দশ পয়সার ভিড়ে সিকি
বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক দার্শনিক অলিভার ওয়েভেল বিদ্বজ্জন সমাবেশে আমন্ত্রণপত্র দিক বা না দিক আত্মদায়ে ওনার অভ্যাস ছিল সুধী সমাবেশে সময়মতো উপস্থিত হওয়া। মিঃ ওয়েভেলের পরিধানে মার্জিন শ্লথ স্যুট আর পলিশহীন পুরোণো স্যু,কিছুটা বৈরাগ্য ভাব,আর এমনিতে অবয়বে বেঁটে – ছোটখাটো, নজর কাড়া নন তেমন। তাই অনেক সুদর্শন পন্ডিতদের তাচ্ছিল্যে ভরা ভ্রু কোঁচকানো তির্যক দৃষ্টিবাণ লক্ষিত হতো। একদিন সুনিপুণ বড়মাপের এক সাহিত্য বিষয়ক অনুষ্ঠানে সভামঞ্চ হতে দূরে এক কোণে দাঁড়িয়ে চুরুট মুখে গুণী জনের বক্তব্য শুনছিলেন, – একজন প্রজ্ঞালব্ধ ব্যক্তি মিঃ ওয়েভেলের পাশে এসে বললেন : মিঃ ওয়েভেল,আপনি নিজেকে নিয়ে বিব্রত বোধ করছেন না তো? ঈঙ্গিতটা অর্থবোধক, উনি এ বিষয়ে পরিজ্ঞাত ; ওয়েভেল একটু থম মেরে মেঠো সুরে তড়িৎ জবাব দিলেন – ” কেন? কেন আমি বিব্রত বোধ করবো বরং বলুন নতুন সিলভার কয়েনের চাকচিক্যে,নয়া দশ পয়সার ভিড়ে আমি নিজেকে সিকি অনুভব করছি….। ” এ শতবছরের পুরোণো কথকতা। কিন্তু আমাদের ঘটমান সর্বাঙ্গীণ ব্যবস্থাপনায় এক দশক হতে অবকাঠামোর শৈলীবৃত্তে শামুক গতিতে কিছুটা – উন্নতধারায় হাঁটছি বটে – কিন্তু মনোবৈকল্যে যে কর্দম হতে উত্থান, বিবেকবর্জিত হীনমন্যতার আদিম প্রবৃত্তি আমাদের রক্তধারার অণু পরমাণুতে নদীর স্রোতের মত বাহিত হয়ে – সর্বাঙ্গে লেপ্টে আছে; তা কি সহজে তাড়িত হবে? হবে কি কালো আর সাদার ভেদ বিভেদ – সভ্য ও ভব্যের নিরিখে আত্মসমীক্ষায় প্রাগ্রসরে মেলে ধরা – অনাদি অনন্তে? তা নতুন প্রজন্মকে বুঝতে এবং বুঝাতে হবে, সংখ্যা নির্ণয়ে একটি দেশের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নে মানুষকে মানুষ ভেবে গড়ে তুলতে হবে, কেউকে খাটো কিংবা বড় করে নয়,তবেই স্বর্ণালোক খচিত আলোক বিভায় এদেশ পূর্ণতা হয়তো পাবে।
সৈয়দ রফিকুল আলম : প্রবীণ কবি