বিশ্ব বাঘ দিবসে বাগেরহাটে বর্ণাঢ্য কর্মসূচি

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ২৯ জুলাই।আজ বিশ্ব বাঘ দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘বাঘ আমাদের গর্ব, বাঘ রক্ষা করব’। বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও রাশিয়া বাঘের এই ১৩টি দেশে দিবসটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশে সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটে বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে বলে বনবিভাগ জানিয়েছে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আজ সকালে বাগেরহাট শহীদ মিনার চত্বর থেকে র‌্যালি, জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে আলোচনা সভা ও লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । বিশ্ব বাঘ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মোহাম্মদ সফিউল আলম চৌধুরির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা, মহিলা এমপি হ্যাপি বড়াল, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসতিয়াক আহমদ ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদ।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মোঃ আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রথম বিশ্ব বাঘ দিবসের জাতীয় অনুষ্ঠান বাগেরহাটে হচ্ছে। এ উপলক্ষে আমরা অনেক বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এ জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করা হয়েছে।’

উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, সুন্দরবনে বাঘের মৃত্যু আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ৩৭ বছরে (জুলাই ১৯৮০ থেকে ২০১৭) সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় শিকারিদের হানা, গ্রামবাসীর পিটুনি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৮৬টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। প্রজনন বৃদ্ধি ও সঠিকভাবে বাঘ সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

প্রাণী বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীরা সুন্দরবনের বাঘের মৃত্যুর জন্য ৯ টি কারণ চিহ্নিত করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ (ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস), লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়া, মিঠাপানির অভাব, খাদ্য সংকট, বন ধ্বংস, বাঘের আবাসস্থলের অভাব, চোরাশিকারির হানা ইত্যাদি।

২০০৪ সালে পরিচালিত সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনে ৪৪০টি বাঘ রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় ৮৯টি পুরুষ ও ১৭০টি স্ত্রী বাঘ এবং ১২টি বাচ্চা বাঘ রয়েছে। এ ছাড়া বাগেরহাটের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় ৩২টি পুরুষ ও ১২৮টি স্ত্রী বাঘ এবং ৯টি বাচ্চা বাঘের অবস্থান জরিপে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে ২০১৫ সালে ‘ক্যামেরা ট্র্যাপ’ পদ্ধতিতে গণনায় বাঘের সংখ্যা ১০৬ টিতে দাঁড়িয়েছে।

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ বছরে সুন্দরবনে ৫২টি বাঘ মারা গেছে। এর মধ্যে স্থানীয় লোকজন ২৪টি বাঘ পিটিয়ে এবং চোরা শিকারিরা ১৭টি বাঘ কৌশলে হত্যা করে। ১১টি বাঘের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। বন বিভাগের রেকর্ডের বাইরেও বাঘসহ বন্যপ্রাণি মারা পড়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। মারা যাওয়া বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কৌশলে ওই আন্তর্জাতিক চক্রের মাধ্যমে পাচার হয়ে যাচ্ছে। চীন, মিয়ানমার, ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশে বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বাজার রয়েছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের সহযোগিতায় দেশীয় পাচারকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। ওই চক্র কৌশলে সুন্দরবনে বাঘসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণি হত্যা করছে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts