রওশনকে চিঠিতে যা লিখলেন ‍এরশাদ

জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান এবং এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব করার সমালোচনা করে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রওশনের বিবৃতির এক দিনের মধ্যেই এই চিঠি দিলেন এরশাদ।

স্ত্রী রওশনকে ‘প্রিয় সহকর্মী’ সম্বোধন করে লেখা এরশাদের চিঠিটি রোববার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের মুখপাত্র সুনীল শুভরায়ের পাঠানো একটি বিবৃতিতে সংযুক্ত করে সংবাদ মাধ্যমে আসে।

এতে স্ত্রীর অনুরোধ রাখতে না পারার জন্য ‘দুঃখ’ প্রকাশ করে এরশাদ রওশনকে নিয়েই জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন।

“আপনি সংসদীয় দলের নেতৃত্বে আছেন, আমি পার্টির নেতৃত্বে আছি। আমাদের উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতীয় পার্টি আগামী দিনে এগিয়ে ‍যাবে ইনশাল্লাহ।”

এরশাদ গত ১৭ জানুয়ারি নিজের জেলা রংপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জি এম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান এবং উত্তরসূরি ঘোষণার পর থেকে জাতীয় পার্টিতে ঝড় চলছে।

এরশাদের ঘোষণার পাল্টায় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশনের গুলশানের বাড়িতে এক বৈঠকের পর দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু সাংবাদিকদের বলেন, রওশনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

‘ওই সিদ্ধান্ত অবৈধ’- তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় একথা বলার পরদিনই রংপুর থেকে ঢাকা ফিরে বনানীতে নিজের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বাবলুকে মহাসচিব পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে বারিধারার নিজের বাড়িতে ওঠেন এরশাদ।

এরপর দুজনে দলের পার্লামেন্টারি কমিটির বৈঠকে একসঙ্গে অংশ নিলেও নিজের সিদ্ধান্তে এরশাদ অটল থাকার ঘোষণা দেওয়ার পর রওশন এক বিবৃতিতে বলেন, তাকে না জানিয়ে অগণতান্ত্রিকভাবে দলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দুটি নিয়েছেন চেয়ারম্যান।

তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রোববার রওশনকে চিঠি পাঠান এরশাদ। সিদ্ধান্ত বারবার পরিবর্তনের জন্য আলোচিত সাবেক এই সামরিক শাসক তাকে বলেন, তার এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই।

স্ত্রীর বিবৃতি গণমাধ্যমে দেখার কথা জানিয়ে এরশাদ লিখেছেন, “আপনি দুটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছেন।

“প্রথমত পার্টিতে সম্প্রতি জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব প্রদান ও মহাসচিবের পদটি রদবদলের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, বিগত মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু যে আপনাকে ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন, তা নাকচ করেছেন।”

“দ্বিতীয় বিষয়ে বিভ্রান্তি দূর করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। প্রথম বিষয়টি আপনাকে স্পষ্ট করতে চাই। জিএম কাদেরকে পার্টির কো চেয়ারম্যান করার ব্যাপারে আপনারও সম্মতি ছিল।”

বিরোধীদলীয় নেতা রওশনের বাড়িতে বৈঠকে মূলত জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সদস্যরাই ছিলেন উল্লেখ করে এরশাদ বলেছেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়ে পার্লামেন্টারি কমিটির মতামত নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

“আপনি আমাদের সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে অবগত আছেন যে সংসদীয় কমিটি দলের নীতি-নির্ধারণী কোনো শাখা নয়। একমাত্র দলের প্রেসিডিয়ামেরই পার্টির নীতি নির্ধারণের বা কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার রয়েছে।”

‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে শুরু করা এই চিঠিতে দলের একজন ‘শীর্ষনেতা’ হিসেবে রওশন দলীয় চেয়ারম্যানের কাছে কোনো আবেদন, নিবেদন বা বিবেচনার আহ্বান জানাতে পারেন স্বীকার করে নিয়েই তা রাখতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এরশাদ।

“আপনার প্রস্তাবটি বিবেচনা করতে পারলাম না বলে দুঃখিত। আশা করি, আপনিও পার্টির সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করবেন।”

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts