিষ্ঠান রাডার স্থাপন কাজ পিপিপির
মাধ্যমে করার জন্য করিম এ্যাসোসিয়েট ট্রেডিং একটি আন-সলিসিটেড প্রস্তাব দাখিল করে। গত সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব মোতাবেক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন প্রদান করে। যদিও এ ধরনের কাজ আন-সলিসিটেড প্রস্তাব গ্রহনের সুযোগ পিপিপি আইনে নেই। গত মে আন-সলিসিটেড প্রস্তাব বিষয়ে গাইড লাইন জারি হয়। গাইড লাইনে ১৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে আন-সলিসিটেড প্রস্তাবের বৈধতার মেয়াদ ১৮ মাস। সে হিসেবে ব্যক্তি মালিকানাধীন করিম এ্যাসোসিয়েট ট্রেডিং এর প্রস্তাবের মেয়াদ গত মার্চ ২০১৬ তারিখে অতিক্রান্ত হয়েছে।
যেকোনো বিমান বন্দরের রাডার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বিমান পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, যোগাযোগ রাডারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। দূর্নীতিবাজ, অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের কয়েকগুন বেশি দরে উক্ত করিম এ্যাসোসিয়েট ট্রেডিং কে কাজ পাইয়ে দিতে গত ৮ নভেম্বর ২০১৫ পিপিপির মাধ্যমে আরএফকিউ এবং আরএফপি একই সাথে আহ্বান করে। গত ২২ জুন ২০১৫ তারিখে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র প্রস্তাব দাখিল করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব আইন ২০১৫ এর অধীনে প্রকাশিত গাইড লাইন অনুযায়ী আরএফকিউ এবং আরএফপি একই সঙ্গে আহবান করার আইনগত কোন সুযোগ নেই। আইন লঙ্ঘন করে করিম এ্যাসোসিয়েট ট্রেডিংকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ও দেশী-বিদেশীদের নিরাপত্তার কাজ দিতে প্রতিশ্রতিবদ্ধ সিভিল এভিয়েশন ও তথাকথিত প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মকর্তাদের নিয়ে মূল্যায়ন কমিটি গঠনের বিষয়ে বিধির ৩৯ এবং ৪০ নম্বর ধারায় উল্লেখ থাকলেও করিম এ্যাসোসিয়েট ট্রেডিংয়ের পছন্দমতো অনভিজ্ঞ ও পক্ষদুষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে। অনভিজ্ঞ বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (মহিলা কর্মকর্তা), বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের মহিলা কর্মকর্তা বিধি মোতাবেক যাদের সদস্য হিসেবে রাখার কোন সুযোগ নেই, পক্ষান্তরে প্রকল্প পরিচালককে উক্ত মূল্যায়ন কমিটিতে রাখা হয়নি। প্রচলিত বিধি মোতাবেক প্রকল্প পরিচালক মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব হয়ে থাকেন। সিভিল এভিয়েশনের সিন্ডিকেটের সাথে অনভিজ্ঞ পিপিপি সেলের ডেপুটি ম্যানেজার আবুল বাশার, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী সেরতাজুল ইসলাম দূর্নীতির মাধ্যমে রাডার কাজটি উক্ত ট্রেডিং কোম্পানিকে দেয়ার বিষয়ে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর থেকে সেরতাজুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তাহলে কোন ভিত্তিতে তিনি উক্ত কমিটিতে কাজ করছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া, আবুল বাশারকে গত ৫সেপ্টেম্বর পিপিপি অফিস থেকে সরিয়ে জনপ্রশাসন অধিদপ্তরে ওএসডি করা হয়েছে।
পিপিপি সেলের ডেপুটি ম্যানেজার আবুল বাশার, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী সেরতাজুল ইসলাম পর্যটন কর্পোরেশন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বেজাসহ সকল সংস্থার মূল্যায়ন কমিটিতে রয়েছে বলে জানা যায়।
দেশের নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগ অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে স্বচ্ছ দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাডার স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিষয়টিতে দ্রুত দুদকের নজর দেওয়া জরুরি বলেও মনে করছেন পর্যবেক্ষকমহল।