বিডি মেট্রোনিউজ ॥ জাতীয় পার্টির এরশাদপন্থি অংশের সভাপতিমন্ডলীর সদস্যরা বৈঠক করে মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়ে একমত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পার্টির কো- চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, “মিটিংয়ে যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা সবাই মতামত দিয়েছেন, রাজনীতির স্বার্থে বেরিয়ে আসাটা অত্যন্ত জরুরি। মাননীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তীতে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।”
পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদসহ তার সমর্থক ২৪ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য বনানীর কার্যালয়ে এই বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ বাকি ১৩ সদস্য সভায় আসেননি।
রোববার বেলা ১১টা ৪০ থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা এই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে আসেন এরশাদের ভাই জি এম কাদের, যাকে কো চেয়ারম্যান নিয়োগ করায় সম্প্রতি দলে নতুন করে বিদ্রোহের মুখে পড়েন সাবেক সামরিক শাসক এরশাদ।
এরশাদের স্ত্রী রওশন ছাড়াও পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ সম্প্রতি মহাসচিবের পদ থেকে ছিটকে পড়া জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ, তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও কাজী ফিরোজ রশিদের মতো জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্যরা এ বৈঠকে ছিলেন না।
এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় পার্টির সভাপতিমন্ডলি শেষবার বৈঠকে বসে, যতে রওশনও উপস্থিত ছিলেন।
ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নাটকীয়তার এক পর্যায়ে এরশাদ বিএনপির মতোই ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলে দলের একাংশ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। তাদের মধ্যে জি এম কাদেরও ছিলেন। বর্জন করেও এরশাদ আইনের মারপ্যাঁচে ভোটে জিতে যান। জাতীয় পার্টি সংসদের বিরোধী দল হয়, এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ হন বিরোধী দলীয় নেতা।
এরপর বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টির সদস্যদের মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টি আলোচনায় এলেও জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের আপত্তির কারণে তা ধোপে টেকেনি- এমন খবর এসেছে গণমাধ্যমে।
রওশনপন্থিদের বিরোধিতার মধ্যেই সম্প্রতি এরশাদ নিজের ভাই জি এম কাদেরকে পার্টির কো চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন, মহাসচিব পদে ফিরিয়ে আনেন দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন রুহুল আমিন হাওলাদারকে। এ নিয়ে দলে বিদ্রোহের মধ্যেও এরশাদ বলেন, তিনি তার সিদ্ধান্তে মৃত্যু পর্যন্ত অটল থাকবেন।
গত ২৬ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক মন্ত্রী জি এম কাদের বলেন, “জাতীয় পার্টির অবস্থান জনগণের কাছে অস্পষ্ট। কারণ জাতীয় পার্টি একদিকে বিরোধী দল, আবার অন্যদিকে সরকারের মন্ত্রিসভায় আছে।” অন্যদিকে দশম সংসদের দুই বছর পূর্তির আগের দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে রওশন সাফ জানিয়ে দেন, তারা সরকারেই থাকছেন।
এদিকে গত শুক্রবার দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম ও সাংসদ মেহজাবীন মোরশেদ দম্পতির ছেলের বিয়েতে যোগ দিতে চট্টগ্রামে এসেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও তার স্ত্রী রওশন এরশাদ।
শুক্রবার সকাল ও বিকালে পৃথক বিমানে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তারা। আলাদা ফাইটে এলেও দলীয় প্রধান এরশাদ ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন দুজনকেই বিমানবন্দরে স্বাগত জানান জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, যাকে সম্প্রতি দলের মহাসচিব পদ থেকে সরিয়েছেন এরশাদ। বাবলু চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি আসনের সাংসদ। দলে রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিতি রয়েছে তার।
এরশাদ ও রওশনকে বিমানবন্দর থেকে নগরীর পাঁচতারকা র্যাডিসন ব্লু হোটেলে নিয়ে আসেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম এবং নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াকুব। রাতে এই হোটেলেই মুরাদ ও মেহজাবীন দম্পতির ছেলে সামির সিকান্দরের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়।
একই হোটেলে উঠলেও এরশাদ-রওশন পাশাপাশি কক্ষে অবস্থান করেন বলে দলের নেতা মোহাম্মদ ইয়াকুব জানান। জাতীয় পার্টির সভাপতিম-লীর সদস্য পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় হুইপ তাজুল ইসলাম ও জিয়াউদ্দিন বাবলুও অনুষ্ঠানে যোগ দেন।