বাবা-মায়ের পা ধুয়ে ওষুধ খাইয়ে দিলো শিক্ষার্থীরা

বিডিমেট্রোনিউজ, পাবনা ॥  বুধবার দুপুরে সাড়ে ১২টা। স্থান দাদাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ। মাঠের একপাশে সারি করে রাখা চেয়ারে বসে আছেন ৫০ জন মা-বাবা। তাদের পায়ের কাছে হাটু গেড়ে বসেছে সমান সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী। এরপর মা ও বাবার পা ধুয়ে দেবার পর তোয়ালে দিয়ে মুছে দিলো শিক্ষার্থীরা। পা ধোয়ার পর মা-বাবাকে পরম যতেœ ওষুধ খাইয়ে দিলো তারা।’

এই দৃশ্য পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নে অবস্থিত দাদাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের।

বুধবার দুপুরে এমন ব্যতিক্রমী কর্মসূচী পালন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে ‘মা-বাবার প্রতি সন্তানের ভক্তি-শ্রদ্ধা’ শীর্ষক এই কর্মসূচিতে ৪০ জন মা ও ১০ জন বাবা অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন স্কুলটির ৩শ’ শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক, অভিভাবক, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

এ সময় অনেক মা-বাবা সন্তানের এমন ভক্তি ভালবাসায় আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।

Untitled-1

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, পাবনার জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো। ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাকিল মাহমুদের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে বিশেষ অতিথি ছিলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আকতার, লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান শরীফ, স্কুলের প্রধান শিক্ষক খালেদা আক্তার।

জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো বলেন, বাবা-মায়ের প্রতি কোমলমতী শিক্ষার্থীদের ভালবাসা জাগিয়ে তোলার এই কর্মসূচী নি:সন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এর মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যতে একটি সুন্দর ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত জাতি পাবো বলে আশা করি।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী মাইশা খাতুনের মা সালেহা খাতুন ও ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী তন্বী খাতুনের মা পারুল আক্তার বলেন, আমাদের সন্তানেরা আজ আমাদের পা ধুয়ে দিয়ে মুছে দিয়েছে। এটা দেখে খুব ভাল লেগেছে। তারা যেন ভবিষ্যতেও আমাদের প্রতি এমনভাবে খেয়াল ও ভালবাসা ধরে রাখে সে কামনা করি।

৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র রিত্বিক ইসলামের বাবা জিয়াউল ইসলাম ও ৯ম শ্রেণী ছাত্র রুবেল হোসেনের বাবা আসাদুল ইসলাম বলেন, আমাদের সন্তান যে তার বাবার পা ধুয়ে দিবে, ওষুধ খাইয়ে দিবে তা ভাবতে পারিনি। এমন আয়োজন খুবই ভাল। সন্তানরা আজ যে শিা পেল তা আগামীতে তাদের জীবন গঠনে কাজে লাগবে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা খালেদা আক্তার বলেন, আমরা বর্তমানে একটা অস্থির সময় পার করছি, যেখানে বাব-মায়ের প্রতি সন্তানরা অবহেলা করছে, দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেনা। তাই এখন থেকেই যদি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এভাবে বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও বৃদ্ধ বয়সে পাশে থেকে কর্তব্য পালনের শিক্ষা দেয়ার বীজ বোপন করতে পারি তাহলে আগামীতে এর ফল নিশ্চয়ই ভাল কিছু হবে। পারিবারিক পরিবেশ আরো উন্নত হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিল মাহমুদ বলেন, ‘ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার, মস্ত ফ্যাটে যায়না দেখা এপার-ওপার’- নচিকেতার গাওয়া এই গান শুনে বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের অবহেলা-উদাসীনতার বিষয়টি আমাকে নাড়া দেয়। সেখান থেকেই আমি চিন্তা করতে থাকি কিভাবে বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের ভালবাসা, শ্রদ্ধা ও কর্তব্যবোধ জাগ্রত করা যায়। সেই চিন্তা থেকে ‘মা-বাবার প্রতি সন্তানের ভক্তি-শ্রদ্ধা’ শীর্ষক এই কর্মসূচী গ্রহণ করি।

অনুকরণীয় এ কর্মসূচি ঈশ্বরদী উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে পালন করা হবে। এ কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে মা-বাবার প্রতি সন্তানের ভক্তি-শ্রদ্ধা বাড়বে। নৈতিক শিক্ষা পাবে শিক্ষার্থীরা।’

Print Friendly

Related Posts