বিডিমেট্রোনিউজ ॥ এবার এমপিদের তিন কোটি টাকা করে দেয়া হচ্ছে। এমপিদের জন্য বিশেষ থোক বরাদ্দ থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে চলতি জুলাই মাসেই এ অর্থ চলে গেছে। উদ্দেশ্য জরুরি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে মানুষের মন জয় করা। তাদের সমস্যার সমাধান করে ভোট আদায় করা।
সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিভিন্নভাবে দলীয় সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত যাওয়া, কর্মীসহ ভোটার সাধারণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা, তাদের ভাল-মন্দ খোঁজ খবর রাখা এবং একই সঙ্গে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট জরুরি উন্নয়নমূলক কাজসমূহ সম্পাদনের তাগিদ দেয়া হয়েছে। অবশ্য এই তাগিদ চলছে গত দুই বছর ধরেই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনেকবার দলীয় এমপি, নেতা-কর্মীদের মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, দুর্নীতিবাজ, দুর্নীতি, সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় না দেয়ার অনুরোধ করেছেন। দলীয়ভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে। মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজ তেমন কিছু হয়নি। তারপরও বিভিন্ন জেলা শহরে, উপজেলায় এমন অনেক কাজ হয়েছে যা গোটা সরকারের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। গত তিন বছরে নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন কাজ করার মাধ্যমে নিজেদের ও সরকারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির উদ্দেশে প্রত্যেক এমপিকে বিশেষ আর্থিক বরাদ্দও দেয়া হয়েছে। প্রথম বছর প্রত্যেক এমপিকে এক কোটি টাকা, পরের বছর দেড় কোটি এবং গতবছর দুই কোটি টাকা করে দেয়া হয়।
নির্বাচনী এলাকার রাস্তা, পুল কালভার্ট, হাটবাজার সংস্কার উন্নয়নে এ অর্থ দেয়া হয়। এর বাইরে জেলা পরিষদ থেকে মসজিদ, মন্দির, শশ্মান, খেলার মাঠ ভরাট, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজের সংস্কার, উন্নয়ন কাজের জন্য এ অর্থ বরাদ্দ করা হয়। জেলা পরিষদ থেকে এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যেক এমপি গড়ে বছরে এক কোটি টাকা নিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে এমপিদের জন্য বরাদ্দকৃত থোক বার্ষিক বরাদ্দের অর্থে উন্নয়ন কাজ করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের হলেও কাজ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুব লীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। জেলা ও উপজেলা দরপত্র জমা দেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও অন্য কোন দলের লোকজন, পেশাদার ঠিকাদাররা এসব কাজে অংশ নেয়ার সুযোগই পায়নি। স্থানীয় এমপির পছন্দের লোকদের দেয়া তালিকার ভিত্তিতে দলীয় লোকদের কাজ দেয়া হয়। তার ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। গ্রামীণ সড়কের উন্নয়ন কাজ মানসম্পন্নভাবে হয়নি। ছয় মাস যেতে না যেতেই পিচ উঠে যায়, ইট খোয়া যায়, রাস্তায় বড় বড় গর্ত হয়। যান চলাচল তো সম্ভবই হচ্ছে না, হেঁটে চলাও কষ্টকর হয়। এতে করে দু’বছরে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার কাজ দেখানো হলেও এমপিরা স্থানীয় মানুষের সমালোচনারই মুখে পড়েছেন। এবার সেই এমপিদের তিন কোটি টাকা করে দেয়া হচ্ছে।
এলজিইডির কাছে প্রকল্প তালিকা দিয়েছেন স্থানীয় এমপি। ঠিকাদারও ঠিক করবেন এমপি। এমপির পরামর্শের বাইরে এলজিইডির ইঞ্জিনিয়াররা কিছুই করতে পারেন না। এমপির নির্দেশ তারা প্রতিপালন করেন মাত্র। তাদেরকে নিয়মিত কাজ তদারক করতেও দেয়া হয় না। সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে তাদের চলে আসতে বাধ্য করার মতো ঘটনাও অনেক স্থানে ঘটেছে। নিম্নমানের কাজ হলেও তাদের করণীয় কিছু নেই। স্থানীয় এমপিরও তেমন কোন ভূমিকা ছিল না। তবে এবারে কিছু ব্যতিক্রম আশা করা হচ্ছে। নির্বাচন সামনে থাকায় দলীয় ঠিকাদারদের দিয়েও অপেক্ষাকৃত ভাল কাজ করানোর উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। তবে গত তিন বছরে উন্নয়ন কাজের নামে এমপিও তার সহযোগিদের যে ভাবমূর্তি জনমনে সৃষ্টি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠা সম্ভব নাও হতে পারে।