অভিনেতা থেকে নেতা

বিডিমেট্রোনিউজ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ষাটের দশকে ছাত্রজীবন থেকেই জড়িত ছিলেন বামপন্থী রাজনীতির সাথে। সে সময় থেকে দীর্ঘদিন একসাথে রাজনীতি করেছেন বামপন্থী নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, সে সময় নাট্য-অভিনেতা হিসেবেও খ্যাতি ছিল সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের। “হলগুলোর নাটকের প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ নাটকে সুরঞ্জিত অভিনয় করেছিল একাধিকবার। আমরা ঠাট্টা করে বলতাম, অভিনেতা থেকে নেতা হয়ে গেছো তুমি”।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত স্বাধীনতার আগে থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনও পর্যন্ত প্রভাব রেখে যাওয়া রাজনীতিবিদের অন্যতম ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। রাজনীতিক হিসেবে সর্বশেষ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য পদে থাকলেও দীর্ঘ কেরিয়ারে ছিলেন নানা ভূমিকায়।

জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, সুপরিচিত এই রাজনীতিবিদের জন্ম ১৯৪৫ সালে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায়। রাজনৈতিক কেরিয়ারে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

এমন কী মুক্তিযুদ্ধের আগে ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোয়ারের সময়েও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি থেকে মাত্র ২৫ বছর বয়সে নির্বাচিত হয়েছিলেন এই রাজনীতিবিদ। নব্বই-এর দশকের শুরুতে তিনি যোগ দেন আওয়ামী লীগে। তিনি যখন পার্লামেন্টে বক্তৃতা করতেন, সকল সদস্য সেটা তন্ময় হয়ে শুনতেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নাম সব সময় লেখা থাকবে।

একজন মহান নেতাকে আমরা হারালাম, তার শূন্যতা পূরণ হওয়া অত সহজ নয়, বলেন আওয়ামী লীগের  সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণ করা এই রাজনীতিকের একটি অন্যতম পরিচয় ছিল সংবিধান এবং আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির একজন কনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন তিনি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে।

অভিজ্ঞ এই রাজনীতিবিদ মানুষের মাঝে বেশি পরিচিত ছিলেন সংসদে তার চাতুর্যপূর্ণ এবং রসাত্মক বক্তব্যের জন্য। রাজনীতিবিদ হিসেবে বিপক্ষের নেতাদেরও সমীহ পেয়েছেন তিনি। জাতীয় সংসদে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক এবং একে অপরকে কটাক্ষ করার ঘটনা ঘটেছে বহুবার। “আমরা একই দলে কখনো কাজ করিনি, কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব থেকে গেছে। সত্যিকার অর্থে রাজনীতিবিদ বলতে যেটা বোঝায়, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সেই রাজনীতিবিদদের মধ্যে অন্যতম। স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় প্রতিটি সংসদে তিনি ছিলেন, এটিই প্রমাণ করে যে তিনি একজন জনপ্রিয় একজন জাতীয় নেতা ছিলেন”। ‘বন্ধু সুরঞ্জিতের’ মৃত্যুর পর প্রতিক্রিয়ায় জানালেন মওদুদ আহমেদ।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। পরে ২০১১ সালে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেও কয়েক মাসের মাথায় সহকারীর অর্থ কেলেঙ্কারিকে কেন্দ্র করে পদত্যাগপত্র দেন। পরে ছিলেন দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে। মৃত্যুকালে জাতীয় সংসদে আইন বিচার এবং সংসদ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতিও ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। রোববার ভোর ৪টা ২৪ মিনিটের দিকে তিনি রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে মারা যান।

Print Friendly

Related Posts