শাহ মতিন টিপু []
আজ বাইশে শ্রাবণ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৭তম মহাপ্রয়াণ দিবস। সশরীরে না থাকলেও তিনি গানে, কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে, প্রবন্ধে, ছবিতে প্রবলভাবে রয়েছেন আমাদের মাঝে।
রবীন্দ্রনাথ প্রয়াত হওয়ার আগেই প্রয়াণ উপলব্ধি করেছেন নানাভাবে। আমরা তার কাব্যে মৃত্যুর প্রতিধ্বনি শুনেছি বারবার। প্রতিবারই মৃত্যুকে জয়ের এক আরাধনাপ্রতিম প্রয়াস ছিল তার। তিনি মৃত্যুকে বন্দনা করেছেন এভাবে- ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান। মেঘবরণ তুঝ, মেঘ জটাজুট! রক্ত কমলকর, রক্ত-অধরপুট, তাপ বিমোচন করুণ কোর তব মৃত্যু-অমৃত করে দান।’
তিনি মৃত্যুকে বড় গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন মাত্র একচল্লিশ বছর বয়সে প্রিয়তমা স্ত্রীর বিয়োগে। কবি যখন দূরে থাকতেন স্ত্রী মৃণালিণী দেবীকে ‘ভাই ছুটি’ সম্বোধন করে চিঠি লিখতেন। কবির সেই ‘ছুটি’ যখন সংসার জীবন থেকে সত্যিই একদিন ছুটি নিয়ে চলে গেলেন, তার বয়স তখন মাত্র ঊনত্রিশ। কিশোর বয়সে হারান বন্ধুপ্রতিম বৌদি কাদম্বরী দেবীকে। কবি জীবনস্মৃতিতে লেখেন : ‘জগৎকে সম্পূর্ণ করিয়া এবং সুন্দর করিয়া দেখিবার জন্য যে দূরত্ব পয়োজন, মৃত্যু দূরত্ব ঘটাইয়া দিয়াছিল। আমি নির্লিপ্ত হইয়া দাঁড়াইয়া মরণের বৃহৎ পটভূমিকার উপর সংসারের ছবিটি দেখিলাম এবং জানিলাম, তাহা বডডো মনোহর।’ এভাবেই তিনি সাহসের সঙ্গে মৃত্যুশোককে জয় করেছেন।
বাইশে শ্রাবণ বিশ্বব্যাপী রবীন্দ্রনাথ ভক্তদের কাছে একটি বেদনাময় দিন। জীবনের শেষ নববর্ষে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তার সাধের শান্তিনিকেতনে। সেদিন তার কলমে রচিত হয়েছিল ‘সভ্যতার সংকট’ লেখাটি। তারও ক’দিন পর রোগশয্যায় শুয়েই লিখলেন ‘আমারই জন্মদিন মাঝে আমি হারা’। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের শেষ দিনগুলোতে কখনও তিনি শয্যাশায়ী, কখনও মন্দের ভালো। মৃত্যুর মাত্র সাত দিন আগে পর্যন্তও কবি সৃষ্টিশীল ছিলেন। ২২ শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন মৃত্যু পথযাত্রী জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ঘড়িতে বেলা ১২টা বেজে ১০ মিনিট। কবি চলে গেলেন অমৃত আলোকের নতুন দেশে।