২৮ বিয়ের নায়ক

 

বিডিমেট্রোনিউজ , খুলনা ॥   সিরিজ বিয়ের নায়ক ইয়াসিন ২৫তম স্ত্রীর মামলায় এখন কারাগারে। ৯ ফেব্রুয়ারি তাকে খুলনার আদালতে তোলা হচ্ছে। এ পর্যন্ত তার ২৮টি বিয়ের সন্ধান মিলেছে। যাদের একাধিক সন্তানও রয়েছে।
পুরো নাম ইয়াসিন ব্যাপারী। বয়স ৪৮। নির্দিষ্ট কোন পেশা নেই। হ্যান্ডসাম দেখতে এবং মিষ্টি ব্যবহার। ইয়াসিন খুলনার রূপসা উপজেলার পূর্ব রূপসা ফেরীঘাট সংলগ্ন মৃত মঈন উদ্দিন ব্যাপারীর পুত্র। সিরিজ বিয়ের এই নায়ককে ‘বহু বিবাহের’ খবর জানার পর অধিকাংশ স্ত্রী-ই সন্তানসহ তাকে ত্যাগ করেছেন।

 

বিয়ে পাগলা ইয়াসিন ব্যাপারী সম্পর্কে তার ২৫তম স্ত্রী খুলনার মেয়ে শিউলী আক্তার তানিয়া জানান, ইয়াসিনের দু’হাতের ৮ আঙ্গুলেই স্বর্ণের আংটি, গলায় স্বর্ণের চেইন, হাতে থাকে স্বর্ণের ব্রেসলেট। ৪টি দামি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। বয়স্ক হলেও যুবকদের মতই স্মার্ট। বিয়ের আগে ইয়াসিন সব বিয়ের তথ্যই গোপন রাখে। তার মিষ্টি কথা-বার্তায় এত খারাপ চরিত্র সম্পর্কে ধারণা বা সন্দেহ করা কঠিন।

 

ইয়াসিন তার দ্বিতীয় স্বামী উল্লেখ করে তানিয়া জানান, বিয়ের পর একে একে ইয়াসিনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট ফুটে উঠতে থাকে। চট্টগ্রামের বায়োজিদে থাকাকালে প্রতি রাতেই ইয়াসিন মেয়ে নিয়ে বাসায় আসত। সকলকেই আত্মীয় বলে পরিচয় দিত। প্রতিবাদ করলে মারধর করত। প্রায় রাতেই ওই সব মেয়েদের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় তাকে দেখা গেছে। এসব ঘটনার ফলে স্থানীয় কলোনীর বাসিন্দারাও ক্ষিপ্ত ছিল। এসব কিছু জানার কারণে পায়ই নির্যাতন করত। এক পর্যায়ে ৩ মাসের গর্ভাবস্থায় ইয়াসিন তাকে খুলনার রূপসার এলাইপুরে পৈত্রিক বাসায় তাকে রেখে চলে যায়।

 

তানিয়া আরও জানান, ইয়াসিনের ১ম বিয়ে ছিল খুলনা মহানগরীর চানমারী এলাকার শাফিয়ার সঙ্গে। এরপর নারায়ণগঞ্জের লাভলীকে বিয়ে করে ইয়াসিন। বর্তমানে লাভলীর সংসারে সাবিনা ও সূচনা নামে ২টি মেয়ে রয়েছে। এ খবর জানার পর শাফিয়া তালাক দেয় ইয়াসিনকে।

 

৩য় স্ত্রী বাগেরহাটের দেপাড়ার রাশিদা। রাশিদার সংসারে নয়ন নামে একটি ছেলে রয়েছে। ৪র্থ স্ত্রীর নাম আজমিরা। সে খুলনা মহানগরীর লবণচরা এলাকার পুটিমারীর বাসিন্দা। ৫ম স্ত্রী শেফালীকে বিয়ে করার পর আজমিরা নিজেই ইয়াসিনকে তালাক দেয়। শেফালী খুলনা মহানগরীর শিরোমনি এলাকার।

 

