রাসূল স. যেভাবে ঈদ করতেন

এস এম সাখাওয়াত হুসাইন

 

হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেছেন, ঈদের নামাযের জন্য পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং বের হওয়ার আগে কিছু খাওয়া সুন্নত; এটা রাসূল (সাঃ) এর নিয়ম। (তিরমিযী)

ঈদের দিনে ঈদের মাঠে নামাযের জন্য পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং পায়ে হেঁটেই ফিরে আসা কর্তব্য। কেননা এ দিনটি সর্বসাধারণ মানুষের মহামিলনের দিন। এ দিন পায়ে হেঁটে ঈদের মাঠে যাতায়াত করলেই সাধারণ মানুষের এ মহা মিলনের উৎসবে পূর্ণ মাত্রায় অংশ গ্রহণ বাস্তবায়িত হতে পারে।

এদিন যারা উটের পিঠ কিংবা আধুনিক যানবাহনে চড়ে ঈদের মাঠে যায় তারা সাধারণত জনমানুষ হতে বিচ্ছিন্নই থেকে যায়। জনগণের কাতারে দাঁড়ানো তাদের ভাগ্যে কখনই সম্ভব হয় না। আর এটা কখনই বিশ্বনবীর আদর্শ হতে পারে না। বরং সত্যকথা এই যে, ঈদের এ সর্বজনীন উৎসব ও মহামিলনের ব্যবস্থাই তাদের নিকট অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়, যারা এ দিনটিতেও বড়লোকী যানবাহন পরিহার করে সাধারণ মানুষের কাতারে এসে দঁড়াতে পারে না। পারে না সমস্ত মানুষের সাথে একাকার হয়ে মিলে মিশে যেতে। এতে ঈদের এ মহান ব্যবস্থার উদ্দেশ্যেই বিনষ্ট হয়ে যেতে বাধ্য। তাই রাসূল (সাঃ) এ দিনে পায়ে হেঁটে চলাচল করার সুন্নতের প্রচলন করেছেন। হযরত ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে তাই বলা হয়েছে ঃ রাসূল (সাঃ) ঈদের নামাযের মাঠে পায়ে হেঁটে যেতেন এবং পাায়ে হেঁটেই ফিরে আসতেন। (ইবনে মাযাহ)

কেবল তিনি নিজে পায়ে হেঁটেই ক্ষান্ত হন নাই। নির্বিশেষে সর্বসাধারণ মুসলমানও যাতে এই আদর্শ বাস্তবভাবে অনুসরণ করে চলে সেজন্য তিনি বলেছেন ঃ ঈদের দিনে তোমরা যখন নামাযের জন্য যাবে তখন অবশ্যই পায়ে হেঁটে চলে যাবে”।

ঈদুল ফিতরের দিনে সকাল বেলা নামাযের জন্য বের হওয়ার আগে কিছু খাওয়াও রাসূল (সাঃ) এর প্রতিষ্ঠিত ও অনুসৃত নীতি। হযরত আনাস (রাঃ) বলেছেন ঃ রাসূল (সাঃ) ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটি খেজুর না খেয়ে সকাল বেলা নামাযের জন্য রওয়ানা হতেন না। (বুখারী, ইবনে মাযাহ্)

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেছেন: রাসূল (সাঃ) ঈদুর ফিতরের দিন ঈদের মাঠের দিক যাত্রা করার আগে খাবার খেতেন। (ইবনে আবু শাইব, বাজ্জার)

ঈদুল ফিতরের সকাল বেলা কিছু খাওয়ার রীতির তাৎপর্য সুস্পষ্ট। দীর্ঘ একমাস কাল রোজা পালন করা হয়েছে। এই মাসের মধ্যে সকাল বেলা ও সারাটা দিন কিছুই পানাহার করা হয় নাই। আজকের এই ঈদের দিনের সকাল বেলাও যে দিনে রোযা রাখা হচ্ছে না; রোযা রাখা হারাম। কিছুই না খেলে এ দিনও রোযার মতই মনে হবে। অথচ মন ও মানসিকতা বা মনস্তত্বের দিক দিয়েও এটা বাঞ্চনীয় নয়।

ঈদের নামাযের জন্য মাঠে যাতায়াত প্রসঙ্গে রাসূল (সাঃ) এর আর একটি নিয়ম ছিল যাতায়াতের পথ পরিবর্তন। হযরত যাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে: তিনি বলেছেন, রাসূল (সাঃ) ঈদের দিনে ঈদের মাঠে যাতায়াতের পথ পরিবর্তন করতেন। (বুখারী)

ঈদের দিনে রাসূল (সাঃ) ঈদের মাঠে যাওয়া আসার পথ পরিবর্তন করতেন অর্থাৎ যে পথে ঈদের মাঠে যেতেন সে পথে ফিরে আসতেন না। ফিরে আসতেন অন্য এক পথ দিয়ে। এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, সন্দেহ নেই। এর দরুণ উভয় পথই এবং তাতে চলাচলকারী জনগণ সহজেই রাসূলে করীমের সাক্ষাৎ লাভ করতে পারতো। তাঁর গমনাগমনের ফলে উভয় পথ ও উভয় পথের জনগণ সমান মর্যাদা, সমান অধিকার ও সমান সুযোগ সুবিধা লাভ করত। যাতায়াতকালে তাঁরই সঙ্গী সাথী অসংখ্য মানুষের দলবদ্ধতা চতুর্দিকে ইসলামের বিজয় ডংকা বাজত ও সমস্ত মানুষ ইসলামের প্রতাপ ও প্রানচাঞ্চল্য স্বচোখে দেখতে পেত।

এই যাতায়াতের পথে মুসলমানরা উচ্চস্বরে তাকবীর করতেন। এক পথে যাওয়া ও অন্য পথে আসার ফলে উভয় পথের আকাশ বাতাস তাকবীর ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠত। বস্তুত এসব কারণে ও উদ্দেশ্যে রাসূল (সাঃ) ঈদের দিনে এক পথ ধরে ঈদের মাঠে যেতেন এবং অন্য পথ ধরে ফিরে আসতেন। মুসলমানদের এটাই আদর্শ। ঈদের দিনে উচ্চস্বরে তাকবীর বলা রাসূল (সাঃ) এর আমল হতে প্রমাণিত। এই প্রসঙ্গে তাঁর নির্দেশ ও উদ্ধৃত হয়েছে।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সাঃ) ঈদুল ফিতরের দিনে ঘর হতে বের হয়ে যাওয়ার সময় হতে নামাযের স্থানে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবীর বলতে থাকতেন। (ইবনে আবু শায়বা)।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts