শুধু পড়াশোনা বা কেরিয়ার গড়াই নয়, ছোটবেলা থেকে আমার ইচ্ছে ছিল এমন কিছু কাজও করব, যাতে সমাজেরও উপকার হয়৷ এর জন্য স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বন্যাত্রাণ, ভূমিকম্পে দুর্গতদের জন্য আমি বেরিয়ে পড়তাম বন্ধুদের জড়ো করে৷ বাবা-মা এসবে কোনও দিনও আপত্তি করেননি৷ শুধু বাবা মাঝে মাঝে বলতেন, উপকার করার অছিলায় অনেকে নিজের ধান্দাও চরিতার্থ করতে আসে৷ ওদের থেকে সাবধান থাকিস! সাবধানেই থাকতাম, চোখ-কান খোলা রেখেই চলতাম৷ কিন্তু আমার নিজের অজান্তেই আমি একবার ভুল করে ফেললাম৷ বলব সেই কথাটাই৷
আমি তখন এম এ পড়ছি কলকাতায়৷ ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াই আগের মতোই৷ সেই সুবাদেই পরিচয় হল এক মহিলার সঙ্গে, একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে৷ তিনি দুঃস্হ যৌনকর্মীদের সমাজের মূল স্রোতে আনা ও তাদের আয়ের পথ সুগম করার জন্য অনেকদিন কাজ করছেন৷ বললাম, আমিও আপনার কাজে সামিল হব৷ মহিলা সাদরে আমাকে নিয়ে নিলেন তার দলে৷
কলকাতায় তারপর স্বাস্হ্য শিবির, পুজোয় ওদের কাপড়-চোপড় দেওয়া, ওদের ছেলেমেয়েদের পড়ানোর মতো অনেক কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশ নিয়েছি৷ ওই মহিলার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বর্ধমান, আসানসোল, শিলিগুড়িতেও কয়েকবার গিয়েছি ওদের কল্যাণমূলক প্রকল্পে৷ দেখেছি, পুলিসের বা সরকারের উঁচু মহলে মহিলার বেশ ভালই পরিচিতি আছে৷ তবে পারতপক্ষে ওইসব হর্তাকর্তাদের কাছে আমাকে মোটেও নিয়ে যেতেন না৷ নিয়ে গেলেও চেম্বারের বাইরে বসিয়ে উনি ভেতরে গিয়ে কথা বলতেন৷
একদিন আমাদের একটা কর্মসূচি চলছিল কলকাতাতে৷ ওই মহিলা তার ফোন দুটো টেবিলে রেখেই ভেতরে গিয়েছিলেন৷ তার মধ্যে একটা নম্বর থেকে বার বার কল আসছে৷ অথচ মহিলাকে ডাকতেও পারছি না৷ ফোনটা তাই রিসিভ করতেই ওপারে এক অবাঙালি লোকের গলা পেলাম৷ বলল, আজ রাতেই চারটে মেয়ে লাগবে৷ আগের মতো সতেরো-আঠারো বছরের মেয়ে৷ সদর স্ট্রিটের একটা হোটেলে যেন ওদের পৌঁছে দেওয়া হয়৷ ফোনটা কেটে গেল৷ আমি নির্বাক হয়ে গেলাম৷ মহিলা সমাজসেবার আড়ালে তাহলে মেয়েদের নিয়ে ব্যবসা করে?
বাবার কথা মনে পড়ল, উপকারের অছিলায় নিজের ধান্দা! সব ছেড়ে দিলাম৷
অতসী সাহারায়