বিডি মেট্রোনিউজ || খালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিউলিপকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে চান, কিন্তু মা শেখ রেহানা নিরুৎসাহিত করেন। বুধবার ঢাকায় তরুণদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, “খালা যখন আমাকে দেখলেন তিনি বললেন, তুই চলে আয়, এখানে রাজনীতি কর। কিন্তু মা বলেন, তুমি এখানে (বাংলাদেশে) ছুটি কাটাতে পার, কিন্তু রাজনীতি করো না।”
গত মে মাসে অনুষ্ঠিত ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম বাংলাদেশ সফর করছেন টিউলিপ।
সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন-সিআরআই রাজধানীর একটি হোটেলে ‘লেটস টক’ শিরোনামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীদের নিয়ে সাড়ে তিনশ’র মতো দর্শক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। টিউলিপের কাছে ব্যক্তিগত জীবন, রাজনীতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চান তারা।
তিনি বলেন, একজন রাজনীতিক বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে জনগণকে সেবা দিতে পারেন বলে তিনি মনে করেন। “আপনাকে বাংলাদেশ বা ইংল্যান্ডে থাকতে হবে এমনটি নয়। ইংল্যান্ডে আমি যেভাবে পারি সেভাবে বাংলাদেশিদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ বলেন, তার মা চাননি তিনি রাজনীতি করেন। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এমনটা করেছিলেন।“রাজনীতি তার জীবন নষ্ট করেছে,” মা শেখ রেহানাকে নিয়ে বলেন তিনি।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হারান রেহানা। বড় বোন শেখ হাসিনা ও তিনি দেশের বাইরে থাকায় সে সময় প্রাণে বেঁচে যান। “কিন্তু আমি যখন ব্রিটেনে রাজনীতিতে যোগ দিলাম তখন তিনি সম্মতি দিলেন। আমার পুরো নির্বাচনী প্রচারেও তিনি সহযোগিতা করেছেন।”
১৯৮২ সালে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন টিউলিপ। বাংলাদেশে চার বছর কাটিয়েছেন তিনি। ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টিতে যোগ দেন তিনি। টিউলিপ বলেন, তিনি মানুষের ভালোবাসায় অভিভূত। “মানুষ আমাকে বলেছে, আপনি আমাদের গর্ব। কিন্তু আমি তাদের বলি- না, আমি না; আমাদের মুক্তিযোদ্ধা, যারা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলেন তারাই আমাদের গর্ব।”
টিউলিপ বলেন, খালার কাছ থেকে তিনি ধৈর্যশীল ও বিনয়ী হতে শিখেছেন। “এগুলোই রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি বলেন, ব্রিটেনের এমপি হবেন- কখনও ভাবেননি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যাকে তিনি কখনও দেখেননি, এবং খালা শেখ হাসিনা- এ দুজন রাজনীতিতে তার অনুপ্রেরণার উৎস বলে জানান টিউলিপ।
আলোচনায় টিউলিপ শৈশবের কথাও স্মরণ করেন, যখন একটি টেলিভিশন নাটক ‘বৈশাখী ঝড়’ এ অভিনয় করেছিলিন তিনি। স্কলাসটিকায় পড়ার সময়ে নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি ব্রিটেনেও থিয়েটারে অভিনয় করেছেন তিনি। “যদি জীবনে কখনও সময় পাই, আমি আবার এতে (থিয়েটার) ফিরে যাব।”
টিউলিপ বলেন, ১৬ বছর বয়সে দাদুর মৃত্যু জীবনের সবচেয়ে কষ্টের মুহূর্ত। আর বিয়ের দিন এবং যেদিন এমপি নির্বাচিত হলেন- এই দুই দিন জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। মা হতে চলেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। মেয়ের যে নাম রাখা হবে তাতে ‘জয়’ শব্দটি রাখতে চান বলে জানান তিনি।
ঢাকায় কীভাবে সময় কাটছে জানতে চাইলে টিউলিপ বলেন, ছুটির দিনে খালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে খাবার রান্না করেন। ব্যাডমিন্টনও খেলেন তিনি। “আপনারা যা করেন, আমরাও তা-ই করি।”