লাইলি-মজনুর লাইলি দেখতে কেমন ছিলেন ?

শাহ মতিন টিপু : দেখতে কেমন ছিলেন লাইলি-মজনুর লাইলি ? জানা যায়, পারস্য সাহিত্যের মহাকবি আমির আলী শির নাওয়ায়ীর বর্ণনায় লাইলির রূপের কথা শুনে রাজা আগ্রহী হন তাকে দেখতে।

দেখার পর রাজা মন্তব্য করেন- এই তার সৌন্দর্য, আমার হেরেমের সবচেয়ে খারাপ বাদীও তো এর চেয়ে সুন্দর। মহাকবি এ ক্ষেত্রে বলেন, যে যাই বলুক লাইলিকে দেখতে হবে মজনুর প্রেমকাতর চোখ দিয়ে, তবেই না তার সৌন্দর্য বুঝা যাবে।

মহাকবি আমির আলী শির নাওয়ায়ী-ই মূলত ‘লাইলী-মজনু’ প্রেম মহাকাব্যের রচয়িতা।১৪৪১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর একটি অভিজাত সামরিক পরিবারে তার জন্ম। ১৫০১ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ইরান বাংলা রেডিওর কথিকায় এই লেখকের জন্মদিন ১৮ সেপ্টেম্বর বলা হলেও এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা ও উইকিপিডিয়া মুক্ত বিশ্বকোষে ৯ ফেব্রুয়ারি। আমির আলী শির নাওয়ায়ী নামটিও ইরান বাংলা রেডিও থেকে নেওয়া। অন্যত্র দেখা যায়, কোথাও তার নামটি ‘মির আলী শির নাভাই’, কোথাও বা শুধু ‘আলী শির নাভাই’। ইংরেজিতে Ali Shir Nava’i.

আরেকটি রচনায় দেখা যায়, পারস্য সাহিত্যের এই মহাকবির প্রকৃত নাম ছিল নিজাম আদ দীন আবু মুহম্মদ ইলিয়াস ইবনে ইউসুফ ইবনে জাকী। আর ছদ্মনাম ছিল নিজামী গঞ্জোভী। তিনি নিজে এ নামে পরিচিত হতেন।

তার জন্ম আজারবাইজানের গাঞ্জেচাই নদীর তীরে ঐতিহাসিক গাঞ্জে নগরীতে। মৃত্যুও একই নগরীতে। জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন দক্ষিণ ককেসাসে। তার মা ছিলেন কুর্দী, নাম রাইসা। আর বাবার নাম ছিলো ইউসুফ,  দাদার নাম ছিল জাকী। তার পূর্বপুরুষ ইরানের কোম নগরীর।

পারসিক মহাকাব্যে তার কবির লড়াই বা কথোপকথনের কবিতার লড়াই আজারবাইজান, ইরান, আফগানিস্তান থেকে তাজিকিস্তান পর্যন্ত বিদগ্ধ লোকদের মুখে মুখে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

তিনি ছিলেন চাগাতাই সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি ও পন্ডিত। চাগাতাই হচ্ছে একটি বিলুপ্ত তুর্কীয় ভাষা যা একসময় মধ্য এশিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। ভাষাটি বিংশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্তও অঞ্চলটির একটি অন্যতম সাহিত্যিক ভাষা ছিল। এছাড়া ভারতবর্ষের মুঘল সম্রাটেরাও এই ভাষাতে কথা বলতেন।

তিনি ফার্সি ও আরবীতেও সমান দক্ষ ছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, লেখক, রাজনীতিবিদ, ভাষাতত্ত্ববিদ, এবং চিত্রকর। অত্যন্ত বড়মাপের এই মহাকবির সম্মানে সোভিয়েত স্মারক ডাকটিকিট ছেড়েছিল।

বড় অস্থির এক যুগে ছিল তার আগমন। তখন রক্তান্ধ রাজারা দেশের পর দেশ ধ্বংস করছিলো। কিন্তু এই মহাকবিকে তা স্পর্শ করতে পারেনি।

গালিচার বদলে ছেড়া কাথায় বসে থেকেছেন, রত্নরাজির বদলে তার ছিলো অগুনতি বই। এরপর কত রাজার গালিচা পোকায় কেটেছে, রাজপ্রাসাদ ভেঙ্গে পড়েছে কিন্তু তার কাব্য ছিলো অমর ও অজেয়। তিনি ছিলেন মানবতার কবি, প্রেমের কবি। তার অমর লেখা নির্দিষ্ট ভাষার গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। শিরি-ফরহাদ, লাইলি-মজনুকে আজ কে না জানে! বিশ্বজুড়েই প্রেমের প্রতীকী হিসাবে আজ উঠে আসছে এসব উপমা।

এছাড়া এস্কান্দর নামা, হাফত পায়কর বা বাহরামনামা বা সপ্ত সৌন্দর্যও তার অনন্য কীর্তি। তবে তার সবচেয়ে বিখ্যাত গীতিকাব্য হলো পাঞ্জ গাঞ্জ বা পঞ্চ রত্ন।

 

 

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts