‘খাজনা দিলাম রক্তপাতে’-এর কথা
১৯৮৬ সালে এরশাদের শাসনামলে আমার প্রথম ছড়ার বই ‘খাজনা দিলাম রক্তপাতে’ নিজের উদ্যোগে প্রকাশ করি। বইটিতে যে ধরনের ছড়া ছিল – তা কোনো প্রকাশক বের করবে না ভেবে আমি নিজের উদ্যোগে তা বের করি।
বইটির সাইজ ছিল টালি বইয়ের আকারের। কী এক অদম্য শক্তিতে ছোটাছুটি করে নিজে প্রচ্ছদ-অলংকরণ করে রাতদিন খেটে দ্রুত বইটি বের করেছিলাম। কোনো প্রেস ছাপতে চায়নি – প্রেসের নাম না লেখার শর্তে মতিঝিলের বাংলার বাণী’র মধুমতি মুদ্রণালয় থেকে হাতে লিখে ট্রেসিংয়ে অফসেটে বইটি ছাপিয়ে ছিলাম, সেই সময় রতন দা-সহ মধুমতি মুদ্রণালয়ের ক’জন সহযোগিতা করেছিলেন।
বাঁধাই করা নিয়ে ঝামেলায় পড়লাম! অবশেষে নয়া পল্টনের পরিচিত রাজনৈতিক কর্মী রাজু ভাইয়ের নীলাচল প্রেসের তত্বাবধানে গোপনে বইটির বাঁধাই সম্পন্ন করা হয়েছিল। বইটি ছাপাতে গিয়ে মনে হলো এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে! বাংলাদেশ লেখক ইউনিয়নের অনুরোধে প্রাপ্ত বিসিআইসি’র খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলে উৎপাদিত হ্রাসকৃত মূল্যের ‘লেখক’ কাগজে বইটি মুদ্রিত হয়।
গণআন্দোলনে শহীদ জয়নাল. কাঞ্চন, সেলিম, দেলোয়ার, তাজুল, ময়েজউদ্দিন, শাহজাহান, রাউফুনদের নামে বইটি উৎসর্গ করা হয়েছিল।
রাজনৈতিক সচেতনতামূলক এসব ছড়ায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড, স্বৈরাচার বিরোধী প্রতিবাদ ও সামাজিক অনাচারের বিষয় উচ্চকিত হয়েছিল। আর এই বইটি বিক্রি হয়েছিল ১৯৮৬ সালের একুশের গ্রন্থমেলায় তখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী বাংলা একাডেমি’র পুকুর পাড়ে বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া টেবিলে বই রেখে। বইটি বিক্রিও হয়েছিল বেশ। এ বিষয়ে ক’জন স্বজন সহযোগিতা করেছিল।