৬ষ্ঠ স্ত্রী নোয়াখালীর জেসমিনের সংসারে রয়েছে ইয়ামিন নামে একটি ছেলে। ৭ম স্ত্রী মাজেদা এখন ভারতে অবস্থান করছে। তার বড় বোন চট্টগ্রামে থাকে। ইয়াসিনের ৮ম স্ত্রী চট্টগ্রামের বায়োজিদ মাস্তান শেরশাহ এলাকার মিনারা। তার সংসারে ২ ছেলে-মেয়ে এখন কলেজে পড়ে। ৯ম স্ত্রী চট্টগ্রামের গার্মেন্ট কর্মী জেসমিন। এরপর বিয়ে করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকার মনি (১০ম) ও চট্টগ্রামের বায়োজিদ এলাকার গার্মেন্ট কর্মী অপর এক মনিকে (১১তম)। চট্টগ্রামের বায়োজিদ এলাকার গার্মেন্টস কর্মী বকুল তার ১২তম স্ত্রী। বকুল বিয়ের পর একাধিক বিয়ের খবর পাওয়ার পর ইয়াসিনকে তালাক দেয়।

 

ইয়াসিনের ২৪ তম স্ত্রী চট্টগ্রামের বাঁশখালীর আরজুর সংসারে সানজিদা নামে একটি মেয়ে রয়েছে। ২৫তম স্ত্রী তানিয়ার খাদিজা আক্তার খুকুমনি নামে একটি মেয়ে রয়েছে। এরপর পিরোজপুরের রাজাপুর থানা এলাকার মাটি ভাঙ্গা গ্রামের পুতুলকে ইয়াসিন বিয়ে করে। ২৭তম স্ত্রী হচ্ছে বরগুনার আমতলী থানার গ্যান্দামারা এলাকার জয়নাল আকনের মেয়ে রুমানা আক্তার। এই বাড়ি থেকেই ২২ জানুয়ারি পুলিশ ইয়াসিনকে গ্রেফতার করে। আটক হয়ে ইয়াসিন এখন বরগুনা কারাগারে রয়েছে। ইয়াসিনের ২৮তম স্ত্রী হিসেবে খুলনার রূপসা নদীর পাড়ের ফাতেমার নাম জানা গেছে বলে তানিয়া জানান।

 

তানিয়ার মা ওলেমা বেগম জানান, ইয়াসিনের বড় ভাই ছিল তাদের প্রতিবেশী। সে হিসেবে মেয়ের সাথে ইয়াসিনের সখ্যতা গড়ে ওঠে। এরপর নানা টালবাহানার পর ওদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর গোপন বিয়ের খবর পাওয়ার পরই অশান্তি সৃষ্টি হয়।

 

ওলেমা বেগম জানান, তানিয়াকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বরগুনার রুমানার বাড়ির পাশের বাসায় গোপনে অবস্থান নিয়ে ইয়াসিনকে পুলিশ দিয়ে আটক করান। এরপর থানায় সামনা-সামনি হলে ইয়াসিন তাকে হুমকি দিয়ে বলে, ‘আটক হয়ে থাকব সর্বোচ্চ ৩ মাস। এরপর আমি এর প্রতিশোধ নেব’।

 

মামলায় ইয়াসিনকে আটক করার পর গত ২৪ জানুয়ারি ২টি মটর সাইকেলে ৪ জন লোক মুখে কাপড় পেচিয়ে তার এলাইপুরের বাসায় এসে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

 

ইয়াসিনের বড় ভাই এস্কেন্দার ব্যাপারী খুলনার রূপসা ফেরীঘাট এলাকার পাবলিক টয়লেটের পাশের সরকারি জমিতে ঘর তুলে বর্তমানে বসবাস করছেন। ইয়াসিনের আর কোন বিয়ে নেই বলে তিনি দাবি করেন।

 

রূপসা ফেরীঘাট এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন বলেন, ইয়াসিন এখানের ফাতেমা বেগমকে বিয়ে করেছেন বলেও শোনা যায়। ফাতেমা বেগম নিজেও এ বিয়ের দাবি করেন।

 

শিউলী আকতার তানিয়ার দায়েরকৃত মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এক লাখ এক টাকা দেনমোহরে ইয়াসিনের সাথে তার বিয়ে হয়। এরপর তাদের কোলে আসে খাদিজা। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর ইয়াসিন তার পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। এরপরই ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি বাদী হয়ে খুলনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত ওই দিনই ইয়াসিনের নামে সমন জারী করেন। এরপর ৩০ অক্টোবর গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করেন। গত ২২ জানুয়ারি বরগুনার আমতলা থানা পুলিশ ইয়াসিনকে গ্রেফতার করে এবং ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে ২৩ জানুয়ারি বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করে। ২৫ জানুয়ারি খুলনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত থেকে বরগুনার জেলা সুপার বরাবর ইয়াসিনকে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি খুলনার আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন।

 

ছবি : ইয়াসিনের সঙ্গে ২৫তম স্ত্রী শেফালী আক্তার তানিয়া ও ২৬তম স্ত্রী পুতুল

Print Friendly

Related Posts